স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দূর করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা বলেন, তিনি তাই করেন। তিনি বলেছিলেন দেশকে ডিজিটাল করবেন, ডিজিটাল করেছেন। এখন তিনি বলছেন ২০৪১ সালে মধ্যে ডিজিটাল দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে তুলবেন, সেজন্য দেশ থেকে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দূর করতে হবে। আমি বিশ^াস করি ২০৪১ সালের আগে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশে পৌঁছে যাব, কারণ বর্তমান প্রজন্ম অনেক মেধাবী।
বুধবার বিকালে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ^র সরকারি কলেজ মাঠে জেলা পুলিশ কর্তৃক আয়োজিত মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। আজকে পুঠিয়ার বানেশ^র সরকারি কলেজ মাঠের এই বিশাল সমাবেশে হাজার হাজার মানুষের ঢল বলে দেয়Ñ এটা হয়ে যাবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ অনেকটাই দূর করেছি, এখন মাদক দূর করতে হবে।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, হেরোইন, ইয়াবা যে পরিবারের সদস্য সেবন করেছে সে পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। ছেলে-মেয়ে কি করছে সে খোজ খবর যদি পিতা-মাতা না রাখে তা হলে মাদক নির্মূল করা সম্ভব না, এজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
পুলিশ বাহিনি মানবতার পুলিশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, করোনাকালীন হাসপাতালে যেখানে ছেলে, মেয়ে বাবা-মাকে রেখে পালিয়ে গেছে, তখন পুলিশ গিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলেও পুলিশ বাহিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এ সময় তিনি সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন।
রাজশাহী রেঞ্জের জিআইজি মোঃ আব্দুল বাতেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহ্রিয়ার আলম, সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মনসুর রহমান, বাংলাদেশ পুলিশের আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ দারা প্রমুখ বক্তৃতা করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন।
অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য মোঃ আয়েন উদ্দিন, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের সদস্য আদিবা আনজুম মিতা, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ আবু হাসান মোহাম্মদ তারিক, আরএমপি’র কমিশনার মোঃ আবু কালাম সিদ্দিক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাঘা : বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, দেশের প্রতিটি বাহিনী অত্যন্তÍ সততা ও দক্ষতার সাথে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশ আনসার বাহিনী অন্যতম। বিশেষ করে তৃণমুল পর্যায়ে এদের ভূমিকা অতুলনীয়।
বুধবার সকালে বাঘা উপজেলা আনসার ও ভিডিপির নবনির্মিত মডেল কার্যালয় ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসাবে তার সঙ্গে ছিলেন রাজশাহীর চারঘাট-বাঘা থেকে তিন তিনবার নির্বাচিত সাংসদ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহা-পরিচালক মেজর জেনারেল নাজমুল হাসান। তিনি দেশের শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা সহ সকল কর্মক্ষেত্রে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি প্রশংসার দাবিদার বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলেও অভিমত প্রকাশ করেন।
প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, দেশের ক্রান্তি লগ্নে ১৯১৩-১৪ সালের দিকে একটি অপশক্তি বাস-ট্রাক পোড়ানো সহ বিভিন্ন স্থানে অরাজকতা ও অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছিল।
এ সময় আনসার বাহিনীর মাঝে আমরা যে দেশপ্রেম দেখেছি তা মনে রাখার মতো। তিনি বর্তমান সরকারের উন্নয়নকে গতিশীল করার জন্য সকল বাহিনীর প্রতি উদাত্ত আহবান জানান এবং বিজয় দিবসের এই মাসে মহান স্বাধীনার জন্য জীবন উৎসর্গকারি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন।
এর আগে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, এই মহুর্তে সারাদেশে আনসার ও ভিডিপি বাহিনীর জন্য ২২ টি নতুন দ্বিতল ভবন তৈরীর প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এ দিক থেকে ৯ টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে গত বুধবার প্রথম রাজশাহীর বাঘা এবং তানোর উপজেলায় এ ভবন উদ্বোধন হওয়ায় আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সহ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে প্রায় ৭ লক্ষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত আনসার বাহিনী রয়েছে। এরা দীর্ঘ চার যুগের বেশি সময় ধরে নির্বাচন এবং পূজায় ডিউটি সহ দেশের সকল মহামারি এবং দুর্যোগে মোকাবেলায় কাজ করে যাচ্ছে। এই বাহিনীকে ভবন নির্মাণের জায়গা করে দেয়ায় আমি বাঘা উপজেলা পরিষদকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
এ সময় ছিলেন সংরক্ষিত আসনের সাংসদ আদিবা অনজুম মিতা, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল বাতেন (বিপিএম.পিপিএম-বার) রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার মাসুদ হোসেন (পিপিএম), বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. লায়েব উদ্দিন লাভলু, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আমানুল হাসান দুদু ও রাজশাহী জেলা নির্বাহী প্রকৌশালী মনসুরুল ইসলাম।
এ ছাড়াও ছিলেন বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আখতার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল, বাঘা থানা অফিসার ইনচার্জ সাজ্জাদ হোসেন ও আনছার ভিডিবি অফিসার মিলন কুমার দাস সহ বাঘা উপজেলা আওয়ামী এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা এবং বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান কর্মকর্তারা। অতিথিরা আনছার-ভিডিপি অফিস চত্বরে একটি করে বৃক্ষ রোপন করেন।
জেলা পুলিশ লাইন্স : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান, এমপি বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। তাঁর ডাকে সকল ধর্মের মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন করেছে। আজকের বাংলাদেশের মাটি মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সবার রক্তে রঞ্জিত।
বুধবার দুপুরে রাজশাহী পুলিশ লাইন্সে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বাধীনতা এমনি-এমনি আসেনি, এর পেছনে দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। পাকিস্তানিদের দুর্বিষহ অত্যাচার-নির্যাতন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে আমরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। আমরা তখন পরিবার-পরিজন নিয়ে চিন্তা করিনি, নিজের জীবন নিয়ে ভাবিনি, আমাদের একটাই চিন্তা ছিল- দেশ স্বাধীন করতে হবে। সেই সময়টা আমাদের জন্য অনেক কঠিন ছিল। আমরা পায়ে হেঁটে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় দূর-দুরান্তে খবর পৌঁছে দিয়েছি। এজন্য অনেক সময় অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আজকের প্রজন্ম বিশ্বাসই করতে পারে না, তরুণ প্রজন্মকে এসব জানাতে হবে।
একটা সময় আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হয়েছে উল্লেখ করে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির পাতা থেকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে- কীভাবে আমরা যুদ্ধ করেছি, কোথা থেকে সাহায্য পেয়েছি। তিনি বলেন, আমাদেরকে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে – আমরা যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে পতাকা উড়তে দেখেছি এবং ইতিহাস বিকৃত হতে দেখেছি। মুক্তিযোদ্ধারা তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে না ধরলে তাদের অনেক কিছু অজানা থেকে যাবে।
তরুণ প্রজন্মকে একটি সুন্দর কলঙ্কমুক্ত দেশ উপহার দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি, যতটুকু কলঙ্কিত ইতিহাস ছিল, সেটুকু ধুয়ে-মুছে নতুন প্রজন্মকে একটি সুন্দর দেশ উপহার দিতে চাই। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন এদেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না, সবাই শিক্ষা পাবে, স্বাস্থ্যসেবা পাবে। আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহহীনকে গৃহ নির্মাণ করে দিচ্ছেন, শিক্ষার জন্য যা কিছু প্রয়োজন তাই করছেন। স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন- যার কারণে কোভিড টিকাদানে বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম হয়েছে।
শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা এখন আকাশ্চুম্বী মন্তব্য করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যতদিন থাকবেন, ততদিন বাংলাদেশ আলোকিত থাকবে। তাঁর আমলে বাংলাদেশ ডিজিটাল দেশে রূপান্তরিত হয়েছে; এখন স্মার্ট বাংলাদেশ হবে। এ সময় জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য কামনা করে তিনি বলেন, এবারের অনুষ্ঠানটি একটু ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। এবার তাঁদের শুধু সংবর্ধনা নয়, পাশাপাশি স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রেখে পুলিশের পক্ষ থেকে মাসব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য তিনি বাংলাদেশ পুলিশকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ আব্দুল বাতেন স্বাগত বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশের আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন, বিভাগীয় কমিশনার জি এস এম জাফরউল্লাহ্, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা অনীল কুমার সরকার বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ আবু হাসান মোহাম্মদ তারিক, আরএমপি’র কমিশনার মোঃ আবু কালাম সিদ্দিক, জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল, পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জিনাতুন নেসা তালুকদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আব্দুল হাদী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান, জেলার মুক্তিযোদ্ধাগণ, প্রশাসন ও বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শারীরিক সুস্থতার লক্ষ্যে মাসব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচির উদ্বোধন শেষে বিভিন্ন চিকিৎসাসেবা কর্নার পরিদর্শন করেন।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২২, ২০২২ | সময়: ৬:৫০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ