স্ত্রীর মৃত্যুর পরদিনই পদ্মায় মিলল ব্যাংক কর্মকর্তা স্বামীর লাশ

স্টাফ রিপোর্টার, গোদাগাড়ী: বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অলরাউন্ডার সানজামুল ইসলামের ভগ্নিপতি সালাহউদ্দিন কাদের রূপনের (৩৮) লাশও উদ্ধার হয়েছে। শনিবার বেলা ১১টার দিকে পদ্মা নদীতে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। আগের দিন শুক্রবার দুপুরে স্ত্রীকে বাঁচাতে গিয়ে ডুবে যান রূপন।
ডুবে যাওয়ার সময় রূপন তার স্ত্রী মানজুরি তানভীর নিশির (৩২) কাছে গিয়ে নৌকার মাঝিকে ধরিয়ে দেন। নৌকার মাঝি সানজামুলের বোন নিশিকে তুলে আনেন। তবে রূপন নিজে উঠতে পারেননি। নিশিকে উদ্ধারের পর প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু তাকে বাঁচানো যায়নি।
রূপনের বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌরসভার শ্রীমন্তপুর মহল্লায়। তিনি উত্তরা ব্যাংকের কিশোরগঞ্জের একটি শাখার ব্যবস্থাপক ছিলেন। ক্রিকেটার সানজামুল হকের বাড়িও গোদাগাড়ী উপজেলা সদরে। সানজামুলরা মোট আট ভাই। তাদের একমাত্র বোন ছিলেন নিশি। তিনি সবার ছোট। সানজামুল হকের এক ভাই কানাডায় থাকেন। অন্য সবাই থাকেন দেশে।
শুক্রবার দুপুরে সাত ভাইয়ের পরিবার এবং রূপনের পরিবারের সদস্যরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বালুগ্রাম নারায়ণপুর এলাকায় পদ্মা নদীর মাঝের একটি চরে পারিবারিক পিকনিক করতে যান। দুটি নৌকা ডেকোরেটর দিয়ে সাজিয়ে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ জন গিয়েছিলেন পিকনিকে।
দুপুরে বাবুর্চি যখন রান্না করছিলেন, তখন কেউ কেউ নদীতে গোসলে নামেন। এ সময় রূপন নিশির বড় ভাই শামিমকে ডাক দিয়ে বলেন, ‘ভাইয়া বাঁচান, নিশি ডুবে যাচ্ছে, আমিও যাচ্ছি।’ এরপর রূপন তার স্ত্রীকে মাঝিকে ধরিয়ে দেন। কিন্তু তিনি নিজে উঠতে পারেননি।
ক্রিকেটার সানজামুলের ভাষ্যমতে, কম পানিতে সবাই গোসলে নামলেও পাশেই খাদ ছিল। সেটা কেউ বুঝতে পারেনি। একই সময়ে রূপনের বোন রিতাও ডুবে যাচ্ছিলেন। তিনি নিজে রিতাকে বাঁচিয়েছেন। রিতার সঙ্গে আবার সানজামুলের এক ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের গোদাগাড়ী সদর স্টেশনের সাব অফিসার নমির উদ্দিন জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল অভিযান চালিয়েও রূপনকে উদ্ধার করতে পারেনি। শনিবার সকাল থেকে আবার অভিযান শুরু হয়। এছাড়া আত্মীয়-স্বজনেরাও নদীতে বড় বড় বড়শি ফেলে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছিলেন। ঘটনাস্থল থেকে খুব কাছেই বড়শিতে রূপনের লাশ বাধে। এরপর তা উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে আসা হয়।
ক্রিকেটার সানজামুল ইসলাম জানান, শুক্রবার তার বোনের মরদেহ রামেক হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় গোদাগাড়ী সদরের ফাজিলপুর কবরস্থানে বোন ও ভগ্নিপতির জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দুজনকে পাশাপাশি দাফন করা হয়।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৫, ২০২২ | সময়: ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ