আবারও ধর্মঘটে রামেকের ইন্টার্নরা

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী কেজিএম শাহরিয়ারের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসকদের উপর হামলা ও ভাঙচুরে জড়িতদের গ্রেফতারসহ তিন দফা দাবিতে একদিন পর আবারও কর্মবিরতি শুরু করেছে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা।
শনিবার দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ৭২ ঘন্টার কর্মবিরতির ডাক দেয়া হয়। এর পর আর কোন ইন্টার্ন চিকিৎসক কাজে যাননি। ফলে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ কার্যত হাসপাতাল চিকিৎসক শূন্য হয়ে পড়েছে।
ইন্টার্নদের দাবিগুলো হলো, হামলায় জড়িতদের বিচার, রাবি ছাত্র শাহরিয়ারের মৃত্যুর কারণ উদঘাটন এবং হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করেন ইন্টার্ন পরিষদের সভাপতি ডা. ইমরান হোসেন। কর্মবিরতি চলাকালে প্রতিদিন হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দেন তিনি। এছাড়াও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মামলা রেকর্ড করে তিনদিনের মধ্যে হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার করা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচী দেয়ার হুশিয়ারি দেন ডা. ইমরান।
ইন্টার্ন পরিষদের আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেন, হাসপাতাল পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও রাজশাহী-২ (সদর) আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ও বিএমএর সাধারণ সম্পাদক নওশের আলী, হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. শামীম ইয়াজদানী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ও মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. খলিলুর রহমান।
আগামী ২৬ অক্টোবর হাসপাতালের পরিচালনা পরিষদের জরুরী সভার আহবানের ঘোষণা দিয়ে সমাবেশে সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ওই সময় সেদিনের ঘটনা পর্যালোচনা করা হবে। এর পর পরবর্তি করনীীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহন করবে হাসপাতাল পরিচালনা পরিষদ।
এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়ের করা অভিযোগ মামলা হিসেবে রেকর্ড না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাংসদ বাদশা। তিনি রাবি ছাত্রের মৃত্যুর কারণ উৎঘাটন এবং হাসপাতালে হামলাকারিদের শনাক্ত করার জন্য পুলিশের প্রতি আহবান জানান।
ইন্টার্নি পরিষদের আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, হাসপাতাল পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও রাজশাহী-২ (সদর) আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ও বিএমএর সাধারণ সম্পাদক নওশের আলী, হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. শামীম ইয়াজদানী, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ও মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. খলিলুর রহমান।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার রাত আটটার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী কেজিএম শাহরিয়ার হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে যান। এরপর দ্রুত তাকে অ্যাম্বুলেন্সে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে ৮ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এর পর চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে হাসপাতালে ভাঙচুর চালায় রাবির শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা রাবির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পরে রাত ১২টার দিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা সবাই একযোগে হাসপাতাল ত্যাগ করেন।
এ ঘটনায় ওই রাতেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও রাবির তিন শতাধিক ছাত্রের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করে তারা। বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরের রাজপাড়া থানায় হাসপাতালের পক্ষে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে অভিযোগ দেন।
এর পর বৃহস্পতিবার বিকেলে হাসপাতাল প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা শেষে শুক্রবার সকাল থেকে কাজে ফেরার ঘোষণা দেন হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. ইমরান হোসেন। এ সময় হাসপাতালে হামলা ও ভাঙচুরে জড়িতদের গ্রেফতারের ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন তিনি। শুক্রবার সকাল থেকে কাজে যোগ দেন ইন্টার্নরা। তবে মামলা রেকর্ড না হওয়া এবং কাউকে গ্রেফতার না করায় নতুন করে তিনদিনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হল।


প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২২ | সময়: ৬:২১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ