তিন কন্যা হওয়া ও ভাবির সাথে পরকিয়ার জেরে চুরির অপবাদ দিয়ে স্ত্রীকে ঘর ছাড়া করালেন স্বামী

স্টাফ রিপোর্টার
কামরুন নাহার কনা। বয়স মাত্র ২৬। বিয়ের ৭ বছর হয়েছে। এই বয়সেই তিন সন্তানের মা হয়েছেন। বড় মেয়ে সুরাইয়া (৫),মেজো মেঢে সুমাইয়া ( ৩),ছোট মেয়ে আফিয়া (১০) মাস। এর ভেতর স্বামির কথামত লাইগেশন করিয়েছেন ছোট মেয়ের জন্মদানের সময়। তবে সুখ মেলেনি। সর্বশেষ ছোট সন্তানটি মেয়ে হওয়ায় কপাল পুড়ে কনার। দ্বিতীয় সন্তান মেয়ে হওয়ার পর থেকে অত্যাচার শুরু হয় আর তৃতীয় সন্তান মেয়ে হওয়ায় সেটি চরম পর্যায়ে বেড়ে যায়। আধুনিক যুগে এসেও এমন হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে রাজশাহী রাজপাড়া থানাধীন কেশবপুর এলাকার ২ নং পুলিশ লাইন গেটের সামনে।

কনার তিন কন্যা শিশু –  সানশাইন

জানা গেছে, কনার বাড়ি বহরমপুর এলাকায়। তার বাবার নাম কামাল হোসেন (৫৬)। তিনি পেশায় ট্রাক ড্রাইভার। প্রায় সাত বছর আগে রাজপাড়া থানাধীন কেশবপুর এলাকার ২ নং পুলিশ লাইন গেটের সামনে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়েছিলো কনার।

আহত কনা রামেক হাসপাতালে তোলা ছবি –  সানশাইন

 

কনা বলেন, তারা চার বোন। সে সবার বড়। বাবার আয় দিয়ে সংসারের অভাব সেভাবে পূরণ না হওয়ায় এইচএসসি পরীক্ষার পর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় কনার। তার স্বামীর নাম চঞ্চল (৪১)। মুদি দোকান চালাতেন সে সময়। বিয়ের সময় জানানো হয়নি চঞ্চলের আগে বিয়ে হয়েছিলো। তার পরেও সব মেনে নিয়ে কনা সংসার শুরু করেন । তবে সেখানে সুখের বিন্দু মাত্র ছোয়া মেলেনি। সংসারে শাশুড়ি প্রায় পাঁচ মাস আগে মারা যান। তবে মারা যাওয়ার আগে চঞ্চলের আরো কয়েকভাই থাকলেও সেখানে খাবার ও থাকার জায়গা জোটেনি। ফলে এক প্রকার বাধ্য হয়ে সবার ছোট ছেলে মাকে তার ঘরে রাখতে বাধ্য হন। এদিকে বিয়ের পরপরই একের পর এক সন্তান হওয়ায় সংসারের অন্যান্য কাজগুলো সময় মত করতে পারেনি কারন তিন সন্তানই ছোট। ফলে প্রায় প্রতিদিনই চলতো মারধর।

 

কনার খালাতো ভাই নাহিদ – সানশাইন

 

কনা আরো বলেন, বেশ কিছুদিন আগে চঞ্চলের আরেক ভাই মারা গেলে সেই ভাইয়ের বৌয়ের সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত হোন তিনি। প্রতিদিনই মুখ বুজে সহ্য করতে হতো আমাকে। এগুলো জানার পরও প্রতিবাদ করিনি কারন ঘরে আমার তিন কন্যা সন্তান। এভাবে দিনের পর দিন মার খেয়ে চললেও সংসার ছাড়তে চাইনি। তবে পরকীয়ায় আসক্ত হওয়া চঞ্চলের মায়ের পর কুলখানির দিনকে বেছে নেন তাকে তাড়িয়ে দেয়ার চূড়ান্ত রুপ দিতে।

 

কনার স্বামী চঞ্চল ( ফাইল ছবি )

 

 

হঠাৎ করে তার রুমে দরজার সামনে একটা কৌটায় কিছু টাকা পাওয়া যায়। এর আগে সেখানে কৌটা ছিলনা । সেটা খুলে দেখতেই টাকা দেখে তার দেবর উজ্জলকে জানায়। কারন সেসময় তার স্বামি দোকানে ছিলো। এর পরেই শশুর বাড়ির লোকজন দাবি তোলে সেখানে আরো দুই লাখ টাকা ছিলো সেগুলো কোথায়। এই অভিযোগ তুলে প্রায় ছয় মাস আগে তাকে ঘর থেকে বের করে দেয় শশুর বাড়ির লোকজন।

 

কনা ও তার পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়,কনা তিন কন্যা সন্তানের দিকে তাকিয়ে ঘর করতে চান। কারন বাবার ঘরে আরো দুই মেয়ে অবিবাহিত। সেখানে সে সহ তার তিন মেয়ের খরচ চালানো একেবারেই অসম্ভব। তাই আইনের সহায়তা নেননি। এর মধ্যে তার পিতা বাইরে থাকা অবস্থায় সরকারি নোটিশ আসে। তবে তারা বুঝতে না পারায় সেটি গ্রহণ করেননি বলে জানান তিনি। পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন সেটি তালাকের নোটিশ।

 

কনার পিতা কামাল হোসেন জানান, মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর থেকেই যৌতুকের দাবিতে মারধর চলতো। তবে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু কিছু টাকা দিতাম। পরে তালাকের নোটিশ পেয়ে মহিলা আইন সহায়তা কেন্দ্রে যাই আমরা। সেখানে সব কিছু খুলে বললে তারা আমাদের সহায়তা দেন। জামাই চঞ্চলকে সেখান থেকে তাদের সাথে এ মাসের ৯ তারিখ সকালে শুনানীর জন্য ডাকা হলে সেদিন শুনানীর পরেই বাইরে এসে হুমকি দেয় তারা। কারন তাদের আরো দুই তিনজন সদস্য পুলিশে রয়েছে ঘরে। আমরা ভয়ে রয়েছি।

 

এর মধ্যে ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তিনি বিচারের কথা বলে আইন সহায়তা কেন্দ্রের এক ম্যাডামের সাথে কথা বলে শুক্রবার সন্ধ্যায় আপোষ মিমাংসা করে দিতে চান। সে হিসেবে আমরা গেলে কথাবার্তার এক পর্যায়ে চঞ্চল কোন ভাবেই মেয়েকে গ্রহণ না করা ও দুই লাখ টাকা চুরির বিষয় তুললে আমরা প্রতিবাদ করে বাইরে চলে আসি। এমন অবস্থায় কাউন্সিলরের অফিসের সামনে আমার বড় মেয়ে কনা ও ভাগ্নে নাহিদকে রিকশা থেকে নামিয়ে কয়েকজন এলাপাতারি মারতে থাকে। এসময় নাহিদের চোখের উপরে ঘুষি লাগে ফুলে যায় সাথে সাথে। আর কনাকে চঞ্চলের ভাই উজ্জল,নূরনবী,বীনা,রকি,আহাদ ইচ্ছা মত মারতে থাকে। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আর নাহিদকে চিকিৎসা জন্য হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় তারা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন রাজপাড়া থানায়। মেডিকেল রিপোর্ট পেলে তারা মামলা করবেন বলে জানান।

 

কামাল হোসেন আরো জানান,আগে যে বিয়ে হয়েছিলো সেটি আমরা বিয়ের দিন জানতে পারি লোকমুখে। সেই মেয়ে ৭ মাসের পেটে বাচ্চা থাকা অবস্থায় মারা গেছে শুনেছি। আমি সন্দেহ করছি সেই মেয়েকেও তারা মেরে ফেলেছে। কারন আশেপাশের বাড়ির মানুষদের কাছ থেকে শুনেছি তাকেও অত্যাচার করতো তারা।

 

এ বিষয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় রাসিকের ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুহুল আমিন টুনু জানান,উভয় পক্ষকে ডেকে আমার অফিসে মিমাংসা করার জন্য আনলে চঞ্চল কোনভাবেই এসংসার করবেনা বলে জানিয়ে দেই। এসময় মেয়ে পক্ষের পিতা ও এক ছেলে আইনের মাধ্যমে সমাধান চেয়ে বেরিয়ে আসার সাথে সাথে চেম্বারের সামনে রিকসা থেকে নামিয়ে মারধর করে। এটা করা একদম ঠিক হয়নি ছেলে পক্ষের। আমি নিজেই স্বাক্ষি দিচ্ছি।

 

তিনি আরো জানান,মেয়েটার একটু বুদ্ধি কম। একারনে সংসারে ঝামেলা হয়েছে। টাকা চুরির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,ছেলে পক্ষ বলছে টাকা নিয়েছে। এতোটুকুই জানি।

 

এদিকে রাজপাড়া থানায় যোগাযোগ করা হলে সেখান থেকে জানানো হয়,লিখিত অভিযোগ করেছেন মেয়ে পক্ষের লোকেরা। ওসি স্যার মিটিং শেষ হলেই তাকে এ অভিযোগের বিষয়টি জানানো হবে।

 

চঞ্চলের সাথে সরাসরি কখা বলতে চাইলেও তারা বিষয়টি এড়িয়ে যেয়ে উত্তর দিতে চাননি।

সানশাইন / শামি


প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২২ | সময়: ১১:২২ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine