সর্বশেষ সংবাদ :

পবায় বোরো ক্ষেতে পানি না দেয়ার অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার: খরা ও তাপপ্রবাহে পুড়ছে রাজশাহী। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। গভীর নলকুপগুলোতেও তেমন পানি উঠছে না। বোরোর জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য পানি মিলছে না। এরমধ্যেও ডিপ অপাটারের বিরুদ্ধে ইচ্ছকৃত ফসলে সেচ না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। চাষিরা পবা উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার হুজুরীপাড়া ইউনিয়নের সরিষাকুড়ি ৪ নম্বর ও নওহাটা পৌরসভার শ্রীরামপুর মৌজার ১ নং ডিপের মাঠে। সরিষাকুড়ি ৪ নম্বর ডিপ অপারেটর আলম হোসেন পানির স্তর নামাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগেকে দায়ী করেছেন। তবে নওহাটা পৌরসভার শ্রীরামপুর মৌজার ১ নং ডিপের অপারেটর জয়নাল আবেদীন চিকিৎসার জন্য ভারতে অবস্থান করায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সরোজমিন দেখা যায়-ওইসব ডিপের আওতায় বোরো খেতের মাটি ফেটে গেছে। বেশ কিছু এলাকায় ধান পুড়ে সাদা হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বোরো ধানের ফলন বিপর্যয় ছাড়াও ধানই না হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
ওই এলাকার চাষি আমিনুল, এনামুল, হান্নান, জমসেদ বলেন, এক মাস ধরে এই বিলের বেশিরভাগ জমিতে সেচ পড়েনি। তাপদাহে সেই ধানক্ষেত পুড়ে খাক। শীষে ধান নেই বললেই চলে। বছরের ক্ষেত এভাবে পুড়ে গেলে না খেয়ে থাকতে হবে। অথচ প্রতি বিঘা ধানে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১২-১৪ হাজার টাকা। তেল-সার সবকিছুর মূল্য বেড়েছে। এখন শুরু হয়েছে সেচ সংকট। ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ঋণের টাকা শোধ নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়েছেন তারা।
তারা আরো অভিযোগ করেন, ‘হীন স্বার্থে’ বেশীরভাগ কৃষকদের পানি না দিয়ে মুখ চেনা কয়েকজনকে পানি দিচ্ছে। যে কারণে অন্যদের জমিতে পানির অভাবে শত শত একর বোরো ধানের ক্ষেত ফেটে হা হয়ে আছে। বোরো ধান পাকার সময় হয়ে এলেও বেশির ভাগ ধানের শীষ আসেনি; অনেক গাছের আগা মরে যাচ্ছে।
অনেকে বলেন “এ ফসলে পরিবার পরিজন নিয়ে দুবেলা খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারতেন। ফসল নষ্ট হলে তো বউ ছেলে নিয়ে পথে বসতে হবে।” এখন “ধানের চারায় এ সময় ফুল এসেছে আর সেই সময়ে পানির অভাবে চারা শুকিয়ে ধূসর বর্ণ ধারণ করছে। “এই ফসল ঘরে তুলতে না পারলে, না খেয়ে থাকতে হবে।” তারা বলেন এ অবস্থায় কোন কৃষি কর্মকর্তা আমাদের কাছে আসেননি ও পরামর্শ দেননি।
এব্যাপারে জেলা কৃষকলীগ নেতা ইনতাজ আলী বলেন, ‘আমি বৃহস্পতিবার রাতে শুনেই শুক্রবার বিলে এসেছি। জমির অবস্থা দেখে আমার মাথায় খারাপ হয়ে গেছে। এখন ফলন বিপর্যয় নয়-ফসলই হবে না। আমি নিজেই বিএমডিএ, কৃষি ও পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে এ বিষয় নিয়ে যোগাযোগ করেছি। পরে জমিতে সেচের পানির ব্যবস্থার জন্য সোমবার উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।
এদিকে নওহাটা পৌরসভার শ্রীরামপুর মৌজার ১ নং ডিপের আওতায় থাকা বোরো চাষিরা ঠিকমত পানি পাচ্ছেননা। তারাও গতকাল বিএমডিএসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন।
এব্যাপারে সরিষাকুড়ির ডিপ অপারেটর আলম হোসেন বলেন, ডিপে পানি না পাওয়ায় এমন হচ্ছে। এটা একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ-এতে আমার কিছু করার নাই। তাছাড়া বরেন্দ্র উন্নয়ন বহুমূখী কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানোর পরে আবাদ বাঁচানোর জন্য আবারো বরিং করে ডিপ বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। চারদিন কার্যক্রম পরিচালনা করেও সুফল পাওয়া না গেলে আবারো পুরাতন ডিপের পানি দিয়েই আবাদ বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমানে পুকুর থেকে পানি উত্তোলন করেও সেচ দেয়া হচ্ছে। চাষিরা ভালভাবে সেচ পান বলে আমি ২০-২২ বছর থেকে ডিপ অপারেটরের দায়িত্ব পালন করছি। এরআগে কোন দিন এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়িনি। ডিপ বন্ধ ও মুখ চেনে পানি দিচ্ছেন এমন অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে পবা বরেন্দ্র উন্নয়ন বহুমুখী কর্র্তৃপক্ষের সহকারি প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন জানান, বোরো ক্ষেত বাঁচাতে বর্তমানে পুকুর থেকে পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। এছাড়াও নতুনভাবে সরিষাকুড়ি ৪ নম্বর ডিপ বরিং করা হচ্ছে। আগামী শুক্রবার থেকে চাষিরা যথারীতি সেচ পাবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আর নওহাটা পৌরসভার শ্রীরামপুর মৌজার ১ নং ডিপের আওতায় ক্ষেতের অবস্থা পর্যবেক্ষন করা করা হচ্ছে। শীঘ্রই চাষিদের সেচ দেবার ব্যবস্থা করা হবে।


প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০২৩ | সময়: ৫:২৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ