সর্বশেষ সংবাদ :

মানুষকে কতটুকু দিলেন, সেটাই তারা মনে রাখবে: প্রধানমন্ত্রী

সানশাইন ডেস্ক: দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করতে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, “আমি মনে করি আজকের নবীন কর্মকর্তা যখন এলাকায় যাবেন কাজ করবেন, অবশ্যই এ বিষয়টা দেখবেন যে, মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলেন সেখানেই তৃপ্তি। যতটুকু দিয়ে আসতে পারবেন সেটাই মানুষ মনে রাখবে।”
বুধবার সকালে বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে ১২৪তম, ১২৫তম এবং ১২৬তম আইন ও প্রশাসন প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বান তুলে ধরে তার মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “জনগণের সেবক হিসেবেই নিজেদেরকে গড়তে হবে। আমরা এটাই চাই যে, জনগণের সেবা করে এই দেশকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, উন্নত করতে হবে।”
পাকিস্তান আমলে বাঙালি কর্মকর্তাদের বঞ্চনার কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, বাঙালি কর্মকর্তারা মেধাবী ও জ্ঞানে-গুণে এগিয়ে থাকলেও পাকিস্তান আমলে তারা সচিব হওয়ার সুযোগ পেতেন না। “এই কথাটা মনে রাখতে হবে যে একজন সচিব বাঙালি ছিল না। কোনো জেনারেল, মেজর জেনারেল, ব্রিগেডিয়ার কেউই বাঙালি ছিল না। একজন মাত্র কর্নেল হতে পেরেছিল। সব পদগুলো তারাই দখল করে ছিল।
“দেশ স্বাধীন হয়েছে বলে এখন সব কিছু হওয়া যাচ্ছে। এই কথাটা মনে রেখেই সবাইকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের ব্রত নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।” মহামারীর কারণে যাতায়াত সীমিত থাকায় বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে সর্বশেষ ২০১৯ সালে গিয়েছিলেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “বলতে গেলে একটা কারাগারে বন্দি জীবনই কাটাতে হচ্ছে। শুধু ওই ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সবার সাথে যোগাযোগ করা। আমি মাঝে মাঝে বলি যে যতবার গ্রেপ্তার হয়েছি, বিশেষ করে ২০০১ সালে দীর্ঘদিন বন্দিখানায় ছিলাম একটা ছোট জেলে। আর এখন একটা বড় জেলে আছি। সেখানে আমার যাতায়াতটা খুবইৃতবে এখানে এটুকু সুবিধা হলো আমি বাড়ির মধ্যে সব জায়গায় ঘুরতে পারি আর যোগাযোগটা করতে পারি।
“তবে এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি এবার নিজেই যাব (বিএসএস প্রশাসন একাডেমিতে)। তার কারণও আছে। একটা কারণ হচ্ছে আমাদের সময়ও তো শেষ হয়ে আসছে। পাঁচ বছর আমাদের সময়। দ্বিতীয় কারণটা হচ্ছে আমার বয়স, ৭৬ বছর। ৭৬ বছর তো অনেক বয়স। বুড়ো হয়েছি। কাজেই কতদিন আর চলতে পারব, আসতে পারব। যেকোন এক সময়, কোন এক সময় অক্কা পেয়ে যাব তার তো ঠিক নেই।”
“সেজন্য আমি ভাবলাম এবার আর আমি কোন বাঁধা মানব না। আমাকে আসতেই হবে,” বলেন তিনি। নানা বাধা বিপত্তি পার করে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে মন্তব্য করে দেশকে এগিয়ে নিতে আওয়ামী লীগ সরকারের নানা পরিকল্পনার কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন দলের সভানেত্রী। মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সবকিছুর মূল্যবৃদ্ধির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি বহু আগে থেকেই এটা বলে যাচ্ছি যে, এক ইঞ্চি জমি যেন খালি না থাকে। কারণ আমাদের খাদ্য আমাদের উৎপাদন করতে হবে। খাদ্য আমাদের প্রক্রিয়াজাত করার জন্য আমাদের ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন (শিল্পায়ন) দরকার এবং আমাদের দেশের মানুষের খাদ্যর নিরাপত্তা, পুষ্টির নিরাপত্তা সেগুলো আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
“আমাদেরটা নিজেদের করতে হবে এটা সব সময় মনে রাখতে হবে। কারণ বাইরে থেকে নিয়ে আসা এটা অত্যন্ত কঠিন একটা সময় আমাদের পার করতে হচ্ছে। কাজেই সেই অবস্থায় আমরা যদি নিজেরা দাঁড়াতে পারি সেটাই আমাদের জন্য সব থেকে ভালো হয়।” জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আলী আজম, বিসিএস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর মোমিনুর রশিদ আমিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।


প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২২ | সময়: ৭:০২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ