সর্বশেষ সংবাদ :

হুমকির মুখে বোরো চাষ অবৈধ পুকুর খননের মহাযজ্ঞ থামছে না

স্টাফ রিপোর্টার : প্রশাসনের উদাসিনতায় রাজশাহীর তানোর ও পুঠিয়ায় জোর করে কৃষকদের জমিতে চলছে অবৈধভাবে পুকুর খননের মহোৎসব। জোর করে কৃষকের ফসলি জমি নাশ করে একরের পর একর জমি কৃষকদের হাতছাড়া হলেও রহস্যজনক কারণে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করে চলেছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন রাজশাহীর তানোর ও পুঠিয়া উপজেলার কৃষকরা। তবে প্রশাসন বলছে রাতের বেলা পুকুর খনন হচ্ছে। তাই রাতে পুকুর খনন বন্ধে অভিযান পারিচালনা করা যাচ্ছে না।
কৃষকদের অভিযোগে জানা যায়, জেলার তানোর উপজেলার প্রভাবশালীদের অবৈধ পুকুর খননের কারণে বোরো চাষাবাদ হুমকির মুখে পড়েছে। উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের অন্তত ৫০ জন কৃষক বীজতলা তৈরী করেও জমিতে চারা রোপন করতে পারছেন না। তারা ডিসি ও ইউএনও অফিসে ধর্না দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছে না।
কৃষকরা বলেন, বীজতলা নস্ট করে তানোরে হাতিশাইল গ্রামে প্রভাবশালী আব্দুল মান্নানের ছেলে মৃদুলসহ কয়েকজন ৪০ বিঘা জমিতে পুকুর খনন শুরু করেছে। এ নিয়ে কৃষকরা উপজেলা প্রশাসনে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।
উপজেলার হাতিশাইল, কামারগাঁ এবং সমাসপুর গ্রামের ৪০ জন কৃষক জমি রক্ষার দাবিতে সম্প্রতি তানোর থানা, উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সর্বশেষ রবিবার তারা বিষয়টি রাজশাহী জেলা প্রশাসককেও অবহিত করেছেন।
কৃষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সজেমিন গিয়ে দেখা যায়, হাতিশাইল মৌজায় যেখানে পুকুর খনন হচ্ছে তার মাঝখানে কমপক্ষে পাঁচজন কৃষকের বোরোর বীজতলায় চারা রয়েছে। আর যেখানে পুকুরের মাটি দিয়ে স্তুপ করা হচ্ছে তার আশেপাশে কমপক্ষে অর্ধশত কৃষক বীজতলা করে বোরো চাষের প্রস্ততি নিচ্ছে। সেখানে পুকুর খনন শুরু হওয়ায় শুধু অর্ধশত কৃষকের জমিই যে ক্ষতি হচ্ছে তাও নয়, এ পুকুরের পাড়ের জন্য এ মৌজার প্রায় ৫০০ বিঘান জমিতে ফসলহানীর উপক্রম হয়েছে।
হাতিশাইল গ্রামের ভুক্তভোগী কৃষক জামাল উদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন ও রেজাউল এবং সমাসপুর গ্রামে অনিল বিশ্বাস বলেন, প্রভাবশালী মান্নান ও তার ছেলে মৃদুল জোর করে ড্রেজার মেশিন দিয়ে পুকুর খনন শুরু করেছেন তাদের জমিতে। বাধা দিতে গেলে তারা বলছেন, পুকুর খনন হচ্ছে- পরে ফসলের বদলে লিজ হিসাবে টাকা দেয়া হবে। কৃষকরা তা মানতে রাজি হয়নি। তবুও জোর করে খনন অবহ্যত রেখেছে।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন কৃষক এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পুকুর খনন না করতে নোটিশ দিয়েছে। গত ৫ জানুয়ারি শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইউএনও পুকুর খনন বন্ধে নোটিশ করার পর এখন দিনের বেলার পরিবর্তে রাতের বেলায় একাধিক মেশিন দিয়ে খনন চলছে।
তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পংকজ চন্দ্রঁ দেবনাথ বলেন, ফসলী জমিতে পুকুর খনন করতে পারবেনা কেউ। কৃষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন এখন শুনছি রাতের বেলা পুকুর খনন করা হচ্ছে।
এদিকে রাজশাহীর পুঠিয়ায় পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে ‘বিশেষ সমঝোতায়’ রাতের আধাঁরে আবাদি জমিতে পুকুর খনন করে মাটি বহন চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব পুকুরের মাটি বহনকারী ট্রাক্টরের কারণে গ্রামের সড়কগুলো ধ্বংস হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি উপজেলার জিউপাড়া ইউনিয়নের গাইনপাড়ায় একই স্থানে ৬টি ও কার্তিকপাড়ার কাছে পুঠিয়া ও দুর্গাপুর উপজেলা সীমান্তে ২টি পুকুর খননের কাজ চলছে। আর পুকুরগুলো খনন করছেন ফারুক হোসেন নামের একজন ঠিকাদার।
জিউপাড়া এলাকার চাষি শাহাবাজ উদ্দীন বলেন, কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি গাইনপাড়ায় গ্রামে একই স্থানে প্রায় ৮০ বিঘা ফসলি জমিতে ৬টি পুকুর খনন করছেন। বিষয়টি বিভিন্ন দপ্তরে জানিয়েছি। তবে রহস্যজনক কারণে এর কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাই মোহাস্মদ আনাছ বলেন, পুকুর খনন বন্ধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছেন। যেখানে ফসলি জমিতে পুকুর খনন হবে সেখানেই জেল জরিমানা দেয়া হচ্ছে।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২৩ | সময়: ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর