সর্বশেষ সংবাদ :

শিবগঞ্জে সাবরেজিস্ট্রারের মামলায় আসামী উপজেলা নির্বাহী অফিসার

স্টাফ রির্পোটার, শিবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী অবশেষে মামলার আবেদন করলেন আদালতে। শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল হায়াতকে প্রধান আসামী করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের শিবগঞ্জ আমলী আদালতে মামলার আবেদন করেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে উপস্থিত হয়ে সাব রেজিস্ট্রার ইউসুপ আলী অভিযোগ দাখিল করেন।
আদালতের একটি সুত্র জানায়, মামলায় শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল হায়াতসহ চার জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামী করা হয়েছে। এর আগে শিবগঞ্জ থানায় একই ঘটনায় তিনি শিবগঞ্জ সাবরেজিস্ট্র্রি কার্যালয়ের মোহরার মামুনুর রশিদ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ১২ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন।
অন্য আসামীরা হলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার রাজারামপুর এলাকার আলাউদ্দিনের মেয়ে সালে নূর বেগম এ্যানি, উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের নিশিপাড়া গ্রামের আল আমিন জুয়েল ও সদর উপজেলার বাখেরআলী বিশ্বনাথপুর গ্রামের মর্ত্তুজা আলীর ছেলে তমাস উদ্দিন।
বাদি সাব রেজিস্টার ইউসুফ আলী মামলার আবেদনে উল্লেখ করেন, গত ১০ জানুয়ারি বেলা ৩টা ১০ মিনিটের দিকে মধ্যে সাব-রেজিস্ট্রারের এজলাস ও খাস কামরায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল হায়াতের নির্দেশনায় ও তার হুকুমে হামলা হয়। এসময় সাব রেজিস্টার কার্যালয়ের অফিসে ভাংচুর চালানো হয়।
মামলার আবেদনে সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী আরও উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন বেলা ২টা ৫০ মিনিটের দিকে ইউএনও আবুল হায়াত মামলার দুই নম্বর আসামী সালেনুর বেগম এ্যানিকে সাথে নিয়ে অফিসে এসে অবসরপ্রাপ্ত অফিস সহায়ক মৃত তালেব আলীর পেনশনের কাগজপত্রের ছাড়পত্র দিতে বলেন।
কিন্তু এর সপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে অনুরোধ করলে ইউএনও অকথ্য ভাষায় কথা বলেন। বিষয়টি জেলা রেজিস্ট্রারকে জানাতে হাতে ফোন নিলে তা কেড়ে নেন এবং কলার ধরে কিল-ঘুষি মারেন ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ইউএনও।
ইউসুফ আলী মামলার আবেদনে জানান, মারধর করে ইউএনও চলে যাওয়ার পর সেই মহিলাকে সঠিক কাগজপত্র না থাকায় ফিরিয়ে দিলে ইউএনও’র আনসার বাহিনী অফিসে এসে সেবাগ্রহীতাদের তাড়িয়ে দেন। পরে ইউএনওর নির্দেশে লাঠি লোহার রড ও পাইপ দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। হামলার পরদিন ১১ জানুয়ারি শিবগঞ্জ থানায় ইউএনও আবুল হায়াতের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে গেলে মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানানো হয় বলে অভিযোগ করেন সাব রেজিস্টার ইউসুফ আলী।
বাদির আইনজীবী ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান আসাদ বলেন, বাদি নিজে আদালতে উপস্থিত হয়ে মামলার আবেদন করেছেন। বিচারক বাদির সকল ঘটনা ও অভিযোগ শুনেছেন। আমরা আশা করছি, আদালতে সঠিক বিচার পাব। এসময় আদালতে সাব রেজিস্টার ইউসুফ আলীর পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন বলে জানান তিনি।
এবিষয়ে কথা বলতে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল হায়াত জানান, তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কিনা তা তিনি অবগত নন।
অন্যদিকে শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) চৌধুরী জোবায়ের আহমেদ ঘটনার পরদিন থানায় মামলা না নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকেই সাব রেজিস্টর এলাকায় নেই। তিনি থানায় থানায় আসেননি। তবে থানায় তার পক্ষে একটি মামলা দেওয়া হলে তা আমলে নিয়ে আসামীও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে মামলার তৃতীয় আসামী আল আমিন জুয়েল জানান, শিবগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রারকে হয়রানীর শিকার কতিপয় ব্যক্তি ঘিরে রেখেছে এমন সংবাদে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসা থেকে এসে জানতে পারেন সাব রেজিস্ট্রার আহত হয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছেন।
পরে তিনি স্থানীয়দের সাথে সাবরেজিস্ট্রারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্দোলনে যুক্ত হওয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়গুলো শেয়ার করায় তাকে আসামী করা হয়ে থাকতে পারে।
তার অভিযোগ তাদের পৈত্রিক জমি পাঁকা নারায়নপুর উচ্চ বিদ্যালয়কে বিক্রির জন্য রেজিস্ট্রি করতে এসে হয়রানির শিকার হতে হয়। এর একপর্যায়ে প্রকৃত খরচ ৬ হাজার ৯৮৫ টাকার পরিবর্তে ২৪ হাজার টাকা দিলে ঐ জমির রেজিস্ট্রশন সম্পন্ন হয়।
মামলার বিষয়ে জানতে সাবরেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীর মোবাইল ফোনে কলা করা হলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে শেষ খবর লেখা পর্যন্ত অভিযোগটির ব্যাপারে কোন আদেশ দেয়নি আদালত।
প্রসঙ্গত: নিজ কার্যালয়ে হামলার পর আহত সাবরেজিস্ট্রারকে প্রথমে শিবগঞ্জ পরে রাজশাহী এবং সবশেষ বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অন্যদিকে ঘটনার পরদিন ১১ জানুয়ারি রাতে মোহরার মামুন অর রশিদ বাদি হয়ে ১২ জন অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে শিবগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। এ ঘটনায় শিবগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার অফিসের মহরার সাজিরুল ইসলাম, আলফাজ উদ্দিন ও রোজবুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৩ | সময়: ৭:১৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ