খুশদিলের ব্যাটিং তাণ্ডবে কুমিল্লার হ্যাটট্রিক জয়

স্পোর্টস ডেস্ক: দুই দলই ২০ ওভারে হারাল ৪টি করে উইকেট। কিন্তু একদলের রান ১৮৪, আরেক দলের ১৫১। দুই দলের এই যে ব্যবধান, তা গড়ে দিলেন আসলে খুশদিল শাহ। ২৪ বলে ৬৪ রানের খুনে ইনিংসে তিনি যেখানে পৌঁছে দিলেন কুমিল্লার স্কোর, সেই রানকে চ্যালেঞ্জ জানাতেও পারল না ঢাকা।
বিপিএলে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে ঢাকা ডমিনেটর্সকে ৩৩ রানে হারাল কুমিল্লা ভিক্টেরিয়ান্স। উইকেট বেশ কিছু হাতে থাকলেও রান তাড়ায় ঢাকা জয়ের সম্ভাবনাও জানাতে পারেনি, কারণ খুশদিল শাহর মতো বিধ্বংসী ইনিংস খেলতে পারেননি তাদের কেউ। সম্মিলিতভাবেও তারা পারেননি দারুণ কিছু করতে।
ম্যাচে প্রথম ভাগে একটা সময় পর্যন্ত রান করতে ভুগছিল কুমিল্লাও। কিন্তু খুশদিল উইকেটে গিয়ে এমন ঝড় তোলেন, তা হয়ে যায় ম্যাচ জয়েরই নিয়ামক। ১৪তম ওভারে উইকেটে গিয়ে তিনি খেলেন ২৬৬.৬৬ স্ট্রাইক রেটে ৬৪ রানের ইনিংস। তার ব্যাটিং তাণ্ডবে শেষ ৬ ওভারে ৯৪ রান তোলে কুমিল্লা। ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়া হয়ে যায় ওখানেই।
কুমিল্লার জয়ে অপরাজিত ফিফটি করেন মোহাম্মদ রিজওয়ানও। তবে গোটা ২০ ওভার ক্রিজে থেকে তিনি অপরাজিত ৫৫ রান করেন ৪৭ বল খেলে। এমনিতে টি-টোয়েন্টির জন্য আদর্শ ইনিংস নয় মোটেও। তবে খুশদিল শাহর ৭ চার ও ৫ ছক্কার ইনিংসটির কারণেই আর রিজওয়ানের ব্যাটিংয়ের ধরন নিয়ে প্রশ্ন জাগছে না।
রান তাড়ায় টপ অর্ডারেই পথ হারিয়ে ফেলা ঢাকার হয়ে পরে ৪৫ বলে ৬৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন অধিনায়ক নাসির হোসেন। তাতে ব্যবধানটাই কেবল একটু ভদ্রস্থ হয়। টানা তিন হার দিয়ে শুরু করা বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা টানা তিন জয়ে উঠে এলো পয়েন্ট তালিকার তিনে। জয় দিয়ে আসর শুরুর পর টানা চার ম্যাচ হারল ঢাকা। তারা এখন টেবিলের তলানিতে। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে কুমিল্লা বড় ধাক্কা খায় শুরুতেই। আগের দুই জয়ের ম্যান অব দা ম্যাচ লিটন কুমার দাস শূন্য রানে ফেরেন ম্যাচের দ্বিতীয় বলেই। তাসকিন আহমেদের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে থার্ড ম্যানে ধরা পড়েন তিনি।
তিনে নেমে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করেন ইমরুল কায়েস। তাসকিনের পরের ওভারে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে বিশাল ছক্কা মারেন কুমিল্লা অধিনায়ক। দুই বল পর হাফ ভলিতে কভার ড্রাইভ করে বল সীমানায় পাঠান তিনি। পরের ওভারে নাসির হোসেনকে ছক্কায় ওড়ান মোহাম্মদ রিজওয়ান।
পঞ্চম ওভারে আফগান স্পিনার আমির হামজাকে তিন বলের মধ্যে চার ও ছয় মারেন ইমরুল। কিন্তু দারুণ শুরু করেও বড় কিছুর করতে ব্যর্থ কুমিল্লা অধিনায়ক। অষ্টম ওভারে নাসিরের বলে ইনসাইড আউট খেলতে গিয়ে ডিপ কভারে রবিন দাসের হাতে ধরা পড়েন তিনি। ৩ চার ও ২ ছয়ে ২৬ বলে করেন ৩৩ রান।
এরপর জনসন চার্লসও বেশি কিছু করতে পারেননি। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে ফেরার আগে ১৯ বলে করেন ২০ রান। এর আগের ওভারে পয়েন্টে রিজওয়ানের ক্যাচ ছেড়ে দেন রবিন। শেষ পর্যন্ত আর রিজওয়ানকে আউট করতে পারেনি ঢাকা। কুমিল্লার ইনিংসের বাকি গল্প জুড়ে খুশদিল। সপ্তম বলে প্রথম ছয় বলে কোনো বাউন্ডারি মারতে পারেননি তিনি। ১৬তম ওভারে হামজাকে পেয়ে রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ৩ চারের সঙ্গে ২ ছয়ে ওই ওভারে আসে ২৯ রান।
মুক্তার আলির পরের ওভারে ২ চার ও ১ ছয়ে নেন ২০ রান। পরের ওভারে তিনি মোহাম্মদ ইমরানকে মারেন টানা তিন চার। ওই ওভারের প্রথম চারে স্রেফ ১৮ বলে ফিফটি পূরণ হয় খুশদিলের। বিপিএলের এবারের আসরে দ্রুততম ফিফটি এটি। ১৯তম ওভারের শেষ বলে সৌম্য সরকারের স্লোয়ারে এলবিডব্লিউ হন খুশদিল। তার বিদায়ে ভাঙে রিজওয়ানের সঙ্গে গড়া ৩৬ বলে ৮৪ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি।
শেষ ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি মেরে ফিফটি পূরণ করেন রিজওয়ান। বিপিএলে প্রথম ও সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তার ৫০তম ফিফটি এটি। একসময় যে দলের দেড়শ হওয়া নিয়েই ছিল টানাটানি, সেই দল শেষ পর্যন্ত পেরিয়ে যায় ১৮২। ঢাকার হয়ে ৪ ওভারে রান দেওয়ার হাফসেঞ্চুরি করে ফেলেন আমির হামজা হোতাক। লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেন ২ ওভারে ১৭ রান দেওয়ার পর আর বোলিং পাননি।
ধুঁকতে থাকা ঢাকার জন্য রান তাড়ায় এই ম্যাচ জমিয়ে তোলাও ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। অভাবনীয় কিছু তারা করতেও পারেননি। শুরুতেই তারা হারায় সৌম্য সরকারের উইকেট। দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে রানের খাতা খোলার আগেই ফেরেন সৌম্য। আগের ম্যাচেও শূন্য রানে আউট হন তিনি। এখন পর্যন্ত চলতি বিপিএলের পাঁচ ম্যাচে তার সংগ্রহ মোটে ২৬ রান। এক ওভার পর তানভির ইসলামের বলে স্টাম্পড হন রবিন দাস। সৌম্যর মতো তিনিও পরপর দুই ম্যাচে ফেরেন শূন্য রানে।
ঢাকার বিপদ আরও বাড়ে পাওয়ার প্লে শেষ হতেই আহমেদ শেহজাদ রানআউট হলে। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট থেকে সরাসরি থ্রোয়ে স্বদেশি ব্যাটসম্যানের বিদায় নিশ্চিত করেন খুশদিল। শেহজাদ ৩ চারে ১৭ বলে করেন ১৯ রান। ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে একরকম ছিটকেই যায় ঢাকা। এরপর জুটি হয়েছে, রান এসেছে। কিন্তু ম্যাচে উত্তেজনা খুব একটা ফেরেনি।
চতুর্থ উইকেটে ৫১ রানের জুটি গড়েন নাসির ও মোহাম্মদ মিঠুন। দুজনের ৭ ওভারের জুটিতে বাড়েনি রানের গতি। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে মিঠুন আউট হন ৩৪ বলে ৩৬ রান করে। তখনও জয়ের জন্য ৪১ বলে ১০০ রান করতে হতো ঢাকার। আরিফুল হকের সঙ্গে নাসিরের ৬৬ রানের উদ্বোধনী জুটিটি তাদের পরাজয়ের ব্যবধানই শুধু কমায়।
ছন্দে থাকা নাসির ৩৬ বলে করেন এবারের আসরে নিজের প্রথম ফিফটি। এবারের আসরে পাঁচ ম্যাচেই তার ব্যাট থেকে এলো ত্রিশোর্ধ্ব রানের ইনিংস। শেষ পর্যন্ত ৭ চার ও ২ ছয়ে ৪৫ বলে ৬৬ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। আরিফুল ১৭ বলে করেন ২৪ রান। আসরজুড়ে দারুণ বোলিং করতে থাকা বাঁহাতি স্পিনার তানভির এই ম্যাচেও ৪ ওভারে স্রেফ ১২ রান খরচায় নেন ১ উইকেট।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ২০, ২০২৩ | সময়: ৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ