রমজানে অতি বিলাসী বিদেশি ফল আমদানি বন্ধ চায় ভোক্তা অধিকার

সানশাইন ডেস্ক: রমজান এলেই বাড়ে দ্রব্যমূল্য। বাজারে তৈরি হয় ভোগ্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট। এর সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা দাম হাঁকান ইচ্ছেমতো। আসন্ন রমজানে ফলের বাজার স্থিতিশীল রাখতে চায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ লক্ষ্যে অতি বিলাসবহুল বিদেশি ফল আমদানি বন্ধ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।
ভোক্তা অধিকার বলছে, বিদেশ থেকে আমদানি করা ড্রাগন, রাম্বুটান, অ্যাভোকাডো ও রকমেলনের মতো বিলাসবহুল ফল সুপারশপ এবং অভিজাত এলাকার ফলের দোকানে অতি উচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে দেশি ফলের বাজারে। পাশাপাশি আপেল, আঙুর ও কমলার মতো বিদেশি ফলের দামও বাড়ছে।
সোমবার ভোক্তা অধিদপ্তরের সভাকক্ষে পাইকারি ও খুচরা ফল ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভায় এ কথা জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিউজ্জামান। তিনি বলেন, গত দেড় মাস আগে রমজানে অতি বিলাসবহুল ফল আমদানি বন্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। এ বৈঠকের পরে আবারও সেটা জানানো হবে। আমরা বলছি, অতি বিলাসবহুল ফল আমদানি আপাতত বন্ধ রাখা যেতে পারে। ভবিষ্যতে দেশে এসব বিদেশি ফল উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কাজ করতে পারে কি না সেটা দেখতেও আমরা সুপারিশ করেছি।
একই সঙ্গে বিদেশি ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে বিদ্যমান শুল্ক কাঠামো পরিবর্তন করার সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে অতি উচ্চদামের বিদেশি ফল আমদানি বন্ধের সুপারিশ করলেও রমজানে প্রয়োজনীয় পাঁচটি ফল খেজুর, মাল্টা, আপেল, কমলা ও আঙুর আমদানিতে সহায়তা দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সফিউজ্জামান বলেন, ফল ব্যবসায়ীরা বলছেন বিদেশি ফল সময়মতো বন্দরে খালাস করা যায় না। সেজন্য তারা অর্থিক ক্ষতিতে পড়েন। সেজন্য আমরা বিদেশি ফল আমদানিতে বন্দরে আটকে থাকার বিষয়টি দেখবো। দ্রুত ফল খালাসের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও এ নিয়ে যোগাগোগ করা হবে।
তিনি ফল ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, প্রয়োজনে ফল বন্দরে আসার আগে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খালাসের জন্য আমাদের তথ্য দিন। আমরা সেটা দেখবো। ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, দেশি ফলে এসব সমস্যা নেই। তারপরও বাজারে ফলের দাম অস্বাভাবিক। কলার হালি ৫০ টাকায় উঠেছে। একটি কলার দাম সাড়ে ১২ টাকা, এটা অস্বাভাবিক! বিদেশি ফলের দামের কারণে এসব বেড়েছে। এটার সমন্বয় দরকার।
তিনি বলেন, গত বছর রমজানে তরমুজ নিয়ে অস্থিরতা হয়েছে। সেখানে আমরা বাজারে সিন্ডিকেট পেয়েছি। তখন ক্ষেতে প্রতি পিস ১০০ টাকার তরমুজ বাজারে এনে ৮০০ টাকায় বিক্রির প্রমাণ মিলেছে। সফিউজ্জামান আরও বলেন, পণ্যের হাত বদলে দাম বাড়ছে। কিন্তু সেটা অস্বাভাবিক। এজন্য বিপণন আইন রয়েছে। তাতে লাভের মাত্রা নিয়ে বলা আছে। এ ধরনের পণ্যে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ লাভ করা যায়। নিত্যপণ্যে সেটা আরও কম। কিন্তু ব্যবসায়ীরা করছেন কয়েকগুণ। রমজানে সেটা আমরা আরও কঠিনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চাই।
ভোক্তার মহাপরিচালক বলেন, রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণ এ দেশের প্রেক্ষাপটে একটি চ্যালেঞ্জের জায়গা। আবার বৈশ্বিক অস্থিরতা পরিস্থিতির মধ্যে সেটা এবার আরও বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সেটা করতে হবে। সবাইকে সহনশীল হতে হবে। ব্যবসায়ীদের কম লাভ করতে হবে। ভোক্তাকেও সহনশীল হতে হবে এখন। মনে রাখবেন রমজান খরচের মাস নয়, সংযমের মাস। তিনি বলেন, আসুন রমজানের কৃচ্ছ্রসাধন ও পবিত্রতা বজায় রাখি। উত্তরা থেকে চকবাজারে এসে ইফতার কেনা বন্ধ করি। এ বছর খারাপ সময় যাচ্ছে। সবাই মিলে চেষ্টা করে এ খারাপ সময় ভালোভাবে পার করবো।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২৩ | সময়: ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ