সহকর্মীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিমূলক আচরণের অভিযোগ রাবি অধ্যাপিকার

রাবি প্রতিনিধি: নিজ বিভাগের সহকর্মীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিমূলক আচরণের অভিযোগ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক অধ্যাপিকা। এবিষয়ে গত মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা একাধিক শিক্ষকের স্বাক্ষরসহ একটি অভিযোগ পত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ওই অধ্যাপিকা।
অভিযোগ পত্র অনুযায়ী অভিযুক্ত ড. এনামুল হক রাবির মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। অভিযোগকারী শিক্ষকও একই বিভাগের অধ্যাপিকা।
ওই অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছ, গত মঙ্গলবার (২১ মে) দুপুর ২টার দিকে বিভাগীয় সভাপতির অফিসকক্ষে স্বাক্ষরকারী শিক্ষকগণের উপস্থিতিতে বিভাগীয় শিক্ষক অধ্যাপক এনামুল হক বিভাগের আরেক নারী শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে অশোভন ও যৌন হয়রানিমূলক আচরণ ও ভাষা ব্যবহার করেন। মূলত একাডেমিক বিষয়ে আলোচনার মধ্যে এ রকম নন-একাডেমিক আচরণ ও ভাষা প্রয়োগ করেন ড. এনামুল হক।
অভিযোগ পত্রে আরও বলা হয়েছে, আমরাসহ (স্বাক্ষরকারীরা) পনেরজন বিভাগীয় শিক্ষক ঐ সময় কক্ষে উপস্থিত ছিলাম। সকলের সামনেই তিনি তার পরনের প্যান্ট খোলার ভঙ্গি করে বলেন, “আমার সবসময় খোলা থাকে, এবার তোরটাও খুলে ছাড়ব।” এরকম বলতে বলতে নিজের কাপড় খোলার চেষ্টা করে। এ সময় অন্য সহকর্মীরা তাকে নিবৃত্ত করে। পরবর্তীতে মঙ্গলবার (২৩ মে) অনুষ্ঠিত একাডেমিক কমিটির সভাশেষে সভাপতি বিভাগের সকল শিক্ষককে বসতে বলেন এবং ড. এনামুল হককে তিনি সেদিন যে যৌন হয়রানিকমূলক আচরণ করেছেন, ভবিষ্যতে এ আচরণ থেকে বিরত থাকার জন্য বললে তিনি আবারও অশোভন আচরণ করে বলেন যে “আমার বাল ছিড়ে নিস” এবং অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেন।
ওই অধ্যাপকের আচরণকে অশালীন যৌন হয়রানিমূলক উল্লেখ করে অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে, আমরা এধরণের আচরণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং তার এহেন ন্যাক্কারজনক আচরণের সুষ্ট বিচার ও শাস্তি দাবি করছি। হাইকোর্টের রায়ের আলোকে প্রণীত যৌন হয়রানি ও নিপীড়ণ নিরোধ নীতিমালার আওতায় তার আচরণ কার্যত: যৌন হয়রানির সামিল। কর্মক্ষেত্রে তার এহেন আচরণ সকল নারী শিক্ষকের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। অতএব, আমরা এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করত: তার শাস্তি দাবী করছি।
উপাচার্য বরাবর দেওয়া ওই অভিযোগ পত্রে স্বাক্ষরকারী শিক্ষকরা হলেন- মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়া, একই বিভাগের অধ্যাপক নাজমা আফরোজ, অধ্যাপক আঞ্জুমান শিরি, অধ্যাপক সাবিনা সুলতানা, সহযোগী অধ্যাপক শিরি ফারহানা, সহযোগী অধ্যাপক মো. আশিক শাহরিয়ার, সহযোগী অধ্যাপক মো. নূর-ই-আলম সিদ্দিকী, সহকারী অধ্যাপক ফিউজি আক্তার এবং প্রভাষক সাদেকা বানু।
এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তির দাবি জানিয়ে উপাচার্য বরাবর লিখিত আবেদন দিয়েছে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়া। আবেদন পত্রে তিনি উল্লেখ করে বলেছেন, বিভাগের সভাপতি হিসাবে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনকালে আমি এহেন হুমকির শিকার এবং আমিসহ আমার নারী সহকর্মীবৃন্দ যৌণ হুমকির শিকার যা সকল নারী শিক্ষকের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক নিপীড়ণের অভিজ্ঞতা। আমি বিভাগীয় সভাপতি হিসাবে তাঁর এ ধরনের অশালীন যৌণ হয়রানিমূলক আচরণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং কর্মস্থলে এ ধরনের আচরণের পুনরাবৃত্তির জন্য যৌন হয়রানি ও নিপীড়ণ নিরোধ নীতিমালার আওতায় বিচারের দাবী জানাচ্ছি।
আবেদনে বিভাগের নারী সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের নিরাপদ শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে সভাপতি বলেছেন, হাইকোর্টের রায়ের আলোকে প্রণীত যৌন হয়রানিমূলক ও নিপীড়ণ নিরোধ নীতিমালার আলোকে এধরণের আচরণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একই সাথে তিনি যে কর্মস্থলে যৌন হয়রানিমূলক আচরণ করে নৈতিক স্খলন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩’ এ্যাক্ট অনুযায়ী যা গড়ৎধষ ঞধৎঢ়রঃঁফব (াড়ষ-২ , ঢ়.২৩৪)। আমি দ্রুততম সময়ে ড. এনামুল হকের বিচার পূর্বক শাস্তি বিধান করে আমার বিভাগের নারী সহকর্মীসহ নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপদ শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত করণের জন্য আবেদন করছি।
অভিযুক্ত শিক্ষককে বিভাগের সকল একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেছেন, যতদিন পর্যন্ত যৌন হয়রানি ও নীপিড়ণ নিরোধ অভিযোগ কমিটির মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হচ্ছে ততদিন বিভাগের সকল একাডেমিক কার্যক্রম থেকে তাকে বিরত রেখে বিভাগ পরিচালনার প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের কর্মপরিবেশ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করার আবেদন করছি।
অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত অধ্যাপক এনামুল হক বলেন, এটা মূলত একাডেমিক বিষয়ের একটা মিটিং ছিল। মিটিংয়ে একাডেমিক বিষয়েই পক্ষে-বিপক্ষে কথা হচ্ছিল। সেখানে উত্তেজনাপূর্ন কিছু কথাবার্তাও হয়েছে। এসময় বিভাগের প্রায় সকল শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। ওইসময়কার কথাবার্তাগুলো যদি যৌন হয়রানিমূলক আচরণ হয়ে থাকে, তাহলে আমি শাস্তি মাথা পেতে নিবো। তবে, আমার কথাবার্তাগুলো যৌন হয়রানিমূলক নয় বলে আমি মনে করি।
এ বিষয়ে রাবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, বিষয়টিু নিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষিকা গত মঙ্গলবার বিকেলে উপাচার্য দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ ধরণের বিষয়গুলো নিয়ে ব্যবস্থাগ্রহণের পূর্বে সাধারণত লিগ্যাল সেলের পরামর্শ নেয়া হয়। এ বিষয়েও লিগ্যাল সেলের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


প্রকাশিত: মে ২৫, ২০২৩ | সময়: ৬:৩১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ