নাটোরে ভারতীয় কোম্পানীর ডিপো ডাকাতি

নাটোর প্রতিনিধি:
নাটোরে রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৪০ কেভি লাইন নিমার্ণকারী প্রতিষ্ঠান ভারতীয় ট্যান্সলাইট লিমিটেড এর ডিপোতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সংঘবদ্ধ ডাকাতদল ট্যান্সলাইট কোম্পানীর ক্যাম্পের তিন নিরাপত্তাকর্মীকে বেঁধে রেখে রাত সাড়ে আটটা থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত ট্রাক ভর্তি করে চার কোটি তিন লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির প্রকল্প বস্থাপক ভারতের মহারাষ্ট্রের নাগপুর জেলার পাবর্তিনগর এলাকার সুফল ঘোষ (৫৪) বাদী হয়ে বুধবার রাতে নাটোর থানায় ডাকাতি মামলা দায়ের করেছেন।

মামলা, পুলিশ ও একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, নাটোর-ঢাকা মহাসড়কের নাটোর সদরের হয়বতপুরের পাশের দিয়ার সাতুরিয়া এলাকায় রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের লাইন নিমার্ণকারী প্রতিষ্ঠান ভারতীয় ট্যান্সলাইট কোম্পানীর একটি ডিপো রয়েছে। সেখানে রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বগুড়া পর্যন্ত ৪০০কেভি বিদ্যুৎ লাইন নিমার্ণের জন্য ভারতীয় ট্যান্সলাইট কোম্পানীর বৈদ্যুতিক তারসহ অন্যান্য মূল্যবান মালামাল রাখা ছিল।

 

 

 

 

মামলায় বাদী সুফল ঘোষ বলেন, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানী অব বাংলাদেশ এর অধিনে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটি রূপপুর হতে বগুড়া পর্যন্ত ৪০০ কেভি সিঙ্গেল সার্কিট ট্রান্সমিশন লাইনের কাজ করছে। নাটোর সদরের দিয়ার সাতুরিয়া গ্রামে ট্যান্সলাইট লি. এর একটি ডিপো আছে। এই ডিপো ইনচার্জ হিসেবে ভারতীয় নাগরিক সুজিত চক্রবর্তী দায়িত্বে রয়েছেন। বুধবার সকাল ছয়টার দিকে ডিপো ইনচার্জ সুজিত চক্রবর্তী প্রকল্প ব্যবস্থাপক সুফল ঘোষকে ফোন করে জানান, ডিপোতে ডাকাতি হয়েছে। খবর পেয়ে তিনিসহ অন্যরা রুপপুর থেকে নাটোরে এসে দেখেন ডিপোতে প্রবেশের লোহার মেইন গেটের তালা ভাঙ্গা পড়ে আছে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করা। মাটিতে ট্রাক যাতায়াতের চাকার দাগ লেগে আছে। এ সময় তারা দেখতে পান ডিপোতে রাখা বৈদ্যুতিক লাইন সংযোগ করার কাজে ব্যবহৃত আনুমানিক চার কোটি ছেষট্টি লক্ষ উনষাট হাজার চারশত সাতচল্লিশ টাকা দামের বিভিন্ন ভারী সরঞ্জাম খোয়া গেছে। পরবর্তীতে ডিপোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত মোল্লা সিকিউরিটি এজেন্সি লিমিটেডের সদস্য একই এলাকার বাসিন্দা মোঃ কাওসার হোসেন (২৩), মোঃ রবিউল ইসলাম হৃদয় (২১), শ্রী বিকাশ চন্দ্র পাহান (২১) কে তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারেন মঙ্গলবার রাত্রী অনুমান সাড়ে আটটার দিকে প্রথমে ১০-১১ জন মুখে মাক্সপড়া অজ্ঞাত ডাকাতদল লোহার রড, ধারালো ছুরি, চাপাতি হাতে নিয়ে ডিপোর মধ্যে প্রবেশ করে।

 

 

 

 

 

ডাকাতরা শুরুতেই ষ্টোর রুমে থাকা সিসি ক্যামেরার হার্ডডিক্স, কম্পিউটার ও আসবাবপত্র ভাংচুর করে। সিকিউরিটি গার্ডদের এলোপাথারী মারপিট করে হাত পা বেধে ষ্টোরের অফিস রুমে ফেলে রাখে। ডাকাতরা সিকিউরিটি গার্ডদের কাছে থাকা মোবাইল ফোন গুলো কেড়ে নেয়। এ সময় তিন ডাকাত নিরাপত্তা কর্মীদের পোষাক পড়ে ডিপোর গেটে অবস্থান নেয়। পরে এসব ডাকাতরা বাহিরে অবস্থানকরা অন্য ডাকাতদের মোবাইলে খবর দিলে রাত ১১টার দিকে ট্রাকসহ অন্য ডাকাতরা ডিপোর মধ্যে প্রবেশ করে। রাত চারটার দিকে নিরাপত্তা কর্মীদের বেঁধে রাখা কক্ষ বাহির থেকে আটকে দিয়ে ডাকাতরা ট্রাকে করে মালামাল নিয়ে চলে যায়। পরে সকালে খবর পেয়ে ছুটিতে থাকা নিরাপত্তা কর্মী একই এলাকার খায়রুল ইসলাম এসে জানতে পেরে প্রথমে বিষয়টি ডিপো ইনচার্জকে জানান। ডিপো ইনচার্জ সুজিত চক্রবর্তীর মাধ্যমে বাদী সুফল ঘোষ ডাকাতির খবর পেয়ে ডিপোতে ছুটে আসেন। ঘটনার সময় ডাকাতরা পাবনা ও সিরাজগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলছিল বলে নিরাপত্তা কর্মীরা জানিয়েছেন। ডাকাতির খবর পেয়ে নাটোরের পুলিশ সুপার মো: সাইফুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমিন নেলি ও নাটোর থানার ওসি নাছিম আহমেদ তাৎক্ষনিক ঘটনা¯’ল পরিদর্শনে যান। এ বিষয়ে প্রকল্প ব্যবস্থাপক সুফল ঘোষ অজ্ঞাত ২৫-২৬জনের নামে মামলা করলে নাটোর থানার ওসি (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদকে মামলার তদন্তভার দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নাটোর থানার ওসি নাছিম আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

সানশাইন/সোহরাব


প্রকাশিত: মে ২৫, ২০২৩ | সময়: ৮:৫৬ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine