দুর্গাপুরে সংবাদের প্রতিবাদে মানববন্ধনে মুক্তিযোদ্ধারা

স্টাফ রিপোর্টার, দুর্গাপুর: মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে মানহানিকর মিথ্যা সংবাদ প্রচারের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিল। একই সাথে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রচারে সহযোগিতা করা ষড়যন্ত্রকারীকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবিও জানান মুক্তিযোদ্ধা নেতারা।
শুক্রবার সকাল ১১ টায় দুর্গাপুর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে এই মানববন্ধন করে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিল।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন দুর্গাপুর উপজেলার ডেপুটি কমান্ডার ছিলাম আমি। মুক্তিযোদ্ধাদের পারিবারিক অবস্থা কার কেমন সেটা আমি ভালো করেই জানি। সুতরাং বীর নিবাস নিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ নাই।
মানববন্ধনে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা তাদের বক্তব্যে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার স্বরুপ নিবাস নামে একটি আবাসন প্রকল্প নেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে এই উপজেলা থেকে ১২ জন মুক্তিযোদ্ধার তালিকা চাওয়া হয়। পরবর্তীতে সকল মুক্তিযোদ্ধাকে ডেকে সকলের মতামতের ভিত্তিতে ১২ জনের নাম পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ১ম ফেইজে ৯ জন মুক্তিযোদ্ধার নামে বীর নিবাস বরাদ্দ দেয়া হয়।
একই সাথে জানানো হয় পরবর্তীতে বাকি ৩ জন মুক্তিযোদ্ধাকেও বীর নিবাস দেয়া হবে। এছাড়া পর্যায়ক্রমে সকল অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বীর নিবাস দেয়া হবে।
মুক্তিযোদ্ধার নাম বাদ পড়া প্রসঙ্গে তারা বলেন, ১২ জনের মধ্যে থেকে প্রথম ধাপে কোন ৯ জনকে বীর নিবাস দেয়া হবে সে বিষয়টি সকল মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি বসে নির্ধারণ করে দিয়েছে। প্রথম ধাপে ১২ জনের নাম বাছাইয়ের সময় সকল মুক্তিযোদ্ধাকে ডাকা হয়। পরবর্তীতে প্রথম ধাপের ৯ জন মুক্তিযোদ্ধা নির্বাচনে সকল মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের ওয়ারিশদেরকে কে ডাকা হয়। প্রত্যেকের অবস্থা যাচাইয়ের জন্য ট্যাগ অফিসার নিযুক্ত করা হয়। যারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের পারিবারিক ও আর্থিক অবস্থা যাচাই করেন।
পরবর্তীতে সভা আহ্বান করে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট বীর নিবাস বরাদ্দের বিষয়টি উপস্থাপন করলে সভায় উপস্থিত সকল মুক্তিযোদ্ধা সর্বসম্মতিক্রমে প্রথম ধাপের জন্য ৯ জন মুক্তিযোদ্ধার নামের তালিকা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে দাখিল করেন। সভায় আনিত সিদ্ধান্ত মোতাবেক মোতাবেক রেজুলেশন করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠান উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যারা প্রকৃত বীর নিবাস পাওয়ার যোগ্য তাদের নামেই দেয়া হয়েছে দাবি করে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বক্তব্যে বলেন, একশ্রেণির ষড়যন্ত্রকারী ও স্বার্থন্বেষী কুচক্রী মহল সাংবাদিকদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির পাঁয়তারা সহ আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ছড়ানোর চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাদ পড়া ৩ মুক্তিযোদ্ধার পারিবারিক অবস্থা তুলনামূলক ভালো। বিধায় দ্বিতীয় ধাপের জন্য তাদের নির্বাচন করা হয়। তাদের বাড়ির জন্য ইতিমধ্যে দুইবার মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পত্র দেয়া হয়েছে।
সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা. মনসুর রহমান বাদপড়া ৩ জনের বাড়ির জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবা বরাবর ডিও লেটার প্রদান করেছেন। এতো কিছুর পরও যারা বীর নিবাস পেলেন সে সকল অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জোর করে সচ্ছল বানাতে চান কারা? নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য যারা এরকম কাজ করে তাদের সবার স্বার্থ ভেবে দেখা এবং সরকারকে সহযোগিতা করা উচিত।
সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে ষড়যন্ত্রমূলক, মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট সংবাদের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন মানববন্ধনে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধারা।
মানববন্ধনে ছিলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মুক্তিযুদ্ধকালীন ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান ফিরোজ, দুর্গাপুর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ, উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা হযরত আলী মাস্টার, জনাব আলী মাস্টার মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের উপজেলা শাখার আহব্বায়ক সেলিম রেজা ও সদস্য সচিব বিধান চন্দ্র সহ প্রায় ২০ জন মুক্তিযোদ্ধা।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২২ | সময়: ৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ