পবায় গাছ কেটে জোর পূর্বক জমি দখলের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার: নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে পবা উপজেলায় দারুশা শরিশাকুড়ি গ্রামে ৪৯ শতক জমিতে থাকা শতাধিক কলাগাছ জোর পূর্বক কেটে জমি জবর দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২৭ অক্টোবর এ ঘটনায় ওই জমির ক্রয়কৃত প্রকৃত মালিক কর্ণহার থানার দারুশা শরিসাকুড়ি এলাকার মৃত দিদার বক্স সরকারের ছেলে মেরাজ উদ্দিন সরকার থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
কর্ণহার থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ গিয়ে ওই জমিতে জবর দখল করে ঘর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিলেও গত ৩ নভেম্বর রাতারাতি জমিটি ঘিরে ঘর নির্মান করেছে স্থানীয় ভূমিদস্যু সরিসাকুড়ি গ্রামের মৃত হারুন আর রশিদের তিন ছেলে মিনারুল, রহিদুল ও রবিউল। সম্প্রতি পবায় মানুষকে ভয় দেখিয়ে পুকুর খনন সিন্ডিকেটের প্রধান মিনারুলকে জেল দিয়েছিলো ভ্রামমান আদালত। জমি দখলের এঘটনায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে দুই পক্ষের মধ্যে। যে কোন সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, পবা উপজেলার সরিশা কুড়ি মৌজার জেল নং ২৬, খতিয়ান নং ৩১৯, হাল ৮৫৫, সাবেক দাগ ১৩৯০। মোট ৪৯ শতক জমির কাত ৩৭ শতক তফশিলকৃত জমির মুল মালিক মৃত আব্দুস সাত্তার। আব্দুস সাত্তারের কাছে থেকে মোট ৪৯ শতক জমির মধ্যে প্রথমে ১৯৭৮ সালে ১২ শতক জমি ক্রয় করে দারুশা শরিশাকুড়ি গ্রামের মৃত দিদার বক্স সরকারের ছেলে মেরাজ উদ্দিন সরকার। পরে ১৯৭৯ সালে ফের তার কাছে থেকে ওই দাগেই ৩৭ শতক জমি ক্রয় করে মেরাজ উদ্দিন সরকার। দুই দফায় দুইটি জমির রেজিস্ট্রি দলিল হয় মেরাজ উদ্দিনের নামে। দুই দফায় ক্রয়কৃত জমি আব্দুস সাত্তারের কাছে থেকে মোট ৪৯ শতক কিনেন মেরাজ উদ্দিন। পরে ১৯৮১ সালে মৃত হারুনুর রশিদ একি দাগে ৪৯ শতক জমি ক্রয় করে। এর পরেই শুরু হয় জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব।
পরে বিষয়টি নিয়ে ক্রয়কৃত জমির বিরুদ্ধে পবা উপজেলা সিনিয়র সহকারি জজ আদালত রাজশাহীতে মামলা করে হারুন অর রশিদ। সেই মামলায় সিনিয়র সহকারি জজ শাহিনুল ইসলাম ২৪/৭/ ১৯৯০ ইং তারিখ মামলার রায় দেন যে, মেরাজ উদ্দিন ২৯ শতক জমি ভোগ দখল করবে ও মৃত হারুন আর রশিদের তিন ছেলে মিনারুল, রহিদুল, রবিউল ২০ শতক জমি দখল ও ভোগ করবেন। পরে হারুনের মৃত্যুর পরে ওই জমির উপরে পবা উপজেলা সিনিয়র সহকারি জজ আদালতের দেয়া ২৪/৭/ ১৯৯০ ইং তারিখ দেয়া মামলার রয়ের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে মৃত হারুনের ছেলে মিনারুলসহ তিন ভাই মামলা করে।
মামলাটি ২০১৪ সালে আগের আদালতের রায় বহাল রেখে মামলা খারিজ করে দেয় এবং আগের আদালতের দেয়া রায়ে মেরাজ উদ্দিন ২৯ শতক জমির মালিক ও ভোগ দখল বহাল থাকবে। পরে গত ২৮/৭/২০১৪ ইং তারিখ মৃত হারুনের ছেলে রবিউল ফের ওই মামলা আপিল করেন। এর মধ্যে মামলার বিষয়টি গোপন করে পবা উপজেলা ভূমি অফিস থেকে তফশিলকৃত জমি সরিশা কুড়ি মৌজা, জেল নং ২৬, খতিয়ান নং ৩১৯, হাল ৮৫৫, সাবেক দাগ ১৩৯০। মোট জমি ৪৯ শতাংশের কাত ৩৭। মামলার বিষয়টি গোপন রেখে মৃত হারুনের তিন ছেলে প্রতিজন ১৬.৫ মোট ৪৯ শতক জমি অবৈধভাবে খারিজ করে নেয়।
এর মধ্যে গত অক্টোবরের ২৭ তারিখ দারুশা শরিসাকুড়ি গ্রামের মৃত দিদার বক্স সরকারের ছেলে মেরাজ উদ্দিন সরকার মৃত হারুনের বড় ছেলে রবিউল, মিনারুল, রহিদুল ভুমিদস্যু বিরুদ্ধে আরএমপি কর্নহার থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। গত ১ নভেম্বর অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোমিন দুই পক্ষকে নিয়ে সমাধানের জন্য বসে। সমাধান সেই দিন না হওয়ার কারনে পরে আবারও বসার দিন করা হয়। কিন্তু হটাৎ গত ২ তারিখ বুধবার ভোর রাতে মেরাজ উদ্দিনের জমিতে থাকা আম গাছ ও কলা গাছ কেটে ফেলে ভূমিদস্যু রবিউলের নেতৃত্বে মিনারুল, রহিদুলসহ প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন সন্ত্রাসী।
পরে বিষয়টি জানতে পেরে জমির মালিক মেরাজ উদ্দেনের বড় ছেলে মাহফুল ৯৯৯ ফোন করার পরে সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে কর্ণহার থানা পুলিশ গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। পুলিশ নিষেধ করার পরেও রাতে ফের কলাগাছ কেটে ফেলে মঙ্গলবার রাতেই ঘর নির্মান করে। এ ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
মেরাজ উদ্দিনের ছেলে মাহফুজ জানান, প্রায় লক্ষাধিক টাকার গাছ কেটে ফেলেছে তারা। পুলিশ নিষেধ করার পরে তারা গাছ কেটে ঘর নির্মাণ করেছে। তারা মামলা করেছে আদালতে, আবার তারা মামলার বিষয় গোপন রেখে জমি খারিজ করেছে অবৈধ ভাবে। জমিতে থাকা গাছ কাটা ও জমি জোর পূর্বক দখল কারিদের শাস্তি চান তিনি। এ বিষয় জমি দখল কারি মিনারুলের মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
কর্ণহার থানার অফিসার ইনচার্জ ইসমাইল হোসেন জানান, খবর পেয়ে ঘটনা স্থলে পুলিশ গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। তাদেরকে আদালত থেকে মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত কেউ কারো জমি দখল করতে পারবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। মিনারুল ও তার তিন ভাই তাদের জমিতে থাকবে ও মেরাজ উদ্দিন তার জমি ভোগ দখল করবে। কোন প্রকার আইন-শৃঙ্খলার অবনতি যেন না ঘটে এ বিষয়টি থানা পুলিশ নজরদারিতে রেখেছে।


প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২২ | সময়: ৫:২৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ