সর্বশেষ সংবাদ :

রাজশাহী সীমান্তে ফের তৎপর মাদকচক্র

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তপথে ভারত থেকে ফের হেরোইনের চালান আসছে ব্যাপক হারে। গত কয়েকদিনে কয়েকজন মাদক বহনকারী বিপুল পরিমাণ হেরোইনসহ ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় গ্রেফতার হয়েছে। তারা রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের সুন্দরবন ও চর বাগডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা।
এলাকায় আইনশ্খৃলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিলেও মাদক বহনকারীরা ঢাকা, গাজীপুর ও টাঙ্গাইলে গ্রেফতার হওয়ায় স্থানীয় হেরোইনের মালিকরা এলাকা থেকে গা ঢাকা দিয়েছে। স্থানীয় থানা পুলিশ তাদের খুঁজছে।
এলাকাবাসী জানায়, রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদরের বিভিন্ন সীমান্তপথে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ হেরোইন আসছে দেশে। স্থানীয় পুলিশের অভিযান বন্ধ থাকায় বড় বড় চালানে হেরোইন এনে ঢাকা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় পাচার করা হচ্ছে। নিজস্ব ট্রাক-মাইক্রোবাস ছাড়াও কৌশলে ঢাকাগামী কোচগুলোয় যাচ্ছে এসব হেরোইন।
অভিযোগ রয়েছে, এসব এলাকা থেকে মাদকদ্রব্য পাচার হলেও স্থানীয়ভাবে এগুলো ধরা পড়ছে না। তবে হেরোইনের এসব চালান আটক হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও র‌্যাবের হাতে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের (ডিএমপি) বিমানবন্দর থানা পুলিশ ইর্শ্বাল এলাকার একটি খাবার হোটেলের সামনে থেকে জহিরুল ইসলাম ও আব্দুল বারী নামের দুই মাদক বহনকারীকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে কোটি টাকা মূল্যের ৮৯০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়।
জানা গেছে, দুই মাদক কারবারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী বনলতা আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন থেকে বিমানবন্দর স্টেশনে নেমে হেরোইন হাতবদলের অপেক্ষায় ওই হোটেলের সামনে অবস্থান করছিল। গোপন সংবাদ পেয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ জানায়, গ্রেফতার জহিরুল চাঁপাইনবাবগঞ্জের সুন্দরপুর ইউপির বাগডাঙ্গা সুন্দরপুর গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে। অন্যদিকে জহিরুলের সহযোগী বারীর বাড়িও একই এলাকায়।
জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে তারা জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরবাগডাঙ্গা ইউপির নুরুল হক ও তার ভাতিজা আলমগীর এবং সুন্দরপুর ইউপির শহিদুল মেম্বারের হেরোইনের চালান ঢাকায় খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিতে গিয়েছিল তারা। ঘটনার দিনই বিমানবন্দর থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে তাদের নামে মামলা হয়েছে। তবে মাদকের মালিকদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি।
এদিকে জহিরুল ও বারী ঢাকায় হেরোইনসহ গ্রেফতার হওয়ার খবর পেয়ে মাদকের মালিক নুরুল, জুয়েল, শহিদুল ও আলমগীর এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে বলে জানা গেছে। পুলিশ জানায়, নুরু মেম্বারের নামে ৫টি মাদক মামলা রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর বিভিন্ন থানায়। বাকিদের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন থানায় মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে। এসব মাদক কারবারির প্রত্যেকের নামে-বেনামে রয়েছে বিপুল সম্পদ। এরমধ্যে একেকজনের রয়েছে একাধিক ট্রাক। এসব ট্রাকে অন্যান্য মালামালের সঙ্গে মাদক পাচার করা হচ্ছে।
এর আগে গত ৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কালিয়াকৈর ও নওগাঁয় অভিযান চালিয়ে ৫ কেজি ৪০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধারের ঘটনায় শাকিবুর, তার স্ত্রী সেলিনা খাতুন ওরফে শিরিনাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১২-এর একটি দল। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, শাকিবুর ও শিরিনার নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি মাদক বহনকারী দল কাজ করছিল সহযোগী হিসাবে।
জিজ্ঞাসাবাদে শাকিবুর ও শিরিনা র‌্যাবকে জানায়, রাজশাহীর গোদাগাড়ীর মহিষালবাড়ি এলাকার মাদকসম্রাট শহিদুল ইসলাম ভোদল ও মোহন সীমান্তপথে ভারত থেকে হেরোইনের বড় বড় চালান এনে বগুড়া, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ ও ঢাকায় চালান করে আসছিল। রাজশাহীতে র‌্যাব ও পুলিশের মাদকবিরোধী তৎপরতা বাড়ায় ভোদল ও মোহন কৌশলে নওগাঁয় শাকিবুর ও শিরিনার মাধ্যমে মাদক মজুত রেখে ঢাকায় চালান করছিল।
ঘটনা জানার পরপরই হেরোইনের দুই মালিক ভোদল ও মোহন আত্মগোপনে গেছে বলে জানিয়েছেন গোদাগাড়ী থানার ওসি কামরুল ইসলাম। ওসি আরও জানান, ভোদলের নামে রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় বেশকিছু মাদকের মামলা রয়েছে।
এদিকে গত ২৬ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী হানিফ পরিবহণের একটি বাস থেকে গোদাগাড়ীর মোকবুল হোসেনের ছেলে শাহাজামাল ইসলাম খোকন (৩৫) এবং একই গ্রামের মৃত আসাদ আলীর ছেলে মিজানুর রহমানকে (৩০) বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব টোল প্লাজায় আটক করে র‌্যাব-১৪-এর একটি দল। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, তাদেরই এলাকার এক শিশুর মাধ্যমে ৬৬০ গ্রাম হেরোইন গাজীপুরের কালিয়াকৈরের চন্দ্রা মোড়ে পাঠানো হয়েছে।
র‌্যাব সদস্যরা নির্ধারিত স্থানে গিয়ে একটি শিশুকে হেফাজতে নিয়ে তার কাছে থাকা একটি বালিশের ভেতরে কৌশলে লুকানো অবস্থায় ৬৬০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করেন। আটক মাদক কারবারিরা র‌্যাবকে জানায়, গোদাগাড়ী সীমান্তপথে আনা মাদক তারা বিভিন্ন কৌশলে ঢাকায় পাচার করে আসছিল। গোদাগাড়ী থানা পুলিশ জানায়, র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া খোকন ও মিজানুর তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। তাদের নামে গোদাগাড়ী থানায় মাদকের মামলা রয়েছে।
এদিকে ৬ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরবাগডাঙ্গা গ্রামের ঝাইড়াপাড়ার ইসমাইল হোসেনসহ ১২ মাদক কারবারিকে সম্প্রতি সাড়ে ৪ কেজি হেরোইনসহ ঢাকার গাবতলীতে গ্রেফতার হয় ডিবির হাতে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী একটি ট্রাকে তারা হেরোইনের বড় এ চালান রাজধানীতে পাঠিয়েছিল। তবে হেরোইনসহ জব্দ ট্রাকটির মালিক মাদক কারবারি জুয়েল ১২ লাখ টাকা দিয়ে তার ট্রাক ছাড়িয়ে নিতে সক্ষম হয় বলে জানা গেছে।
রাজশাহী পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী কয়েকটি এলাকা মাদক পাচারপ্রবণ। স্থানীয়ভাবেও পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মাদক জব্দ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। গ্রেফতার হচ্ছে মাদক কারবারিরাও। কিছু মাদক এলাকার বাইরে চালানের সময় ধরা পড়ছে। এ অঞ্চলে বিশেশ করে রাজশাহীর গোদাগাড়ী, বাঘা, চারঘাট ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুলিশ, র‌্যাবসহ মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর নিয়মিত অভিযান পারিচালনা করছে।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৩ | সময়: ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ