তিনবছর পর বসলো বর্ডার হাট

জি এম ক্যাপ্টেন, কুড়িগ্রাম: দীর্ঘ প্রায় তিন বছর পর চালু হয়েছে ভারত-বাংলা বর্ডার হাট। গত ১৫ নভেম্বর ভারত-বাংলাদেশ দু’দেশের জেলা প্রশাসক পর্যায়ের যৌথ সভার সীদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩০ নভেম্বর বুধবার হাটটি পুনরায় চালু করা হয়েছে। হাট চালু হওয়ায় খুশি দু’দেশের ক্রেতা-বিক্রেতা ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার বালিয়ামারী এবং ভারতের মেঘালয় রাজ্যের আমপাতি জেলার মহেন্দ্রগঞ্জ থানার কালাইরচর সীমান্তের ১০৭২ মেইন পিলারের ১৯ নম্বর সাব-পিলারের পাশে উভয় দেশের জিরো পয়েন্টে ৭৫ মিটার করে ৪ বিঘা জমিতে ২০১১ সালের ২৩ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় এই সীমান্ত হাটের।
সীমান্ত হাট চালুর পর থেকে সীমান্তবর্তী দারিদ্রপীড়িত উপজেলা রাজিবপুরের মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ক্রেতা-বিক্রেতাসহ সীমান্ত এলাকার প্রায় বিশ হাজার মানুষের আয়ের প্রধান উৎস হয়ে উঠে সীমান্ত হাটটি। কিন্তু ২০২০ সালে মার্চে করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাবে প্রশাসনিক ভাবে বন্ধ করে দেয়া হয় ভারত-বাংলার যৌথ এই সীমান্ত হাট। এতে কর্মহীন হয়ে পড়ে হাট কেন্দ্রিক কয়েক হাজার মানুষ। প্রায় তিন বছর যাবৎ আয়-রোজগারহীন হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হয় দুই রাষ্ট্রের নাগারিককে। হাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুই দেশের দরিদ্র মানুষরা নতুন করে জীবিকা গড়ে তুলেছিল তা স্থবির হয়ে পড়ে। আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে হাটের নির্ধারিত ক্রেতা-বিক্রেতারা। এ অবস্থায় দ্রুত হাটটি চালুর দাবি করে আসছিল ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়রা।
এরই ধারাবাহিকতায় ভারত-বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল হাট পরিদর্শন করে বুধবার হাট চালু করে দেয়া হয়। সীমান্ত হাটে ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য দুই দেশের ৬৯টি পণ্য নির্ধারণ রয়েছে। সীমান্ত এলাকায় স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত কৃষি পণ্য, ফলমূল, মসলা, গৃহস্থালি পণ্য, বনজ সম্পদ, কুটির শিল্প, কৃষিজাত যন্ত্রপাতি, তৈরি পোশাক, প্রসাধনী সামগ্রী বিক্রি করা হয়। দুই দেশের তালিকাভুক্ত ক্রেতা-বিক্রেতারা হাটে শুধু কেনা কাটা করতে পারেন।
বাংলাদেশী ২৫ জন বিক্রেতা এবং ৫৮৭ জন ক্রেতা এবং ভারতীয় ৫০ জন বিক্রেতা এবং ৩৫৯ জন ক্রেতা রয়েছেন। সীমান্ত হাটে দু’দেশের নাগরিকরা নিজ নিজ দেশের মুদ্রা দিয়ে কেনা কাটা করেন। হাটে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ২০০ ডলারের পণ্য কিনতে পারেন। হাটে বেচা-কেনা করতে ভিসা বা পাসপোর্ট প্রয়োজন পড়ে না। বাংলাদেশের ক্রেতা ও বিক্রেতার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত পরিচয়পত্র দিয়েই প্রবেশ করেন।
হাটে ব্যবসায়ী ফরজ আলী, আব্দুল আজিজ, আনোয়ার হোসেনসহ অনেকেই জানান, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় আয় রোজগার ছিল না, আমরা কষ্টে ছিলাম। এই হাট চালু হওয়ায় আমরা যেমন রোজগার করতে পারব, তেমনি স্থনীয় যারা আছে তাদেরও রোজগার হবে। সবাই ডাল-ভাত খেয়ে চলতে পারব। হাট চালু করে দেয়ায় আমরা খুবই খুশি, আনন্দিত।
এ বিষয়ে রাজিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অমিত চক্রবর্তী জানান, গত ১৫ নভেম্বর ভারত-বাংলাদেশ দু’দেশের জেলা প্রশাসক পর্যায়ের যৌথ সভার সীদ্ধান্ত অনুযায়ী সমবেত ভাবে বুধবার হাটটি পুনরায় চালু করা হয়েছে। এই আয়োজনে দুই দেশের পারস্পারিক সৌহাদ্যপূর্ণ সৎম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে।
একই সাথে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সমৃিদ্ধ লাভ করবে। চর রাজিবপুর উপজেলার মানুষের প্রাণ ফিরে এসেছে, আশা করি তাদের বেকারত্ব লাঘব হবে।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২২ | সময়: ৬:০০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর