বিধ্বস্ত দ. আফ্রিকা মাথা তুলে দাঁড়াল এরউইয়ার সেঞ্চুরিতে

স্পোর্টস ডেস্ক: প্রথম ইনিংসে ৯৫, দ্বিতীয় ইনিংসে ১১১। প্রথম টেস্টে এভাবেই মুখ থুবড়ে পড়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং। সেই বিভীষিকার পরের টেস্টে একই মাঠে টস জিতে ব্যাটিং নিতে সাহস লাগে বটে! ডিন এলগার সেই চ্যালেঞ্জ নিলেন এবং প্রথম দিনে জিতেও দেখালেন। তাদের নায়ক অবশ্য নবীন একজন। চোয়ালবদ্ধ লড়াইয়ের সেঞ্চুরিতে নিজেকে চেনালেন সারেল এরউইয়া।
দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নেমে এরউইয়া খেললেন ১০৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। ক্রাইস্টচার্চে নিউ জিল্যান্ডর বিপক্ষে প্রথম টেস্টে গুঁড়িয়ে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা এবার প্রথম দিন শেষ করল ৩ উইকেটে ২৩৮ রান নিয়ে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নতুন হলেও দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটে এরউইয়া পরীক্ষিত এক সৈনিক। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৩ বছরের বেশি কাটিয়ে ৯৬ ম্যাচ খেলে প্রায় ৬ হাজার রান করার পর ৩২ বছর বয়সে টেস্ট ক্যাপ পান এই নিউ জিল্যান্ড সফরে। কিন্তু প্রথম ম্যাচে করতে পারেন কেবল ১০ ও ০। সঙ্গে দলের ইনিংস ব্যবধানের পরাজয়ে তার অভিষেক রূপ নেয় দুঃস্বপ্নে। সেই হতাশা চাপা দেওয়ার পর্ব শুরু হলো দ্বিতীয় টেস্ট থেকেই।
মাঠ একই হলেও খেলা এবার ভিন্ন উইকেটে। আগের টেস্টের চেয়ে উইকেটের ধরনও আলাদা। উইকেটে ঘাস এবার অনেক কম। যেটুকু আছে, তাতে বাদামি ঘাসই বেশি। সব মিলিয়ে পেসারদের সহায়তা বেশ কম। প্রথম দিনে নতুন বলে তবু চ্যালেঞ্জ ছিল যথেষ্টই। এরউইয়া ও এলগারের উদ্বোধনী জুটি সেই পরীক্ষায় উতরে যান স্কিল ও ধৈর্য দিয়ে। তাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল অভিজ্ঞ টিম সাউদি ও আগের ম্যাচের নায়ক ম্যাট হেনরিকে শুরুতে উইকেট না দেওয়া। তাতে দুই প্রোটিয়া ওপেনার সফল দারুণভাবেই। প্রথম ১০ ওভারে রান আসে ১৮, কিন্তু উইকেট পড়েনি। পরের ১০ ওভারে আসে ৩৪ রান।
সময় যত গড়ায়, ক্রমেই সাবলিল হন দুজন। কোনো উইকেট না হারিয়ে লাঞ্চে যান তারা ৮০ রানের জুটি গড়ে। এরউইয়া ততক্ষণে প্রথম টেস্ট ফিফটির স্বাদ পেয়ে যান। লাঞ্চের পরও দুজনের জুটি এগোতে থাকে। আগের টেস্টের প্রথম ইনিংস গোটা দল মিলে যা করেছে, এবার উদ্বোধনী জুটিতেই তা পেরিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। জুটির শতরান আসে ১৯৭ বলে।
নিউ জিল্যান্ডে সফরকারী দলের হয়ে টেস্টের প্রথম ইনিংসে শতরানের উদ্বোধনী জুটি সবশেষ ছিল দেড় যুগ আগে! দক্ষিণ আফ্রিকার জুটিই করেছিল তা, ২০০৪ সালের মার্চে গ্রায়েম স্মিথ ও হার্শেল গিবস। ১১১ রানের উদ্বোধনী জুটি অবশেষে থামে টিম সাউদির অসাধারণ এক ডেলিভারিতে। রাউন্ড দা উইকেটে স্টাম্পের বেশ দূর থেকে করা ডেলিভারি ভেতরে ঢুকে এলগারের ব্যাটের পাশ দিয়ে ছোবল দেয় স্টাম্পে। হতভম্ব দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক ফেরেন ১৫৩ মিনিটে ৪১ রান করে।
তবে ওই উইকেটের পর পথ হারায়নি প্রোটিয়ারা, চাপ ধরে রাখতে পারেনি কিউইরা। দলে জায়গা বাঁচানোর লড়াইয়ের থাকা এইডেন মারক্রাম এবার সঙ্গ দেন এরউইয়াকে। গড়ে ওঠে আরেকটি জুটি। চা বিরতির আগের ওভারে এরউইয়া পা রাখেন তিন অঙ্কে। নিল ওয়্যাগনারকে পুল করে চার মেরে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ১৮৮ বলে।
চা বিরতির পর দিনের সেরা সময়টুকু পায় নিউ জিল্যান্ড। এরউইয়া ও মারক্রামের ৮৮ রানের জুটি ভাঙেন ওয়্যাগনার। দুই ঘণ্টার বেশি সময় ঠাণ্ডা মাথায় উইকেটে টিকে থাকলেও মারক্রাম আউট হন আলগা এক শটে। ৮ চারে ৪২ করে তিনি ধরা পড়েন প্রথম স্লিপে। পরের ওভারেই এরউইয়ার প্রতিরোধের দেয়াল ভাঙেন হেনরি। এখানেও মূল দায় ব্যাটসম্যানের। বেশ বাইরের বলে আলসে এক ড্রাইভের চেষ্টায় কিপারের হাতে ধরা পড়েন এরউইয়া। শেষটা হতাশার হলেও প্রায় ৫ ঘণ্টায় ২২১ বলে ১০৮ রানের ইনিংসটি নিশ্চিতভাবেই কখনও ভুলবেন না এরউইয়া। নিউ জিল্যান্ড আরেকটি সাফল্য পেতে পারত দিনের শেষ দিকে। কিন্তু হেনরির বলে রাসি ফন ডার ডাসেনের সহজ ক্যাচ ছাড়েন উইল ইয়াং। দ্বিতীয় নতুন বলেও হতাশাই প্রাপ্তি কিউই পেসারদের। ফন ডার ডাসেন ও টেম্বা বাভুমা নিশ্চিত করেন, দিনটা দক্ষিণ আফ্রিকারই।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২২ | সময়: ৩:৫৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ