সর্বশেষ সংবাদ :

পাকিস্তানকে হারানো আর ‘মিরাকলের’ আশায় বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক: পাশাপাশি তিনটি বিশাল মাঠ। একটিতে মেয়েদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট, বিগ ব্যাশের খেলা হয় নিয়মিত। বাকি দুটিতেও অনায়াসে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট চালানো যায়। এক পাশে নেট অনুশীলনের জায়গা। সব মিলিয়ে সুপরিসর কমপ্লেক্স। গাছপালায় ঘেরা ছবির মতো সুন্দর আঙিনা। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে এক দিনের বিরতির পর শুক্রবার এখানেই ঘাম ঝরাল বাংলাদেশ দল। দৃষ্টি এবার পাকিস্তান ম্যাচে।
ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে বড় একটা সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। তবে তাতেই সুযোগের শেষ দেখছে না দল। জটিল সমীকরণের খেলায় এখনও আশার চাষ চলছে। যদি কিছু হয়েই যায়! এমনিতে লম্বা সফরের শেষ ভাগে বাংলাদেশের ভেঙে পড়ার নজির আছে অনেক। মাঠের ক্রিকেটের মনোযোগ থাকে না, মন চলে যায় দেশে। ফেরার তোড়জোরও শুরু হয়। বাস্তবতা যা বলছে, পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই শেষ বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযান। কিন্তু এবার শেষের আগেই শেষ যেন না হয়, এজন্য টিম ম্যানেজমেন্ট সতর্ক বলে জানালেন দলের সঙ্গে থাকা বিসিবি পরিচালক ও ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস।
“মিটিংয়ে শ্রীরাম সাফ জানিয়ে দিয়েছে, দেশে ফেরার ভাবনা, কার কবে ফ্লাইট, এসব মাথা থেকে সরাতে। ৭ তারিখেই ফিরতে হবে, এটা যেন কেউ ধরে বসে না থাকে। গুরুত্বপূর্ণ একটি ম্যাচ বাকি, জেতার জন্য নিজেদের উজাড় করে দিতে হবে।” গোটা দল তাই প্রস্তুত হচ্ছে রোববারের অপেক্ষায়। সেদিন দিনের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডস যদি অঘটন ঘটাতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, এরপর বাকিটুকু বাংলাদেশের হাতেই। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে হারাতে পারলেই সেমি-ফাইনাল!
অনুশীলন শেষে সেই আশার স্পন্দন তাসকিন আহমেদের কণ্ঠে। “এই গ্রুপে সব ম্যাচই ইন্টারেস্টিং হয়েছে। এখনও যে কোনো কিছু হতে পারে। মিরাকল হয়ে যেতে পারে। মূল লক্ষ্য থাকবে, শেষ ম্যাচটায় একই স্পিরিট নিয়েই যাব। ভালো খেলে জিততেই চাইব। যদি ম্যাচ জিততে পারি, পরে কী হবে ক্যালকুলেশন পরে দেখা যাবে। মূল লক্ষ্য পরের ম্যাচটা জেতা।”
সেমি-ফাইনাল নিয়ে সরাসরি প্রশ্নে অবশ্য একটু সতর্ক হয়ে গেলেন তিনি। “আসলে ওখানে অনেক ক্যালকুলেশনের বিষয় আছে। আমাদের মূল লক্ষ্য জেতাই। সেমি-ফাইনাল হবে কী হবে না, সেটা তো বলতে পারছি না। কিন্তু মূল চাওয়া পরের ম্যাচ জেতা।” তবে স্বপ্নের আঁকিবুকি যে কিছুটা হলেও দলের ভেতর আছে, তা বোঝা গেল পরের কথায়। অন্যান্য দলের ম্যাচগুলির ওপর দল খুব ভালোভাবে খেয়াল রাখছে বলেই জানালেন। টিভিতে দেখে কিংবা স্কোর দেখে খোঁজখবর রাখছেন সবাই। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাকিস্তানের জয় যেমন বেশ নাড়া দিয়েছে বাংলাদেশ দলকে। যদিও সবকিছু নিজেদের হাতে নেই এখনও। তবু একটু হলেও বেড়েছে সম্ভাবনা। ‘মিরাকল’ কিছু ঘটতে পারে বলে আশার উৎস সেখানেই।
তবে নেদারল্যান্ডস কোনো চমক দেখিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েও দেয়, বাংলাদেশ কি পারবে পাকিস্তানকে হারাতে? দুই দলের সবশেষ ৮ টি-টোয়েন্টিতে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। মুখোমুখি ১৭ ম্যাচে পাকিস্তান জিতেছে ১৫টিতেই। বাংলাদেশের দুই জয়ের একটি ২০১৫ সালে, আরেকটি ২০১৬। শক্তি-সামর্থ্যেও পাকিস্তান এগিয়ে যোজন যোজন। সব মিলিয়ে এই ম্যাচে বাংলাদেশ নামবে পরিষ্কার ‘আন্ডারডগ’ হিসেবে।
সেই বাস্তবতা স্বীকার করতে কোনো দ্বিধা নেই তাসকিনের। তবে জয়ের আশা করতেও তো বাধা নেই! সেই আশা পূরণের সম্ভাব্য ছকও দেখালেন তিনি। “আসলে টি-টোয়েন্টি খেলাটায় অনুমান করা কঠিন। যে কোনো কিছু হতে পারে। একটা ওভারে মোমেন্টাম বদলে যেতে পারে। আমরা বোলাররা যদি ভালো বোলিং করতে পারি এবং যদি আগে বোলিং করি, ওদের যদি ১৫০-১৬০ রানের মধ্যে আটকাতে পারি, তাহলে হয়তো আমাদের তা তাড়া করা সম্ভব। আর আগে যদি ব্যাটিং করি, ভালো যদি স্কোর হয়, আমাদের ডিফেন্ড করার সামর্থ্য আছে। ভালো ক্রিকেট খেললে জিততে পারব, এই আশাটা আছে।”
এমনিতে লম্বা সফরের শেষ ভাগে বাংলাদেশের ভেঙে পড়ার নজির আছে অনেক। মাঠের ক্রিকেটের মনোযোগ থাকে না, মন চলে যায় দেশে। কিন্তু এবার উন্নতির তাড়নায় ক্রিকেট ছাড়া অন্য কিছু দল ভাবছে না বলেই দাবি তাসকিনের। “আমাদের সবার লক্ষ্য, ব্যক্তিগত বলে বা দল হিসেবে, লক্ষ্য উন্নতি করা। এটাই মূল লক্ষ্য আমাদের। আগেও বলেছি, আমরা শিখছি, উন্নতির চেষ্টা করছি। আমরা কিন্তু আগের থেকে ভালো ক্রিকেট খেলছি। এখনও আমরা গ্রেট দল হয়ে যাইনি, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। মূল লক্ষ্য থাকবে যাতে এই উন্নতির ধারা বজায় রেখে, সবাই সবার জায়গা থেকে উন্নতি করে যেন আরও ভালো দল হতে পারি।”


প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২২ | সময়: ৫:২৫ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ