রেলওয়ের ১৫০০ গেট কিপারের বেতন নেই সাত মাস

সানশাইন ডেস্ক: রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় জোনের ১ হাজার ৫০৫ জন গেটকিপার টানা ৭ মাস বেতন পাচ্ছেন না। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তারা। প্রকল্পের ফান্ডে অর্থ না থাকায় বেতন প্রদানে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলেও গেট কিপারদের চাকরি স্থায়ীকরণ করা হচ্ছে না। যদিও এ পর্যন্ত তিনবার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় ৫ বছর ধরে গেট কিপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তারা। গত ৫ বছরে কোনরূপ বেতন ভাতাও বৃদ্ধি করা হয়নি গেট কিপারদের। তাদের মাসিক বেতন ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা।
খুলনার ফুলবাড়িগেট রেল ক্রসিংয়ের গেটকিপার হিসেবে দায়িত্ব পালনরত মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘ধার দেনা করে পরিবার-পরিজন নিয়ে আমাদের চলতে হচ্ছে। মানসিকভাবে আমরা মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত। ৭ মাস বেতন পাই না। কবে বেতন পাবো তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। চাকরির কোনো নিশ্চয়তা নেই। মানসিক চাপ নিয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় কিভাবে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা এবং যানবাহন রক্ষা করবো এটাই এখন আমার প্রশ্ন।’
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় জোন পাকশী’র বিভাগীয় প্রকৌশলী-১’র একটি প্রকল্পের আওতায় ওই গেটে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। মেহেদী হাসান আরো বলেন, ‘গত রমজান মাসে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে আমরা ১৭ দিন অনশন পালন করি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। চাকরির ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা খুবই হতাশ।’
মেহেদীর মতো ফুলবাড়িগেট রেলক্রসিংয়ে গেট কিপার হিসেবে দায়িত্বে¡ থাকা মো. সুমন শেখ, ইউনূস এবং রনজিতেরও একই রকম আক্ষেপ এবং হতাশা। তারা বলেন, রেলক্রসিংয়ের পাশে যে ছোট গার্ডরুম থেকে আমরা ডিউটি করি, সেখানে নেই কোনো টয়লেট, পানি এবং বিদ্যুতের ব্যবস্থা। রেল ক্রসিংয়ে ডিজিটাল সিগনালও নেই।
পুরানো আমলের সিগন্যাল ব্যবস্থা মাধ্যমে আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। ট্রেন চলাচলের সময় গেট আটকাতে কোনো কারণে সামান্য দেরি হলে অনেকে আমাদের মারধর করতে আসেন। আবার কোনো কারণে গেট একটু আগে আটকালেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়। এককথায় কর্মস্থলে আমরা কোনক্রমে নিরাপদ নই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেশের বিভিন্ন স্থানে রেল ক্রসিং পারাপারে জনসাধারণসহ যানবাহনের দুর্ঘটনা এড়াতে অস্থায়ী এবং চুক্তিভিত্তিক গেটকিপার নিয়োগ দেওয়া হয় । সারাদেশের রেলের ঝুঁকিপূর্ণ লেভেল ক্রসিং এ দুর্ঘটনা এড়াতে দিবা-রাত্রি ২৪ ঘণ্টা অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় দায়িত্ব পালন করছেন এ সব গেট কিপার।
রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় জোন, পাকশী’র বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ ‘র গেট কিপার নিয়োগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক বীরমল মন্ডল বলেন, ‘প্রকল্পের ফান্ডে অর্থ না থাকার কারণে আমরা গেটকিপারদের বেতন দিতে পারছি না। এমনকি গেটকিপারদের চাকরি স্থায়ীকরণের কোনো নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারবো না। তবে তাদের (গেট কিপারদের) চাকরি স্থায়ীকরণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৩ | সময়: ৬:৪০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ