সর্বশেষ সংবাদ :

জয়পুরহাটে সেচ পাম্পের মিটার চুরি নিয়ে মালিকরা অসহায়

মতলুব হোসেন, জয়পুরহাট: মিটার, ট্রান্সফর্মার সহ সেচ পাম্পের অন্যান্য যন্ত্রাংশ চুরি করে মোটা অংকের চাঁদার বিনিময়ে ফেরৎ যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার গভীর ও অ-গভীর নলকূপ মালিকরা চোর ও চাঁদাবাজদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। নলকূপ মালিক ও কৃষকরা বিপাকে পড়েছে।
জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে প্রতি রাতেই কোন না কোন ফসলের মাঠ থেকে বিদ্যুৎ চালিত গভীর ও অ-গভীর সেচ যন্ত্রের (নলকূপের) মিটার ও ট্রান্সফর্মার চুরি হচ্ছে। ফলে চুরি হওয়া ওই সব মালামাল ফেরৎ পেতে কৃষরা হিমসিম খাচ্ছে।
উপজেলায় চলতি রবি মৌসুমে ৮ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে আলু, ১ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে সরিষা, ১০৫ হেক্টর জমিতে গম এবং ২৩০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কৃষকরা অধিক ফলনের আশায় ফসল উৎপাদনের জন্য মাঠে নেমেছে। ইতিমধ্যেই কৃষকরা আলু, সরিষা চাষ করে ফসলের মাঠে সবুজ ও হলুদের বিপ্লব ঘটিয়েছে। বর্তমান শুষ্ক মৌসুমের কারণে আলু ক্ষেতে সেচের জন্য প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। সেই পানির প্রয়োজনীয়তা মেটাতে গভীর ও অ-গভীর নলকূপ মালিকরা তাদের স্কীমে কৃষকদের চাহিদা মোতাবেক পানি সেচ সরবরাহ করছে।
জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি আওতাধীন ক্ষেতলাল সাব জোনাল অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় বিদ্যুৎ চালিত ৪১৭ টি গভীর এবং ৩৩৩ টি অ-গভীর নলকূপ আছে। এসব নলকূপ চালানোর জন্য ১ হাজার ৫৮৪ টি ট্রান্সফর্মা এবং ৭৫০ টি বৈদ্যুতিক মিটার সরবরাহ করেছে।
উপজেলার বিভিন্ন মাঠ থেকে এ পর্যন্ত ৩৩ টি ট্রান্সফর্মা এবং ১৭ টি বৈদ্যুতিক মিটার চাঁদাবাজরা চুরি করে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অধিকাংশ মিটার ফেরৎ দেওয়া হলেও কিছু মিটার নষ্ট করা হয়েছে। এমন অভিযোগ করছে গভীর ও অ-গভীর নলকূপ মালিকরা।
এ দিকে গভীর ও অ-গভীর নলকূপ মালিকদের কাছে চাঁদা দাবি করে চাঁদা না পাওয়ায় ওই সব নলকূপে রাতে গিয়ে ড্রেনম্যানকে বিভিন্ন ভয়-ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বৈদ্যুতিক মিটার ও ট্রান্সফর্মা চুরি করে ওই স্কীমের মধ্যেই লুকিয়ে রাখে। পরে ওই সব চুরি করা মিটার ও ট্রান্সফর্মা মোটা অংকের চাঁদার বিনিময়ে ফেরৎ দেয় চোররা।
আবার অনেকেই চোরের সাথে সমঝোতা না করলে চুরি করা মিটার নষ্ট করে স্কীমের আশেপাশে ফেলে রাখে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, থানায় পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে চাঁদাবাজ ও চোরদের অত্যাচার ব্যাপকহারে বৃদ্ধি করে। এ ভয়ে অনেকেই থানায় অভিযোগ করেনা।
ক্ষেতলাল সাব জোনাল অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত আমন মৌসুম থেকে চলতি রবি মৌসুম পর্যন্ত এ উপজেলায় গভীর ও অ-গভীর নলকূপের ৩৩ টি ট্রান্সফর্মা এবং ১৭ টি বৈদ্যুতিক মিটার চুরি হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার আলমপুর মাঠ থেকে ৬ টি, বাঁকিলা মাঠ থেকে ১ টি, ভাসিলা মাঠ থেকে ৩ টি, শাখারিবাঁক মাঠ থেকে ২ টি, দাশড়া মাঠ থেকে ৬ টি, বিনাই মাঠ থেকে ১ টি, মাটিহাঁস মাঠ থেকে ৩ টি, জালিয়াপাড়া মাঠ থেকে ২ টি, জিয়াপুর মাঠ থেকে ৩ টি, কয়তাহার মাঠ থেকে ৫ টি, বানাইচ মাঠ থেকে ১ টি সহ মোট ৩৩ টি গভীর ও অ-গভীর নলকূপের ট্রান্সফর্মা চুরি হয়েছে।
এছাড়া গভীর ও অ-গভীর নলকূপ থেকে বৈদ্যুতিক মিটার চুরি হয় সেগুলো হচ্ছে তেলাল কুশুমশহর মাঠ থেকে ১ টি, ভাসিলা মাঠ থেকে ১ টি, দেওগ্রামের মাঠ থেকে ১ টি, দৌলতপুর মাঠ থেকে ৩ টি সহ ১৭ টি । উপজেলার আলমপুর গ্রামের কৃষক ও গভীর নলকূপ মালিক মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, পরপর দুইবার তার গভীর নলকূপে ট্রান্সফর্মার ও বৈদ্যুতিক মিটার চুরি হয়েছে।
ট্রান্সফর্মার ফেরৎ পাওয়ার অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু ফেরৎ না পেয়ে অবশেষে প্রথম বার বাহির থেকে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার এবং দ্বিতীয় বার ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা দিয়ে ট্রান্সফর্মা ক্রয় করে স্কীম রক্ষা করছি।
একই গ্রামের গভীর নলকূপের মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, চাঁদাবাজরা মিটার চুরি করে কয়েকদিন পর মিটার ফেরৎ দেওয়ার শর্তে চাঁদা দাবি করে মিটার পাওয়া গেলেও ওই সব মিটার পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে নিয়ে গেলে তারা মিটার পরীক্ষা করতে হবে মর্মে গ্রাহকদের বিভিন্ন তালবাহানা দেয়।
উপজেলা মামুদপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও গভীর নলকূপের মালিক মশিউর রহমান শামীম বলেন, অপরাধ জগতের কতিপয় ব্যক্তি এসবের সঙ্গে জড়িত। এদের ক্ষমতা সুদূর প্রসারী। ঐক্যবদ্ধভাবে এ সব অপরাধ সামাজিকভাবে প্রতিরোধ করা গেলেও এ ব্যাপারে প্রশাসনিক জোড়ালো কোন ভূমিকা নাই। শুধুমাত্র নিরাপত্তাহীনতার কারণে চাঁদাবাজ ও চোরদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে এলাকার গভীর ও অ-গভীর নলকূপের মালিকরা কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, ক্ষেতলাল সাব জোনাল অফিসের এজিএম (ও এন্ড এম) নাজিম হোসাইন বলেন, ট্রান্সফর্মা চুরি হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলেও বৈদ্যুতিক মিটার চুরির তেমন অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
ট্রান্সফর্মার ও বৈদ্যুতিক মিটার চুরি প্রতিরোধে পাহাড়া নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যে উপজেলার আলমপুর ইউপি চত্বরে গভীর ও অ-গভীর নলকূপ মালিকদের নিয়ে সভা করা হয়েছে।
ক্ষেতলাল থানা অফিসার ইনচার্জ রাজিবুল ইসলাম বলেন, গভীর ও অ-গভীর নলকূপের ট্রান্সফর্মা চুরির ঘটনা অনেক আগের। বৈদ্যুতিক মিটার চুরির ব্যাপারে এখনও কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ এলে এসব মালামাল চুরি চক্রের সাথে জড়িতদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৩ | সময়: ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর