সর্বশেষ সংবাদ :

কেশরহাটের ৪ কাউন্সিলের বিরুদ্ধে মামলা করে নিরাপত্তাহীনতায় বাদি

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌরসভার চার কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ডাকাতি মামলা করে হুমকিতে রয়েছেন বাদি। কেশরহাট বাজারের এফজে এন্টারপ্রাইজ নামের একটি মোটরসাইকেল শোরুমের ম্যানেজার মাহমুদ ইসলাম এ মামলা করেছেন।
মামলায় চার কাউন্সিলরসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে ১০ জনকে আসামী করা হয়েছে। বাকি পাঁচজন অজ্ঞাত আসামী। এই মামলা তুলে নিতে বুধবার রাতে হলদাগাছি গ্রামে তিনজন আসামী মাহমুদকে হুমকি দেয়। মামলা তুলে না নিলে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়া হয় বলে বৃহস্পতিবার নিজের নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন মাহমুদ।
মামলার এজাহারভূক্ত আসামীরা হলেন, পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাবের আলী, ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাবুল হোসেন, ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসলাম হোসেন, ১ নং ওয়ার্ডের একরামুল হক ও কাউন্সিলর সাবের আলীর সহকারি কোরবান আলী।
এদের মধ্যে বাবুল হোসেন পৌরসভা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। আর সাবের আলী জেলা যুবলীগের সহসাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি বিএনপি ছেড়ে যুবলীগে যোগদান করেন।
মামলা ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ অক্টোবর কেশরহাট বাজারের এফজে এন্টারপ্রাইজের মোটরসাইকেল শোরুমের ম্যানেজার মাহমুদ ইসলাম শোরুমের হিসাব-নিকাশ শেষ করে রাত পৌনে ১০টার দিকে বাড়ি ফিরছিলেন। শোরুম থেকে বের হয়ে প্রায় ১০০ গজ দুরে ব্রীজের উপর পৌঁছালে চার কাউন্সিলর ও তার লোকজন পথ রোধ করে পিস্তল ধরে চাঁদা দাবি করে। দিতে অস্বীকার করলে তাকে পিটিয়ে জখম করে তার কাছ থেকে ১৭ লাখ ৩০ হাজার টাকার ব্যাগ কেড়ে নেয়। পরে তার শোরুমের কর্মচারিরা মাহমুদকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
এ ঘটনার পরের দিন ৩০ অক্টোবর এফজে এন্টারপ্রাইজের মালিক জামাল হোসেকেও হুমকি দেয় ওই কাউন্সিলররা। এ ঘটনায় ওই দিন তিনি মোহনপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করেন। এছাড়াও এ ঘটনার একদিন পর রাতে আধারে চার কাউন্সিলের লোকজন কেশরহাট বাজারের জামাল হোসেনের নির্মাণধীন ভবনে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করে। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলাও করে জামাল হোসেন। এর পর চিকিৎসা শেষে গত ১ ডিসেম্বর মাহমুদ হোসেন আদালতে চার কাউন্সিলরসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মাহমুদ ইসলাম বলেন, আমি শোরুমের টাকা নিয়ে রাতে বাড়ি ফিরার পথে চারজন কাউন্সিলর তার লোকজন নিয়ে আমার পথ রোধ করে এবং বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে টাকার ব্যাগ কেড়ে নেয়। এ সময় তারা আমাকে মারপিট করে জখম করে রাস্তার উপর ফেলে দেয়। আমি চিকিৎসা শেষে আদালতে মামলা দায়ের করেছি। এখন তারা এলাকায় প্রকাশ্যে চলাফেলা করছে। আমাকে মামলা তুলে নিতে অব্যাহতভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। মামলা তুলে না নিলে গুলি করে মেরে ফেলবো বলেও হুমকি দিচ্ছে।
কেশরহাট এফজে শোরুমের মালিক জামাল হোসেন বলেন, তারা বেশ কিছু দিন আগে থেকে আমার কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিলো। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তারা প্রথমে হিজরা পাঠিয়ে আমার শোরুমে হামলা করায়। এ সময় আমাকে তারা মারপিটও করে। এর পর তারা আবার আমার ম্যানেজারের কাছ থেকে ১৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তাদের হুমকিতে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। বিচার পাওয়া নিয়েও সংশয় রয়েছে।
৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাবের আলী বলেন, আমিসহ চার কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ডাকাতির মামলা হয়েছে। আমরা সকলে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছি। ঘটনাটি সত্য নাকি মিথ্যা তা সঠিক তদন্ত হলে বেরিয়ে আসবে। এ মামলা নিয়ে কাউকে হুমকি দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আসামীরা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আছেন। তাই তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে হুমকি দেয়ার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। মোহনপুর থানার ওসি সেলিম বাদশাহ বলেন, আমি যোগদানের আগে এ ঘটনা। তবে বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন আদালতে পাঠাবো।
তিনি আরও বলেন, আমি যোগদানের পর পৌর এলাকার মরগা বিলের বরফ মিলে একটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। আমরা দ্রুত ডাকাতদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোর্পদ করেছি। আশা করছি, ওই ডাকাতির ঘটনাও দ্রুত প্রতিবেদন দিতে পারবো।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৩, ২০২২ | সময়: ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ