রাজশাহীতে ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর : ট্রেনের বগিতে বাংলাদেশের ইতিহাস

স্টাফ রিপোর্টার : স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় শুধু শুধু বসে না থেকে বগি ঘুরে দেখে ফেলতে পারবেন বাংলাদেশের ইতিহাস। বগিতে রয়েছে ১৯২০ থেকে ১৯৭৫ সালের ঘটে যাওয়া ঘটনার চিত্র। ভ্রাম্যমাণ এই রেল জাদুঘরের গ্যালারিতে ভিডিও ও অডিও সিস্টেমে সম্প্রচার হচ্ছে বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের নানা দিক, ভাষা আন্দোলন, ৬ দফা, ৬৯-এর গণ আন্দোলন, ৭০-এর নির্বাচন, স্বাধীনতার ঘোষণা, মুজিবনগর সরকার, মুক্তিযুদ্ধ ও ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয়ের নানা ইতিহাস নিয়ে সাজানো হয়েছে বগিটি।
এই ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরটি রাজশাহীতে এসেছে ১৬ ডিসেম্বর। থাকবে আগামী ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এটি এর আগে দেশের ১৭টি স্টেশনে ঘুরে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে এসেছে। এখানে ৯ দিন থাকার পরে ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরটি অন্য স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হবে কর্তৃপক্ষ জানায়।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের এক নম্বর প্লার্টফমে ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরটি দেখা যায়। অনেকেই আসছেন ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরটি দেখতে। এছাড়া প্রচারের লক্ষ্যে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষ স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের যাত্রীদের উদ্দেশে জাদুঘরটির বিষয়ে ঘোষণা দিচ্ছেন। অন্য ট্রেনের যাত্রীরা দেখতে আসছেন ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরটি। অনেকেই প্ল্যাটফর্মে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকার সময়টুকু কাটাচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর ঘুরে। কিছুক্ষণ পরপর ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরটির বিষয়ে। এটি প্রতিদিন খোলা থাকছে সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত। আবার দুপুরের বিরতির পর বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা কোনো ফি ছাড়াই এই জাদুঘর ঘুরে দেখতে পারছেন।
জাদুঘরটিতে জয়বাংলা স্লোগানের আদলে তৈরি করা সৃজনশীল একটি বুক সেলফ। সেখানে বঙ্গবন্ধুর ওপর রচিত ৬২টি বই রয়েছে। বুক সেলফের দুই পাশেই বঙ্গবন্ধুর হাতে লেখা ৬টি চিঠি রয়েছে। অপর প্রান্তে বড় এলইডি মনিটরে ৭ মার্চের ভাষণসহ বঙ্গবন্ধুর গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ, থিম সং ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত গান প্রচারিত হয়। এলইডি মনিটরের পাশেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভের প্রকাশিত সংবাদ পত্রের অংশ বিশেষ। এছাড়া রয়েছে বঙ্গবন্ধুর পৈত্রিক বাড়ির ছবি, ব্যবহৃত চশমা, দলের প্রতীক নৌকা, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার, বঙ্গবন্ধুর তামাক পাইপ, মুজিব কোট, মুজিব শতবর্ষের লোগো, বঙ্গবন্ধুর লেখা বই, মুজিবনগর স্মৃতিস্তম্ভ, পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণ, জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধের রেপ্লিকার প্রতিচ্ছবি ।
পার্বতীপুর থেকে রাজশাহীতে আসা আবদুর রশিদ জানান, দেখে অনেক ভালো লাগছে। এটি ট্রেনের একটি বগি হলেও এখানে পুরো বাংলাদেশ আছে। বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যর সবই রয়েছে। এখানে আসলে দেশ ও মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাস জানা যাবে। এখানে সবচেয়ে বেশ ভালো লাগেছে ডিজিটাল মনিটরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিষয়ক ভিডিও চিত্র। হেডফোন দিয়ে শোনা যাচ্ছে অডিও সম্প্রচার। পরিবারের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে এসেছি। তারাও অনেক কিছু জানতে পারছেন।
রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী সাইদুর রহমানসহ চার বন্ধু মিলে ঘুরতে এসেছেন এ জাদুঘরে। তারা জানান, খুব ভালো লাগছে, তবে দুইটা বগি হলে ভালো হত। অনেক লোক আসছে জাদুঘরের ভেতরে। এখানে অনেক কিছু রয়েছে। সেগুলো আমরা পাঠ্যবইয়ে পড়েছি। অনেক কিছু পড়ার বাইরে থাকে সেগুলো এখানে এসে দেখেছি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানা গেলো।
বেসরকারি চাকরিজীবী সজিবুল ইসলাম বলেন, প্ল্যাটফর্মে এসে বসে ছিলাম। অনেককেই আসতে দেখলাম এ দিকে। পরে জানতে পারি এখানে ট্রেনের ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর অবস্থান করছে। জাদুঘর ঘুরে দেখলাম ভিডিও অডিওর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণসহ মুক্তিযুদ্ধের নানান দিক দেখানো হচ্ছে। উদ্যোগটি ভালো। এখান থেকে শিশু শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু জানতে পারবে।
ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরের তত্ত্বাবধানে থাকা কর্মকতা পলাশ হোসেন জানান, ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরটি উদ্বোধনের পরে যাত্রা শুরু করে বিভিন্ন স্টেশনে। নির্ধারিত সিডিউল অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন স্টেশনে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই জাদুঘর। ১৭টি স্টেশন ঘুরে রাজশাহীতে এসেছে ১৬ ডিসেম্বর। ২২ ডিসেম্বর অবস্থানের শেষ দিন থাকলেও আরও ২দিন বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে আগামী শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) পর্যন্ত রাজশাহীতে অবস্থান করবে এই ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরটি।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৩, ২০২২ | সময়: ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ