সর্বশেষ সংবাদ :

ধানের মুনাফা ব্যবসায়ীর পকেটে, ঠকছেন কৃষক

অহিদুল হক, বড়াইগ্রাম: চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের বড়াইগ্রামে এবার ভরা মৌসুমে বোরো ধান নিয়ে বিপদে পড়েছেন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীরা। নতুন বোরো ধানের কাক্সিক্ষত দাম না পাচ্ছেন না তারা। বাজার দর চলে গেছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে। ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে ধীরগতিতে কম দামে ধান কিনছেন। সেই সঙ্গে অন্য এলাকার ব্যাপারীদেরও বাজারে ধান কিনতে দিচ্ছেন না তারা। এতে চাষীদের লোকসান হলেও মুনাফা গুনছেন মিল-চাতাল মালিক, ফড়িয়া ও মহাজনরা।
উপজেলার লক্ষ্মীকোল ও জোনাইল হাট ঘুরে দেখা গেছে, চাষীরা বিক্রির জন্য সারি সারি ধানের বস্তা নিয়ে রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়ে আছেন। বেচাকেনা চলছে ধীরগতিতে, ব্যাপারীদের আনাগোনাও কম। বেলা শেষে অনেক চাষীকেই ধান বিক্রি করতে না পেরে ফিরে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
ধান বেচতে হাটে আসা কচুগাড়ি গ্রামের আসাদুল ইসলাম জানান, দুটি ভ্যানে করে সরু জাতের ধান বেচতে এসেছিলাম। কিন্তু দাম কম, বাধ্য হয়েই ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
খাকসা গ্রামের আমির হামজা বলেন, হাটে বাইরের কোন ব্যাপারী আসতে দেয়া হয় না। এখানকার ব্যাপারীদের আড়তে ধান পৌঁছে দিতে হয়, এরপর তারা যেমন ইচ্ছা তেমন দাম দেন। নাটোর সদরের হালসা থেকে ধান কিনতে আসা ব্যাপারী আমিরুল ইসলাম জানান, হাটে ধান কিনতে এসে স্থানীয় ব্যাপারীদের বাধার কারণে ধান কিনতে পারিনি। বাধ্য হয়ে ফিরে যাচ্ছি।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৬ হাজার ১৪ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে প্রতি মণ কাটারী জাতের ধান ১৩০০-১৪০০ টাকা, জিরাশাইল ১২৫০-১৩০০ টাকা, ব্রী-২৯ ধান ১২০০-১২৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ গতকাল সেই কাটারী জাতের ধান ১১৮০-১২০০ টাকা, জিরাশাইল ১১০০-১১৫০ টাকা, ব্রী-২৯ ধান ১০৫০-১১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
বাজিতপুর গ্রামের কৃষক হাসানুল বান্না উজ্জল বলেন, প্রতি বিঘা জমি চাষ, সার ও কীটনাশক, সেচ, চারা ক্রয় এবং রোপণ, নিড়ানী, ধান কাটা ও মাড়াইয়ের শ্রমিকের মজুরী মিলে কমপক্ষে ১৮-১৯ হাজার টাকা খরচ পড়েছে। বর্গা বা লিজ চাষীদের খরচ বিঘা প্রতি আরো ৮-১০ হাজার টাকা বেশি পড়েছে। বর্তমান দামে ধান বেচে তেমন লাভ থাকছে না। তাছাড়া লিজ বা বর্গা চাষীদের বিঘায় ৫-৭ হাজার টাকা লোকসান যাচ্ছে।
জালশুকা গ্রামের কৃষক খোরশেদ আলম পূর্নি জানান, সার ও বিদ্যুতের দাম বাড়ায় এবার কৃষকের উৎপাদণ খরচ বেড়েছে। কিন্তু ধানের দাম কমেছে। এতে চাষীদের উৎপাদন খরচ তোলাই কঠিন হয়ে পড়েছে। মামুদপুর গ্রামের আবু রায়হান বলেন, শুরুতে যারা ধান বিক্রি করেছে তারা কিছুটা লাভ পেয়েছে। কিন্তু এখন দাম কমে উল্টো লোকসান হচ্ছে। এমন হলে কৃষি কাজ করবো কিভাবে?
তবে উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, বড় ব্যবসায়ীদের গুদামে গত আমন মৌসুমের ধান এখনও মজুদ আছে। তাই তারা এখনও সেভাবে ধান কিনতে শুরু করেননি।
এ কারণেই ধানের বাজার হয়তো কিছুটা কম। লক্ষ্মীকোল বাজারের ব্যাপারী শরীফুল ইসলাম বলেন, চাহিদা কম থাকায় বড় মহাজনরা ধান কিনছেন না। চাহিদা না থাকায় বাজারে ধানের দাম মণপ্রতি এক-দেড়শ করে কমে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, মৌসুমের শুরুতে ধানের দাম একটু কমবেশি হয়। তাছাড়া বাজারে ধানের আমদানী বেশি হওয়ার কারণেও দাম কমে যেতে পারে। তবে সিন্ডিকেটের কারণে দাম কমে গেছে কিনা সে ব্যাপারে বাজার মনিটরিং করা হবে।


প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২৩ | সময়: ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ