রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
নুরুজ্জামান, বাঘা: দেশের অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকা গুলোর মধ্যে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলকে গুরুত্ব দেয়া হয়। এ অঞ্চলের পেঁয়াজ স্থানীয় চাহিদা পুরণ করে দেশের অভ্যন্তরে আমদানি করা হয়।
এখানে তিনমাস পূর্বে যখন জমি থেকে নতুন পেঁয়াজ ওঠা শুরু হয়, তখন পেঁয়াজের দাম ছিল মাত্র ৪০ টাকা কেজি। এর ২০-২৫ দিন পর থেকে দফায়-দফায় পেঁয়াজের মূল্য বাড়তে শুরু করে এবং বাজার মুল্য এসে দাড়ায় ৮০ টাকায়। এর প্রধান কারণ মজুত। টার্গেট কোরবানীর ঈদ।
তবে শেষ পর্যন্ত মজুতকারীদের স্বপ্ন ভেস্তে গেলো। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণার একদিনের ব্যবধানে কেজিতে দাম কমলো ২৫ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর সোনামসজিদ স্থলবন্দরে এসেছে ভারতীয় পেঁয়াজ। সরকার ঘোষিত আমদানির অনুমতি মেলার পরদিন সোমবার এ বন্দর দিয়ে ১ হাজার ৬২ মেট্রিকটন পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
একই ভাবে খুলনা সহ দেশের অন্যান্য সীমান্ত দিয়েও পেঁয়াজ আমদানি হওয়ার কথা। সরকারের এই সিদ্ধান্তে মাথায় হাত পড়েছে পেঁয়াজ মজুতকারীদের। ইতোমধ্যে অনেক মজুতকারী তাদের ঘরে রাখা পেঁয়াজ ভ্যান যোগে বাজারে আড়াৎদার (পাইকারি) ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রীর জন্য নিয়ে আসছেন। মঙ্গলবার উপজেলা সদরে অবস্থিত বাঘা বাজারে প্রবেশ করলে এমন চিত্র চোখে পড়ে।
তথ্য মতে, গত মাসের ২৬ তারিখ শৈলকূপায় একজন চাষির ঘর থেকে ৪০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ বের করেছে প্রশাসন। এরপর টনক নড়ে সরকারের বানিজ্য মন্ত্রনালয় সহ আইন প্রয়োগকারি সংস্থা গুলোর।
অনেকেই বলছেন, প্রশাসন চাইলে মজুতকারীদের বাড়ি এবং গুদামে অভিযান চালাতে পারতো। কিন্তু সেটি না করে, প্রতিবেশী দেশ ভারত খেকে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত নেয়ার একদিন পরে ৮০ টাকার পেঁয়াজ ৫৫ টাকা দরে চলে আসে। ফলে মাথায় হাত পড়ে মজুতকারীদের।
বাঘার চরাঞ্চলের চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর অনেক চাষি বেশি মুনাফা লাভের আসায় উৎপাদিত পেঁয়াজের কিছু অংশ বিক্রি করেছে। আর কিছু অংশ ঘরে মজুদ রেখেছে। তারা নিজেদের অর্থের প্রয়োজনে খুব অল্প-অল্প করে বাজারে পেঁয়াজ ছাড় ছিলো। তাদের টার্গেট ছিলো, কোরবানীর ঈদ। কিন্তু তার আগেই সরকার পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এখন তারা আর্থিক ভাবে লাভবান না হলেও ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন মজুতকৃত ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে বাঘার সুশীল সমাজের লোকজন বলেন, সরকার কৃষি খাণে ব্যপক ভুর্তুকি দেয়া সহ নানা বিধ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ এখন কৃষিতে স্বয়ং সম্পন্ন। বর্তমানে যে ভাবে ফসল উৎপাদন হচ্ছে তা থেকে কোন কিছুরই দাম বাড়ার কথা নয়।
তারপরও কতিপয় কৃষক এবং ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বিভিন্ন প্রকার পণ্য মজুত করে বাজারে ক্রাইসিস (সংকট) সৃষ্টি করছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারির মাধ্যমে মজুত ব্যবসা বন্ধ করতে পারলে সকল নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মুল্যের বাজার স্থিতিশীল হবে বলে তারা অভিমত ব্যক্ত করেন। একই কথা বলেন, বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান।