সর্বশেষ সংবাদ :

সময়ে পদ্মার পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলের ক্ষেত

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর পবায় পদ্মায় অসময়ে পানি বৃদ্ধিতে জলমগ্ন হয়েছে চরের মাসকলাই ক্ষেতসহ ফসলি জমি। উপজেলার পদ্মার ২টি চরের জমির মাসকালাই ক্ষেত ডুবে গেছে। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা। সম্পূর্ণ নষ্ট হলে এতে চাষিরা প্রায় ১২ কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়বে।
এদিকে লোকসানের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরুপনে ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর ও রোকনুজ্জামান। এবারে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মাসকলাইয়ের চাষ হয়েছে এক হাজার দুইশো’ হেক্টর (আট হাজার নয়শো’ ২৮ বিঘা) জমিতে। যারমধ্যে হরিপুর পদ্মার চর মাঝাড়দিয়ার ও হরিয়ান ইউনিয়নের চর খিজিরপুরেই মাসকলাইয়ের চাষ হয়েছে ৬৩০ হেক্টর (চার হাজার ছয়শো’ ৮৭ বিঘা)। উপজেলার এই দুই চরেই বেশী অর্ধেক জমিতেই চাষ হয়েছে মাসকলাই। এর থেকে প্রায় সাড়ে নয় লাখ কেজি (প্রায় সাড়ে ২৩ হাজার মণ বা সাড়ে ২৩ মে.টন) মাসকলাই উৎপাদনের সম্ভাবনা ছিল। বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি মাসকলাই বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। সেই হিসেবে পদ্মার এই আকস্মিক পানি বৃদ্ধিতে চাষিরা প্রায় ১২ কোটি টাকা লোকসানের আশঙ্কায় আছেন। এতে ভেঙ্গে যেতে বসেছে আগামী দিনের জীবিকা নির্বাহ ও ভবিষ্যৎ স্বপ্ন।
পদ্মার চরের এসকল জমিতে আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে চরাঞ্চলে বসবাসরত মানুষ। উজান থেকে নেমে আসা পানিতে জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। পানি বৃদ্ধি চলমান থাকলে আরও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
চর মাঝারদিয়াড়ের মাসকলাই চাষি আলম শেখ, ইউপি’র সদস্য হুমায়ুন, নৌকার মাঝি জিল্লুর রহমান প্রায় ১২০ বিঘা জমিতে মাসকলাই চাষ করেছিলেন। জানা যায়, চরবাসিদের একমাত্র অর্থকরি আবাদ হচ্ছে মাসকলাই। দেখা যায় নারী চাষি শেফালী বেগম, হাজরা, আচেরা বেগম ক্ষেতের পাশে দাঁড়িয়ে আহাজারি করছেন। তারা বলেন পানিতে ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় তাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে।
এদিকে চরখিদিরপুরের ইউপি সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, এই চরের একমাত্র অর্থকরি ফসল মাসকলাই। এই মাসকালাই বিক্রির টাকা দিয়েই তারা জীবিকা নির্বাহ, ছেলে মেয়ের লেখা-পড়ার খরচ ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদি করে থাকেন। এবারে তার ৪২ বিঘা জমিতে মাসকালাইয়ের আবাদ ছিলো। তার মতো ভাষাণ আলীর ৩৫ বিঘা, মোসলেম উদ্দিনের ২০ বিঘা, হায়দারের ২০ বিঘা, শুকুর আলী ১৫ বিঘা, আজিজুলের ৪০ বিঘা, নাসিরের ১০ বিঘা, মতিউরের ২০বিঘা, জালালের ২০বিঘা, আনারুলের ৮ বিঘা, জালাল উদ্দিনের ২০বিঘা ও নাজমুলের ১৮বিঘার মাসকলাইয়ের ক্ষেত পদ্মার পানি বৃদ্ধিতে তলিয়ে গেছে। তারা সরকারের সুদৃষ্টি ও সহযোগিতা দিতে আবেদন জানান।
এব্যাপারে হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বজলে রেজবি আল হাসান মুঞ্জিল ও হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, চর এলাকায় অর্থকরি ফসল বলতেই মাসকলাই। আর মাসকলাইয়ের বীজ ছিল সরকারি প্রণোদনা। এবারে হঠাৎ পদ্মার পানি বৃদ্ধিতে অনেক জমি তলিয়ে গেছে। আবাদ নষ্ট হলে চাষিরা জীবন জীবিকা নিয়ে বিপাকে পড়বেন।
পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, চরের জমি খুবই উর্বর। সব জমিতে ব্যাপক সবজি চাষ হয়। অসময়ে পদ্মার যে হারে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এখনো অল্প ক্ষতির মধ্যেই রয়েছে। আর পানি না বাড়লে ভয় নেই। এক-দুই দিনের মধ্যে পানি নেমে গেলে তেমন ক্ষতি হবে না। অক্টোবর মাসে পদ্মায় পানি বাড়ে না। কিন্তু জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে পানি বাড়ছে। ইতিমধ্যে উপজেলার পদ্মার নিচু চর কিছুটা জলমগ্ন হয়েছে। এতে চাষিদের কিছুটা হলেও ক্ষতি হবে।


প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২২ | সময়: ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ