রাসিক নির্বাচনে উৎসবমুখর ভোট উৎসবের প্রস্তুতি : ভোটের আলাপে লিটনের উন্নয়ন চিত্র

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে মেয়র পদ নিয়ে এবার ভোটারদের মধ্যে ভোটের আমেজ নেই। তবে ঘুরেফিলে আলাপ-আলোচনায় আসছে আওয়ামী লীগর প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নাম। তার পক্ষেই মুলত রাজশাহী নগরে চলছে ভোটের উদ্দীপনা। ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হবে ২ জুন থেকেই। তবে এখন সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম আর কর্মীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে ভোটের আলাপ।
বিএনপিসহ কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনে না আসায় মাঠে তেমন শোরগোল নেই। গত নির্বাচনের প্রার্থী এবং ভোটাররা বলছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ ছিলো। এবার প্রার্থী কমেছে, ফলে ভোট প্রদানকারীর সংখ্যাও কমার শঙ্কা আছে। তাই ভোটকে উৎসবমুখর করতে চলছে নানা প্রস্তুতি।
আওয়ামী লীগ চাচ্ছে, এই নির্বাচনে ভোটার অংশগ্রহণ বাড়ুক। ভোটাররা যেনো কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোট দেন। বিশেষ করে কাউন্সিলর প্রার্থীরা যাতে ভোটারদের কেন্দ্রে নিতে উৎসাহিত করেন, সেজন্য দলীয়ভাবে কাউকে প্রকাশ্য সমর্থন দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। ফলে বিভিন্ন ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা প্রার্থী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের টার্গেট সিটি নির্বাচনকে উৎসবমুখর করা।
২০১৮ সালে পঞ্চম বারের মতো রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীসহ মোট প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। ৩ লাখ ১৮ হাজার ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ৬৫ হাজার ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ব্যালট এবং ইভিএম দুয়ে মিলিয়ে সেবার ভোট পড়েছিলো ৭৮.৮৬ শতাংশ। এবার সবগুলো কেন্দ্রেই ভোট হবে ইভিএম মেশিনে। ফলে শঙ্কা থাকছে ভোট দ্রুত হওয়া নিয়ে।
নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহীন আকতার রেণী বলেন, সবগুলো কেন্দ্রে ইভিএমে প্রথমবার সিটি ভোট হচ্ছে। নাগরিকদের অনেকে মেশিন সম্পর্কে জানে না। বয়স্ক ভোটাররা ঠিকমতো ভোট দিতে পারবেন কি না এনিয়ে শঙ্কা আছে। এছাড়া ইভিএমে ভোট ধীরে হয়। ভোট পড়ার হার কমে যাওয়ার শঙ্কা করছেন তিনি। তাই দলীয় নেতাকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, ভোটারদের ইভিএম মেশিন সম্পর্কে জানাতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। আওয়ামী লীগ একটা উৎসবমুখর একটা ভোট প্রত্যাশা করছে বলে জানান তিনি।
সিটি নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর সমান অংশগ্রহণ না করায় ভোটারদের মধ্যে এবার কিছুটা দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাজ করছে। তারা মনে করেন সবার অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন উৎসবমুখর হয় না। ব্যালট কিংবা ইভিএম ভোট যে ভাবেই হোক না কেনো, নির্বাচন যেনো কেউ প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে, সে চাওয়া থাকছে নতুন ভোটরদের। রিটার্নিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, ভোটগ্রহণের কয়েকদিন আগে মব ভোটিং করা হবে। ইভিএম সম্পর্কে নাগরিকদের ধারণা দেওয়া হবে। ভোট উৎসবমুখর হবে বলেই মনে করছেন তিনি।
রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এসএম এক্রাম উল্যাহ বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে হয়তো ভোটর কিছুটা বাড়তো। কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপির না আসার কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘কাউন্সিলরা নিজ প্রয়োজনে ভোটারদের কেন্দ্রে টেনে আনবেন। এখন মেয়র প্রার্থীদের দরকার সেই ভোটটা নিজের বাক্সে নিতে পারেন কি না।’
আসন্ন রাজশাহী সিটি নির্বাচনে এখন পর্যন্ত মেয়র পদে নির্বাচন করতে প্রস্তুত আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, জাতীয় পার্টির সাইফুল ইসলাম স্বপন এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুরশিদ আলম ফারুকী।
এদিকে এ তিনজন প্রার্থীর মধ্যে লিটন ছাড়া মাঠে কাউকে নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। ঘুরেফিরে আসছে বর্তমান জনপ্রতিনিধিরা কী করেছেন আর কী করেননি সেসব আলোচনা। নান্দনিক সড়কবাতির জন্য দেশজুড়ে বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে রাজশাহী। উন্নয়নচিত্র যেমন ধরা পড়ছে তেমনি নানা সমস্যার কথাও আসছে আলোচনায়।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী জেলা সভাপতি আহমদ সফিউদ্দিন বলেন, এই শিক্ষানগরীতে আছে বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, পলিটেকনিকসহ অনেক সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নতুন করে নির্মাণ হচ্ছে আরও দুটি সরকারি স্কুল ও কলেজ। রাজশাহীর বাহ্যিক উন্নয়ন দৃশ্যমান। চলমান উন্নয়ন কাজগুলো বাস্তবায়ন হলে রাজশাহীর গুরুত্ব আরও বাড়বে।
মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহী নগরীর জন্য প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প এনেছি। মাত্র ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এবার নির্বাচিত হলে বাকি টাকার পাশাপাশি আরও ৩ থেকে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হবে। সেসব কাজ সম্পন্ন হলে নগরবাসীর আর কোনো সমস্যা থাকবে না।


প্রকাশিত: মে ১৯, ২০২৩ | সময়: ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ