সর্বশেষ সংবাদ :

বাবলাবন গণহত্যা স্মৃতিস্তম্ভে প্রাচীর টপকে শ্রদ্ধা

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর ঐতিহাসিক বাবলাবন হণহত্যা দিবসে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানাতে হলো প্রাচীর টপকে। শুক্রবার প্রধান ফটক বন্ধ থাকায় শহীদ স্বজনরা প্রাচীর টপকে শ্রদ্ধা জানান। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বজনরা।
শহীদ স্বজনরা বলেন, স্মৃতিস্তম্ভের চারপাশে প্রাচীর আছে। প্রবেশের জন্য একটি ফটক। সারাবছর এই ফটক তালাবদ্ধই থাকে। এমনকি শুক্রবার ঐতিহাসিক বাবলা বন গণহত্যা দিবসেও ফটকের তালা খোলা হয়নি। ফলে যারা শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়েছিলেন, তাঁদের প্রাচীর টপকাতে হয়েছে। প্রাচীর টপকে ভেতরে ঢুকে স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তারা।
সকালে রাজশাহীর জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যান সংগঠনের সদস্যরা। সংগঠনের অনেক প্রবীণ ব্যক্তিকেও প্রাচীর টপকে ভেতরে ঢুকতে হয়। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন সংগঠনের সহসভাপতি সালাহউদ্দিন মিন্টু।
তিনি বলেন, ‘তিন দিন আগেই আমরা জেলা প্রশাসক এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানিয়েছি যে ২৫ নবেম্বর বাবলা বন গণহত্যা দিবস। সেদিন যেন স্মৃতিস্তম্ভের গেট খুলে রাখা হয়। কিন্তু কেউ তালা খোলেননি। আমাদের প্রাচীর টপকে ভেতরে ঢুকতে হয়েছে।
বাবলা বনে মরদেহ পাওয়া গিয়েছিল রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর বাবা শহীদ আজিজুল হক চৌধুরীর। তাই শুক্রবার সকালে নগরীর শ্রীরামপুর টি-বাঁধ সংলগ্ন এই স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসেন গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষক লীগের নেতারা। প্রধান ফটকে তালা থাকায় ফুলের ডালা নিয়ে প্রাচীর টপকে তারা শ্রদ্ধা জানান।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘আজকের দিনেও স্মৃতিস্তম্ভের গেটে তালা থাকবে, এটা খুবই দুঃখজনক। আমাদের প্রাচীর টপকে ভেতরে ঢুকতে হয়েছে।’ উপজেলা কৃষক লীগের সদস্য সচিব ইমন মণ্ডল বলেন, ‘এই স্মৃতিস্তম্ভের নিশ্চয় দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ আছেন। তারা থাকতে আজকের দিনে এটি তালাবদ্ধ দেখে আমরা মর্মাহত।’
প্রসঙ্গত, বিজয়ের প্রাক্কালে একাত্তরের ২৫ নবেম্বর রাজশাহীর ১৮ স্বাধীনতাকামী বীর সন্তানকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানি হায়েনারা। বিজয়ের পর ৩১ ডিসেম্বর রাজশাহীর পদ্মাচর শ্রীরামপুর এলাকার বাবলা বন থেকে তাদের দড়িবাধা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এই বধ্যভূমিটি বাবলা বন বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত।
আগে সেখানে ছোট্ট একটা নামফলক ছিল মাত্র। ১৯৯৫ সালের ২৫ নবেম্বর শহিদদের স্মরণে স্মৃতিফলকটি উন্মোচন করা হয়। এরপর সেখানেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হতো। ২০২০ সালে বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ‘মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় বধ্যভূমি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। বধ্যভূমির জায়গাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো)।
পাউবোর রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, ‘জায়গাটি আমাদের। এলজিইডি আমাদের অনুমতি নিয়ে স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণ কাজ করেছে। রক্ষণাবেক্ষণ হয়তো তারাই করে।’ এলজিইডির রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহা. নাশির উদ্দিন বলেন, ‘এটা তো মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা। মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে স্থানীয় প্রশাসনই সবকিছু ম্যানেজ করবেন। আমাদেরও কিছু করার নেই।
রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যাণ চৌধুরী বলেন, ‘বধ্যভূমিটির ব্যাপারে আসলে আমার কিছু জানা নেই। আমি বলতে পারব না।’


প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২২ | সময়: ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ