মানববন্ধন ও স্বারকলিপি প্রদান: নগরীতে ‘শব্দদূষণ’ রোধের দাবি

স্টাফ রিপোর্টার: নির্মল বায়ুর শহর রাজশাহীসহ দেশেজুড়ে নগরায়নের নয়া মহামারি ও নীরব ঘাতক শব্দদূষণ রোধে প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রন) বিধিমালা, ২০০৬’র বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন তরুণরা। রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় রাজশাহীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে রাজশাহীর উন্নয়ন গবেষণাধর্মী তরুণ সংগঠন ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস, সামজিক সংগঠন এলিজ্যাবল ইয়ুথ ফর ইভোলিউশন-আই এবং স্বপ্নচারী যুব উন্নয়ন সংস্থা যৌথভাবে এ দাবিতে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন শেষে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।
ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাসের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিকের সঞ্চালনা ও পরিচালনায় এবং সভাপতি শামীউল আলীম শাওনের সভাপতিত্বে মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন রাজশাহীর প্রবীন সংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. মুস্তাফিজুর রহমান খান আলম।
মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দীয় কমিটির সহ সভাপতি সাবিত্রী হেমব্রম, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের দপ্তর সম্পাদক সূভাষ চন্দ্র হেমব্রম, সামাজিক কল্যান সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সম্রাট রায়হান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী গবেষক শহিদুল ইসলাম প্রমূখ। মানববন্ধনে বিষয়ভিক্তিক বক্তব্য দেন, সামজিক সংগঠন এলিজ্যাবল ইয়ুথ ফর ইভোলিউশন-আই’র সভাপতি গোলাম নবী রনি এবং স্বপ্নচারী যুব উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি রুবেল হোসেন মিন্টু।
প্রধান বক্তা এ্যাডভোকেট মুস্তাফিজুর রহমান খান আলম বলেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশন শহরের সৌন্দর্য্য বর্ধনের মাধ্যমে দর্শনদারীতে এগিয়ে গিয়েছে তবে গুণ বিচারে পিছিয়ে রয়েছে। রাজশাহীতে শব্দদূষণ রোধে তরুণরা এগিয়ে এসেছে তারা সমাবেশ করছে এটাই বড় আশা জাগানিয়া বিষয়। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার, প্রশাসনের যেখানে ভূমিকা রাখা উচিৎ অথচ তারা নীরব ভূমিকা পালন করছেন। তরুণরা তাদের এ নীরবতাকে ভেঙ্গে দিতে কর্মসূচি পালন করছেন।
হাইড্রেলিক হর্ণ ব্যবহারের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের দেশের আইনে যেখানে হাইড্রোলিক হর্ণের ব্যবহার নিষিদ্ধ। ঠিক সেই দেশেই হাইড্রোলিক হর্ণের যতেচ্ছা ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। বিদেশ থেকে এ নিষিদ্ধ হর্ণ আমাদানি করা এমনকি দেশেও উৎপাদিত হচ্ছে। যা পুরোপরি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তিনি এ নিষিদ্ধ হর্ণের ব্যবহার আমদানি ও উৎপাদন বন্ধের পাশাপাশি শব্দদূষণ বন্ধে কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণের রাসিক মেয়র সহ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।
বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী গবেষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাই গ্রিন সিটি প্রকৃত পক্ষেই গ্রিন সিটি হয়ে গড়ে উঠুক। শুধু নামে নয় পুরুষ্কারে নয় আমরা চাই সত্যিকারের একটি গ্রিন সিটি। যার শব্দ দূষণ থাকবে না একই সঙ্গে সত্যিকারের সবুজায়ন দেখতে চাই।’
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘রাজশাহী শহরজুড়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ সকল ধরণের যানবাহণের সংখ্যা যেমন বেড়েছে ঠিক তেমনি ভাবে বেড়েছে শব্দদূষণের মাত্রাও। নীরব এলাকাগুলোতেও থেমে নেই শব্দদূষণ। এতে নগরীতে বসবাসকরীরা শারীরিকভাবে ক্ষতির সম্মূখিন হচ্ছেন। তাই অবিলম্বে নগরীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সাগুলোর হর্ণসহ সকল যানবাহনে ব্যবহৃত হাইডোলিক হর্ণ অপসারণ এবং চলাচলকারী ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সার সংখ্যা নিয়ন্ত্রনে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগে অভিযান পরিচালনা করতে হবে।”
অতিরিক্ত শব্দের পরিবেশেও শিশুর জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে বলে উল্লেখ করে বক্তারা আরো বলেন, শব্দদূষণের স্বাস্থ্য ঝুঁকির তালিকা নেহাত ছোট নয়। যেমন- কানে কম শোনা, বধিরতা, হৃৎকম্প, হৃদরোগ, শিশুদের লেখাপড়ায় মনোযোগ কমে যাওয়া, মানসিক বিকাশ বিঘ্নিত হওয়া, খিটখিটে মেজাজ, পেটের আলসার, অনিদ্রা বা ইনসমনিয়া, মানসিক উত্তেজনা ও উদ্বিগ্নতা বা অ্যাংজাইটি, স্ট্রোক ইত্যাদি। কর্মজীবীদের ভেতরে কাজের দক্ষতা, মনোযোগ কমে যাওয়া ও সহজেই মেজাজ হারিয়ে ফেলার প্রবণতা দেখা যায়।
মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশানার জিএসএম জাফরউল্লাহ এনডিসির মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর রাজশাহীসহ দেশেজুড়ে নগরায়নের নয়া মহামারি ও নীরব ঘাতক শব্দদূষণ রোধে এবং শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রন) বিধিমালা, ২০০৬ এর যুগোপোযোগী সংস্কার ও বাস্তবায়ন করা সহ ১৪ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করেন। তরুণ সংগঠনের প্রতিনিধিরা ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাসের সভাপতি শামীউল আলীম শাওন, সামজিক সংগঠন এলিজ্যাবল ইয়ুথ ফর ইভোলিউশন-আই’র সভাপতি মো. গোলাম নবী রনি এবং স্বপ্নচারী যুব উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি রুবেল হোসেন মিন্টু স্বাক্ষরিত এ স্বারকলিপি রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশানারের কার্যালয়ে জমা দেন। এছাড়াও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র (প্রতিমন্ত্রী) এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল এবং রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিককে নির্মল বায়ুর শহর রাজশাহীতে নীরব ঘাতক শব্দদূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ১৩ দফা দাবি সম্বলিত তিনটি পৃথক পৃথক স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।


প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২২ | সময়: ৬:৩৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ