বাঘায় বৃদ্ধি পেয়েছে মাদকের দাম তবুও কমেনি সেবনকারি,বাড়ছে অপরাধ প্রবনতা !

স্টাফ রিপোর্টার,বাঘা : রাজশাহীর বাঘা সীমান্ত এলাকায় পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে মাদকের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে কমেনি সেবনকারি। উপরোন্ত একের পর-এক বেড়েই চলেছে অপরাধ প্রবনতা। আর এসব ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজন-সহ সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ। অভিযোগ উঠেছে, কতিপয় ব্যক্তি মাদক বিক্রেতাদের নিকট থেকে টাকা এনে পুলিশকে সহায়তা করছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, গত রবিবার(১৩ নভেম্বর)সন্ধ্যার পর বাঘা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে বাঘা থানার উপ-পরিদর্শক তৈয়ব-সহ দু’জন পুলিশ এসে দাড়ালে সেখানে অবস্থিত পান-সিগারেট ও বিস্কুট চানাচুর বিক্রেতা তার কাঠের ঢোফ ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় তার হাতে গাঁজা ভর্তি একটি প্লাষ্টিক এর কোটা ছিলো। প্রত্যক্ষ দর্শীরা জানান, পুলিশ ওই দোকানদারকে ধাওয়া করেছিলো। কিন্তু অল্পের জন্য ধরতে পারেনি। ঘটনার পর পুলিশ কিছু লোকজনের সাক্ষাতকার এবং একটি কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে থানায় মামলা দেওয়ার কথা বলে চলে যান। তবে এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। উপরোন্ত পরদিন থেকে বহাল তবিয়তে ঐ ব্যবসায়ী তার দোকার পরিচালনা করছেন।

এদিকে গত ১৪ নভেম্বর উপজেলা আইন শৃংখলা , মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন, চোরাচালান প্রতিরোধ ও নাশকতা প্রতিরোধ বিষয়ে অনুষ্ঠিত চারটি মাসিক সভায় কয়েকজন বক্তা বলেন, পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে বাঘায় অপরাধ প্রবনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত একমাসে এ উপজেলায় শুধু ভ্যান সিনতাই এর উদ্দেশ্যে দু’জন চালকের গলায় ছুরিকাঘাত-সহ একজন চালকে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়াও গত ৯ তারিখ উপজেলা সদরে অবস্থিত বাঘা বানিজ্যিক কলেজের সামনে সকাল আনুমানিক ১০ টা থেকে ১১ টার মধ্যে তৃতীয় তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় পাশা-পাশি দু’টি ইউনিটে দুর্ধর্ষ চুরি সংঘটিত হয়েছে।

এ ঘটনায় বাঘা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম এবং একজন সরকারি কর্মচারী সোহেল আহাম্মেদ এই দু’জনের ঘর থেকে চুরি গেছে দুইভরি স্বর্ণ-সহ প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও সম্প্রতি বাঘা মাজারে ঘুরতে আসা এক নারী সহ গত ১২ তারিখ উপজেলার মনিগ্রাম এলাকার সাজিপাড়ায় বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে বাড়ি ফেরার সময় চক-নারায়নপুর গ্রামের শিশু রায়মা’র গলা থেকে চেইন সিনতাই এর ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয় সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা বলছেন, এসব অপরাধ প্রবনতার প্রধান কারণ মাদক। তাঁদের অভিযোগ, বর্তমানে সক্রিয় হয়ে উঠছে মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সদস্যরা। তারা রাত-দিন সমান তালে সীমান্ত এলাকায় মাদক বিক্রী করছে। এর আগে যারা এক সময়ে আত্মগোপনে ছিল তারাও এখন প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। এদের অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক সংক্রান্ত একাধিক মামলা। অভিযোগ রয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে চুনোপুটিরা গ্রেফতার হলেও চিহৃত মাদক ব্যবসায়ী গডফাদাররা বর্তমানে কৌশল পরিবর্তন করে সীমান্তে দৌরাত্ত্ব বৃদ্ধি করে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অবৈধ কর্মকান্ড। তাঁদের অভিযোগ, কতিপয় ব্যক্তি বড়-বড় মাদক বিক্রেতাদের নিকট থেকে টাকা এনে পুলিশকে সহায়তা করছে।

বাঘার আলাইপুর সীমান্ত এলাকার একজন স্কুল শিক্ষক জানান, অত্র এলাকায় প্রতিনিয়ত বহিরাগত কতিপয় যুবক দামি মোটরে সাইকেল যোগে এসে মাদক কয় সহ সেবন করে যাচ্ছে। এক সময় এক বোতল ফেন্সিডিল পাঁচশত টাকা বিক্রী হলে বর্তমানে এর দাম বেড়ে পনেরো থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রী হচ্ছে। তার পরেও কমছেনা সেবন কারিদের সংখ্যা।

বাঘা থানা অফিসার ইনচার্জ(ওসি) তদন্ত আব্দুল করিম জানান, ছোট-কাঠো দু’একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া থানার সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক ভালো। তিনি বলেন, বাঘা সীমান্ত এলাকা। এখনে পুলিশের একার পক্ষে মাদক নির্মুল করা সম্ভব নয়। এ জন্য তথ্য দিয়ে জনগনকে সহায়তা করতে হবে। অপর দিকে সক্রিয় হতে হবে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর সহ সীমান্তরক্ষী বিজিবি কর্মকর্তাদের।


প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২২ | সময়: ৯:৩৮ পূর্বাহ্ণ | সানশাইন