বৃষ্টির আভাস দিল আবহাওয়া বিভাগ

সানশাইন ডেস্ক: চৈত্রের দাবদাহে অতিষ্ঠ জনজীবনে সারাদেশের মানুষ চাতক পাখির মতো অপেক্ষায় বৃষ্টির, তা কবে নামতে পারে, সেই আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এই সপ্তাহ গড়িয়ে আগামী রোববার সেই বৃষ্টি নামতে পারে বলে আভাস মিলেছে। তবে তার আগ পর্যন্ত গরমের যন্ত্রনা সইতেই হবে।
বৈশাখের আগে দেশজুড়েই এখন মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বইছে। বুধবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৩৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েকদিন ধরেই এই জেলায় থার্মোমিটারে পারদ চড়ছে। এসময় ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক জানান, মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগসহ নীলফামারী জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায়ও তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানান তিনি।
বড় এলাকাজুড়ে বিরাজমান সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠে গেলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলে। গত বছরের ১৫ এপ্রিল রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি। এর আগে ২০১৪ সালে ৪২ ডিগ্রি এবং ২০২১ সালে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কপিমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল যশোরে।
২০১৪ সালের ২২ এপ্রিল ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ছিল পাঁচ দশকে সর্বোচ্চ। তার আগে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছিল ২০০৯ সালের ২৭ এপ্রিল, ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯৬০ সালে ঢাকায় ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠেছিল।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে রেকর্ড ৪৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হয়েছিল। রোজার মধ্যে চলমান তাপপ্রবাহে সারাদেশে মানুষের নাভিঃশ্বাস উঠেছে। বৈশাখের শুরুর দিনেও এমন গরম থাকবে বলেই আভাস। আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, “এপ্রিলে তাপমাত্রা বাড়ার প্রবণতা থাকেই। গেল ক’বছরেও তাপপ্রবাহ বিরাজ করেছে। এ সময়ে দখিনা বাতাস নেই, বাতাসে আর্দ্রতা কম, মানে জলীয় বাষ্পও তেমন নেই। যার কারণে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ছে এবং গরমও বেশ অসহনীয় হচ্ছে।”
দেশের ৪৯টি জেলার উপর দিয়ে বিরাজমান মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় কৃষি ও মাঠ ফসলের সুরক্ষায় বেশ কিছু সতর্কতামূলক পরামর্শ দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তাপপ্রবাহের ক্ষতি থেকে ধান রক্ষার জন্য বোরো ধানের জমিতে পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখা: ধানের শীষে দানা শক্ত না হওয়া পর্যন্ত জমিতে অবশ্যই ২ থেকে ৩ ইঞ্চি পানি রাখাসহ বেশ কিছু ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এ অসহনীয় গরমে আবালবৃদ্ধবণিতাকে পানিশূন্যতা পানিবাহিত রোগ এড়াতে সাবধানী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পংকজ কান্তি দত্ত জানান, রোদ এড়িয়ে সাবধানে চলা উচিৎ। অতিরিক্ত ঘাম হয়ে পানিশূন্যতায় ভুগতে পারেন অনেকে। একপর্যায়ে হিট স্ট্রোক হওয়ার শঙ্কা থাকে। তবে পানিবাহিত নানা রোগ এড়াতে বিশুদ্ধ পানি পানের পরামর্শ দেন ডা. পংকজ। গরম থেকে মুক্তি পেতে দুই-এক স্থানে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন হয়েছে।
প্রত্যাশার সেই বৃষ্টি কবে নামতে পারে- জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, “আগামী ১৬ তারিখের দিকে ঝড়বৃষ্টি হতে পারে।” বজ্রবৃষ্টি ও কালবৈশাখীর দাপট বাড়তেই তাপপ্রবাহ কেটে যাবে বলে জানান তিনি। “তাপপ্রবাহ প্রশমিত হওয়ার পর ধীরে ধীরে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়বে শেষের দিকে। ২৪ এপ্রিল থেকে ভারি বর্ষণের আভাস রয়েছে।” চলতি মাসের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়, মাসের শেষার্ধে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণের ফলে স্বল্পমেয়াদী আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।


প্রকাশিত: এপ্রিল ১৩, ২০২৩ | সময়: ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ