সর্বশেষ সংবাদ :

রাবিতে এক সপ্তাহে পাঁচ সাইকেল চুরি : প্রশ্নবিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা

রাবি প্রতিনিধি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) গত এক সপ্তাহে পাঁচটি সাইকেল চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ক্লাস চলাকালীন তিনটি সাইকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন থেকে ও একটি ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে চুরি হওয়ার পাশাপাশি আরেকটি সাইকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেট থেকে ছিনতাই হয়েছে। এসব চুরির ঘটনাগুলো বেশিরভাগ ঘটেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন থেকে।
এসব ঘটনায় প্রহরীদের চোখের সামনে সাইকেল চুরি হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, গত এক সপ্তাহে পাঁচটি নয়, নূন্যতম ১০টি সাইকেল চুরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক জটিলতায় সময় না খোয়াতে অনেক শিক্ষার্থীই অভিযোগ করেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্যারেজের সংখ্যা বেশি হলে তাদের সাইকেলগুলো চুরি হতো না বলে মনে করছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ক্লাস চলাকালীন চলতি মাসের গত ৬ নভেম্বর আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী নূর আলম নেহালের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ একাডেমিক ভবন থেকে এবং ৯ নভেম্বর সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আসমাউল ইসলাম আকাশের ড. মমতাজ উদ্দিন আহমদ একাডেমিক ভবন থেকে ও মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী অনিল চাকমার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবন থেকে সাইকেল চুরি হয়ে যায়। এছাড়া চলতি মাসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেট সংলগ্ন আহলে হাদীস ফাউন্ডেশনের গলি থেকে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেনের সাইকেল চুরির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের ছেলের হাত থেকে কাজলা গেটে আরেকটি সাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
এসব চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভুক্তভোগীদের অনেকে নগরীর মতিহার থানায় সাধারণ ডায়েরী করার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে লিখিতভাবে জানিয়েছে।
এরইমধ্যে এসব চুরির বেশকিছু সিসিটিভি ফুটেজও এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, চুরির ঘটনায় জড়িতরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীর মতোই কাঁধে ব্যাগ নিয়ে একাডেমিক ভবনগুলোতে আসে এবং বিশেষ প্রক্রিয়ায় তালা খুলে সাইকেল নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে যায়। এর মধ্যে অনেকে মুখে মাস্ক পরিধান করে আবার অনেকে মাস্কও পরেনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে দুইটি গ্যারেজ রয়েছে দুইটি। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রায় ৪০ হাজারের অধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাড়ে চারশটি সাইকেল ও মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে।
জানতে চাইলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অনিল চাকমা বলেন, চলতি মাসের গত ৯ তারিখে আমি ক্লাসে থাকাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবন থেকে সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টায় আমার সাইকেল চুরি হয়। আমার সাইকেল চুরির কথা এখনও বাড়িতে জানাতে পারিনি। আমার মতো অনেকে বৃত্তির টাকায় বা ঋন করে সাইকেল কিনেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা ও গ্যারেজের সংখ্যা বৃদ্ধিও পাশাপাশি সাইকেল চুরি হলে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে তাহলে চুরিও কমবে অন্যদিকে ভুক্তভোগীদের কষ্টটাও লাঘব হবে।
অনিল আরও বলেন, আমাদের একাডেমিক ভবনগুলোতে নিরাপত্তা কর্মী ও সিসিটিভি আছে এরপরেও প্রশাসন চোরদের ধরতে বা চুরি বন্ধ করতে পারছে না। আর এতো নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকতে প্রহরীদের চোখের সামনে কিভাবে সাইকেল চুরি হয়!
ভুক্তভোগী আসমাউল ইসলাম আকাশ বলেন, আমার সাইকেল হারানোর অনেক দিন হল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দপ্তরে অভিযোগ করারও অনেক দিন হয়ে গেছে কিন্তু কোন খোঁজ পাচ্ছি না। ঘটনার দিন প্রক্টর দপ্তরে সিসিটিভি ফুটেজের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি অনুপস্থিত থাকায় তাৎক্ষনিক চোরকে শনাক্ত করা যায়নি। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি দাপ্তরিক জটিলতাগুলো হ্রাস করে তবে চোরকে শনাক্ত করা সহজ হত।
সাইকেল চুরি ঘটনায় চোর শনাক্তের বিষয়ে জানতে চাইলে নগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার আলী তুহিন বলেন, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে জেনেছি। আমরা এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। আশা করি, খুব শীঘ্রই চুরির সঙ্গে জড়িত পুরো চক্রটিকে আমরা শনাক্ত করতে পারব।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, সাইকেলগুলো মূলত একাডেমিক ভবনগুলো থেকে চুরি হয়েছে। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চোরকে শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। যেহেতু চোর একজন সাধারণ শিক্ষার্থীর মতোই ক্যম্পাসে এসে চুরি করছে, এক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষার্থী ও চোরকে আলাদা করে শনাক্ত করা কঠিন।
সিসিটিভি ক্যামেরা ও গ্যারেজ বৃদ্ধির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, ইতোমধ্যে দুটি সাইকেল গ্যারেজের টেন্ডার পাস হয়েছে। যতদ্রুত সম্ভব কাজ শুরু করা হবে। বর্তমানে ক্যাম্পাসে আমাদের ৩২ টি সিসিটিভি ক্যামেরা সচল আছে। এগুলো দিয়ে ক্যাম্পাসের সব জায়গা কভার হয় না। শীঘ্রই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় আরও ৩০ টির মতো সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে।


প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২২ | সময়: ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ