সর্বশেষ সংবাদ :

বাসন্তী সাজে সেজেছে রাবি চারুকলা

লাবু হক, রাবি: ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। এই ছয় ঋতুর মধ্যে বসন্তকে বলা হয় ঋতুরাজ। প্রকৃতিতে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন ঘটল আজ। নবরূপা এই ঋতুর আগমনে প্রকৃতি যেমন সাজে আপরূপ সাজে, তেমনি ঋতুরাজকে বরণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও সেজে উঠে বাসন্তী সাজে। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাজসজ্জার মূল আকর্ষণে থাকে চারুকলা। তেমনিভাবে বসন্তকে বরণ করে নিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদও সেজেছে বর্ণিল সাজে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বসন্তের আগমনের আগের দিন চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি কেউ রঙ-তুলি হাতে রাঙাচ্ছেন চারুকলার মক্তমঞ্চ। আবার কেউ লোকজ ধাঁচের বিভিন্ন দেয়ালচিত্র এঁকে রাঙাচ্ছেন চারুকলার সম্মুখ প্রাচীর। আবার কেউ কেউ প্রস্তুত করছেন শোভাযাত্রার ডামি। সবমিলিয়ে বসন্তকে বরণ করে নিতে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
রঙ-তুলি হাতে মুক্তমঞ্চ রাঙাচ্ছেন চারুকলার শিক্ষার্থী ওয়াহিদুল হক ফাহিম। তিনি বলেন, এবারে চারুকলার মুক্তমঞ্চ আমরা একটু ভিন্নভাবে সাজাতে যাচ্ছি। মঞ্চের পিছনটা এবারে রিকশার আদলে প্রস্তুত করা হবে। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের হারানো ঐতিহ্যকে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। কারণ কয়েক বছর আগেও এ দেশে সাধারণ রিকশা পাওয়া যেত, যেগুলো পায়ের শক্তির সাহায্যে চালাতে হত। কিন্তু বর্তমানে যান্ত্রিকতার ভিড়ে মানুষ এখন শ্রম বিমুখ হয়ে পড়েছে। আমরা মূলত বাঙালীর সেই পরিশ্রমের বিষয়টিকে তুলে ধরতে চাই। এছাড়া পুরো মঞ্চে থাকবে রিকশা পেইন্টিংয়ের মতো ফুল, লতা-পাতা, ময়ূরসহ বিভিন্ন পাখির নকশা।
চারুকলার সম্মুখের দেয়ালে দেয়ালচিত্র অংকনে ব্যস্ত বেশকিছু শিক্ষার্থী। আর তাদের নানান ভাবে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্র্থী ইশাদুল ইসলাম লিমন। লিমন বলেন, চারুকলার সম্মুখ প্রাচীরটি প্রায় অর্ধশত ভাগে বিভক্ত। আমরা প্রতিটি ভাগকে একেকটি ক্যানভাস হিসেবে ধরে নিয়েছি। প্রতিটি ক্যানভাসে এদেশের লোকজ ঐতিহ্যসহ বিখ্যাত কিছু শিল্পীর চিত্রকর্ম ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে।
শিল্পী যামিনী রায়ের শিল্পকর্মের বিষয়ববস্তু অবলম্বনে দেয়ালচিত্র অংকন করছেন অনুষদের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জুঁই রানী এবং কৃপাময়ী মন্ডল। প্রথমবারের মতো চারুকলার বড় এক উৎসবে সম্পৃক্ত হতে পেরে তারা দুজনেই বেশ উচ্ছ্বসিত। জানতে চাইলে জুঁই রানী বলেন, চারুকলায় ভর্তির পর সরাসরি প্রথম কোনো বড় উৎসবের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পেরে আমি আনন্দিত। পূর্বে চারুকলার উৎসবগুলো মিডিয়ায় দেখতাম, এখন আমি নিজেই অংশগ্রহণ করেছি এজন্য অনেক ভালো লাগছে। দেয়ালচিত্রের বিষয়ে কৃপাময়ী বলেন, যামিনী রায়ের ন্যায় আমরা আমাদের দেয়ালচিত্রটিতে মা ও শিশু এবং নৃত্যরত মহিলাকে উপস্থাপন করেছি। যেগুলো আমাদের ইতিহাসের সঙ্গে আষ্টেপীষ্টে জড়িয়ে আছে।
চারুকলা অনুষদের পলাশ চত্বরে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে হাঁসের ডামি প্রস্তুত করছেন চারুকলার মাস্টার্সের শিক্ষার্থী নয়ন আহমেদ সুমন। তিনি বলেন, এবারের বসন্তের শোভাযাত্রার জন্য হাঁস, বসন্ত বৌরি পাখি, শিমুল এবং পলাশ ফুলের ডামি তৈরি করা হচ্ছে। বসন্তে সাধারণত শিমুল ও পলাশ ফুটে তাই শিমুল ফুলের দুটি এবং পলাশ ফুলের একটি ডামি তৈরি করা হচ্ছে। আর সেই শিমুল ও পলাশ ফুলে বসে বসন্ত বৌরি। সেজন্য বসন্ত বৌরি ডামি প্রস্তুত করা হচ্ছে। এছাড়া শীতকালে এদেশে আসা হাঁস প্রজাতির পরিযায়ী পাখিরা বসন্তকালে ফিরে যায়। যেটা এদেশের একটি প্রকৃতিক ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। সেটিকে তুলে ধরতেই আমরা হাঁসের আদলে পরিযায়ী পাখিরও ডামি প্রস্তুত করছি।
বসন্ত বরণ অনুষ্ঠানের সার্বিক বিষয়গুলোর দেখভাল করছেন চারুকলা অনুষদের ডীন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী। জানতে চাইলে তিনি বলেন, বসন্ত আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িত এবং চারুকলার কারিকুলামেরও অন্তর্ভূক্ত একটি বিষয়। তাই প্রতিবারের ন্যায় এবারও আমরা উৎসবমূখর আয়োজনে বসন্তকে বরণ করতে যাচ্ছি। এবারে দুই দিনব্যাপী বসন্ত বরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দুই দিনব্যাপী এই আয়োজনে ডামি ও মুখোশ পরে শোভাযাত্রাসহ গান, আবৃতি এবং নৃত্যসহ নানাধরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এছাড়া এ দুদিন চারুকলা প্রাঙণে হরেক রকমের পিঠার স্টল বসারও অনুমতি রয়েছে।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩ | সময়: ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর