মান্দায় টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট বন্ধ ঘোষণা, তদন্তে প্রশাসন

মান্দা প্রতিনিধি: নওগাঁর মান্দায় ফাইয়ার কর্মী আল শাহরিয়ারকে মারধর ও ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে হামলার পেছনে রয়েছে প্রেমের দ্বন্দ্ব। বুধবার ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। এরই মধ্যে ফাইয়ার কর্মী শাহরিয়ারকে নওগাঁ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে শহীদ কামারুজ্জামান টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট অঘোষিতভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার সেমিস্টার পরীক্ষার পর কর্তৃপক্ষের মৌখিক নির্দেশ পেয়ে দুপুরের মধ্যে হল ছেড়ে শিক্ষার্থীরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
তবে এ ঘটনার দায়ভার নিতে নারাজ ফায়ার সার্ভিস কিংবা টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্যাম্পাসের ভেতরে কোন ঘটনা ঘটেনি। যা হয়েছে সবই বাইরে। এটি এখন পুলিশের বিষয় বলে কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় গভীর নলকূপের অপারেটর রুবেল হোসেন বলেন, ঘটনার শুরুর দিকে আমি গভীর নলকূপের ঘরের ভেতরে অবস্থান করছিলাম। চিৎকার-হইচই শুনে বাইরে এসে দেখি টেক্সটাইল কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মীকে বেধড়ক মারধর করছে। আমি সেখানে গিয়ে হামলাকারী শিক্ষার্থীদের কবল থেকে তাকে বাঁচানো চেষ্টা করি।’
রুবেল হোসেন আরও বলেন, এরপর ঘটনাস্থলে আশপাশের লোকজন ফায়ার সার্ভিস কর্মীর পক্ষ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মারধর শুরু করলে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এসময় ঘটনাস্থলে কোনো মেয়ে উপস্থিত ছিল না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ফাইয়ার কর্মী আল শাহরিয়ারের সঙ্গে টেক্সটাইল কলেজের এক ছাত্রীর বেশকিছু দিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। শাহরিয়ারকে বাদ দিয়ে কলেজের এক ছাত্রের সঙ্গে ওই ছাত্রী নতুন সম্পর্ক তৈরি করে।
এনিয়ে ফাইয়ার কর্মী শাহরিয়ারের সঙ্গে ওই ছাত্রীর টানাপোড়ন শুরু হয়। প্রেমের এ দ্বন্দ্বে সম্প্রতি হারপিক খেয়ে ওই ছাত্রী আত্মহত্যারও চেষ্টা করে।
সূত্রটি আরও জানায়, মঙ্গলবার বিকেলে ফাইয়ার কর্মী শাহরিয়ারের মোবাইল ফোনে ওই ছাত্রী মেসেজ দিয়ে ক্যাম্পসের পেছনের রাস্তায় দেখা করতে বলে। মেসেজ পেয়ে শাহরিয়ার মোটরসাইকেল নিয়ে সেখানে উপস্থিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থী আল আরাফাত, ইমতিয়াজ আসিফ, গালিব ও অন্তর তাকে মারধর করে। কিন্তু ঘটনাস্থলে ওই ছাত্রী উপস্থিত ছিল না। কৌশলে ডেকে নিয়ে নতুন প্রেমিকের সাঙ্গ-পাঙ্গ দিয়ে তাকে মারধর করিয়ে নিয়েছে।
নওগাঁ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইনচার্জ ডিএডি মাহমুদুল হাসান বলেন, ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত করছি। ঘটনা যেহেতু স্টেশন এলাকার বাইরে এতে আমাদের তেমন দায়ভার নেই। ফাইয়ার কর্মী শাহরিয়ারকে নওগাঁ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শহীদ কামারুজ্জামান টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার আসাদুজ্জামান অঘোষিত ছুটির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, মঙ্গলবার বিকেলে যা কিছু ঘটেছে সবই ক্যাম্পাসের বাইরে। এতে আমাদের কিছুই করার নেই। পরবর্তীতে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর-এ আলম সিদ্দিকী বলেন, ঘটনায় কোনো পক্ষই এখন পর্যন্ত অভিযোগ করেননি। তবে প্রকৃত ঘটনা কী ছিল তা অনুসন্ধান করতে বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিকেলে এক ছাত্রীকে কেন্দ্র করে ফাইয়ার কর্মী আল শাহরিয়ারকে মারধর ও বহিরাগত লোকজনের সহায়তায় মান্দা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে হামলা চালায় শহীদ কামারুজ্জামান টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।


প্রকাশিত: এপ্রিল ১৩, ২০২৩ | সময়: ৫:৩২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ