সর্বশেষ সংবাদ :

বিশ্বকাপের ফাইনালের পরও কাতারে থাকতে চান অভিবাসী শ্রমিকরা

সানশাইন ডেস্ক: কাতারের রাজধানী দোহার একপ্রান্তে গড়ে তোলা বিশেষ একটি ফ্যান জোনে সেনেগাল-ইংল্যান্ডের ফুটবল ম্যাচ দেখতে আসা অভিবাসী শ্রমিকরা জানিয়েছেন, বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পরও তারা দেশটিতে থেকে কাজ করতে চান।
রোববার ইংল্যান্ডের কাছে সেনেগাল ৩-০ শূন্য গোলে হারায় কাতারে আফ্রিকার বিশ্বকাপ ট্রফি তুলে ধরার স্বপ্ন এখন শুধু মরক্কোকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে, মহাদেশটির একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে এই দেশটি এখনও টুর্নামেন্টে আছে; কিন্তু ওই ফ্যান জোনে খেলা দেখা কিছু আফ্রিকান ফুটবল ভক্তের কাছে বিশ্বকাপ ট্রফির চেয়েও বড় পুরস্কার কাতারে থেকে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া, তাদের কাছে ফাইনালের পরও কাতারে থাকতে পারাই অন্য সবকিছুর চেয়ে বড় পাওয়া।
উগান্ডার ওয়ামবাকা আইজ্যাক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “যারা শুধু বিশ্বকাপের জন্য এসেছে তারা ফাইনাল খেলার পর অবশ্যই ফিরে যাবে, কিন্তু এখানে এখনও আমার ভবিষ্যৎ আছে কারণ এখনও আমার করার মতো কাজ আছে। আমরা পরিষ্কার্ করার কাজ করবো, অফিসগুলোতে, সব জায়গায় (এখানে) প্রচুর কাজ আছে আর নির্মাণ কাজতো চলতেই থাকবে।”
সন্ধ্যার পর এই ফ্যান জোনে খেলা দেখতে আসা হাজার হাজার অভিবাসী শ্রমিকের একজন এই আইজ্যাক। কাতারের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এই শ্রমিক ও সেখানে থাকা অন্যান্য বিদেশিরা।
অভিবাসী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে কাতারের ভূমিকার জন্য মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো দেশটির তীব্র সমালোচনা করেছে। বিশ্বকাপ ফাইনালের পরও এখানে থাকবেন কিনা এমন প্রশ্নে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেনিয়া থেকে আসা এক তরুণ ট্র্যাফিক কর্মী বলেন, “এটা জটিল। আমি লুসাইল স্টেডিয়াম, আল থুমামা স্টেডিয়াম নির্মাণে কাজ করেছি। আমি একজন ঠিকাদারের অধীনে কাজ করেছি, তাই তারা যেখানে পাঠায় সেখানেই যেতে হবে।
“আমরা এখন ট্র্যাফিক কর্মী হিসেবে কাজ করছি, আগামী সপ্তাহে আমাদের আবার নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে হতে পারে। গ্রীষ্মে লম্বা দিন ধরে খুব গরমের মধ্যে আমাদের কাজ করতে হয়েছে, খুব গরম। সব সময়ই আমি খুব ক্লান্ত থাকতাম।” বাংলাদেশ থেকে যাওয়া রাইড-শেয়ার চালক রহিম জানান, কাতারে তার সাড়ে তিন বছরের প্রবাস জীবন খুব কঠিন ছিল কিন্তু দেশে তাদের গ্রামে কোনো কাজ নেই, তাই এখানে থাকা ছাড়া তার আর কোনো উপায়ও নেই।
“আমি প্রতিদিন কাজ করেছি, সপ্তাহের সাত দিনই। গাড়িটা আমার না, গাড়িটার জন্য একটা কোম্পানিকে টাকা দিতে হয়। তারপর আমার থাকা-খাওয়ার জন্য খরচ করতে হয় আর বাকি যা থাকে দেশে পরিবারকে পাঠাই,” বলেন তিনি।
“মহামারীর সময় কোনো কাজ ছিল না, কাজ ছাড়াই আমাদের বাঁচতে হয়েছে। আমি বাড়িতে যাওয়ার জন্য টাকা জমানোর চেষ্টা করছি। সাড়ে তিন বছর ধরে পরিবারের সঙ্গে দেখা নাই, কিন্তু যদি বাড়িতে ফিরি সেখানে কোনো কাজ নাই, তাই আমার কাছে অনেক টাকা থাকতে হবে।” রহিম জানান, স্ত্রী ও কন্যাকে কাতারে নিয়ে আসতে চান তিনি, কিন্তু তা করার মতো পর্যাপ্ত সামর্থ্য তার নেই, তাই তারা বাংলাদেশেই রয়ে গেছে।
একটি শিল্প এলাকার বিশেষ এই ফ্যান জোনটির লাগোয়া শ্রমিকদের বেশ কয়েকটি শিবির, এখানে কাতারের নিম্ন আয়ের কয়েক লাখ শ্রমিকের বাস। এখানে বিশালাকার টিভি পর্দাসহ একটি স্টেডিয়াম আছে, উপচে পড়া ভিড় সামলাতে বাইরেও একটি বিশাল টিভি পর্দা বসানো হয়েছে। দোহার যে অল্প কয়েকটি খোলা জায়গায় বিশ্বকাপের খেলা দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে এটি তার মধ্যে একটি।
অধিকাংশ সন্ধ্যায় এই লোকগুলো এখানে এসে ঘাসের ওপর বা যেখানে ফ্যান জোনটি বানানো হয়েছে সেই ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সস্তা বেঞ্চগুলোতে খেলা দেখতে বসেন, কিন্তু পরদিন সকালে কাজে যোগ দেওয়ার তাড়া থাকায় প্রায়ই শেষ বাঁশি বাজার আগেই ঘুমানোর জন্য বাসার পথ ধরতে হয় তাদের। অনেক শ্রমিকেরই বিশ্বকাপের পর কাতারে থাকা ও সেখানে থেকে চাকরি করা নির্ভর করছে তাদের নিয়োগকর্তাদের ওপর।
জোনাথন নামের আরেক উগান্ডান নাগরিক মেকানিক হিসেবে পাওয়া চাকরি নিয়ে সন্তুষ্ট নন, তিনি চান পড়াশোনা করতে; কিন্তু তারপরও বিশ্বকাপ ফাইনালের পর এখানে থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন,“আমার চাকরির চুক্তি শেষ না হওয়া পর্যন্ত এখানেই থাকছি আমি।”


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২২ | সময়: ৫:২০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ