আজ সপ্তমী : ঢাকের তালে রাজশাহীতে শুরু শারদীয় দুর্গোৎসব

স্টাফ রিপোর্টার : মহাষষ্ঠীতে পূজার মধ্যদিয়ে রাজশাহীতেও শুরু হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় বোধনের মাধ্যমে মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতীমা থানে উঠে। শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে পুরো রাজশাহী মহানগরী। আনন্দ ও উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে দুর্গোৎসব উদযাপনে মহানগর জুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় সায়াংকালে কল্পারম্ভ এবং বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠী পূজা সম্পন্ন হয়। এদিন সকাল থেকে চন্ডিপাঠে মুখরিত রয়েছে মহানগরীর সকল মণ্ডপ।
রাজশাহী মহানগর হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার ঘোষ জানান, মহানগরীজুড়ে এখন সাজ সাজ রব বিরাজ করছে। সবাই দুর্গাপূজার উৎসবের আমেজে মজেছেন। রাজশাহীতে অন্যান্যবারের চেয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দ্বিগুণ করা হয়েছে। এতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা খুশি।
হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি তপন কুমার সেন জানান, রাজশাহীতে এই বছর ৪৫০টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন হচ্ছে। এরমধ্যে মহানগরীতে রয়েছে ৭৬টি মণ্ডপ এবং ৯টি উপজেলায় ৩৭৪টি। এর মধ্যে রাজশাহীর পবা উপজেলায় মণ্ডপ রয়েছে- ১৮টি, গোদাগাড়ী উপজেলায়- ৩৯টি, তানোর উপজেলায়- ৬০টি, মোহনপুর উপজেলায় ২২টি, বাগমারা উপজেলায়- ৮০টি, দুর্গাপুর উপজেলায়- ১৭টি, পুঠিয়া উপজেলায়- ৫২টি, বাঘা উপজেলায়- ৪৬টি, চারঘাট উপজেলায়- ৪০টি। এখন পর্যন্ত রাজশাহীতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সর্বত্র আনন্দ-উৎসবেই শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন করা হচ্ছে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক জানান, শারদীয় দুর্গাপূজা সৌহার্য্য ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদযাপনের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যরাও প্রতিটি মণ্ডপে দায়িত্ব পালন করছেন। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করেছেন। কোনো জরুরি অবস্থা সৃষ্টি হলে নিকটস্থ পুলিশ ফাঁড়ি, থানা অথবা তাৎক্ষণিকভাবে জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’-এ ফোন করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশ কমিশনার।
নিয়ামতপুর প্রতিনিধি জানান, ‘মাগো তুমি আসবে বলে, হৃদয় জুড়ে খুশির লহর ও মা তোমার পথ চেয়ে, আমি শুধুই গুনি প্রহর।’ ষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে, ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসবের। এর আগে সায়ংকালে দেবীর বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে নিয়ামতপুর উপজেলার প্রত্যেকটি পূজা মন্ডপে ব্যানার এমনকি কার্ড দিয়ে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি, এছাড়া শুভেচ্ছো জানিয়েছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ¦ আবুল কালাম আজাদ, সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান বিপ্লব।
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের বন্ধন আরো সুসংহত হোক- এ কামনা করে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি বলেন, ধর্মীয় উৎসবের পাশাপাশি দুর্গাপূজা দেশের জনগণের মাঝে পারস্পরিক সহমর্মিতা ও ঐক্য সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শারদীয় দুর্গোৎসব সত্য-সুন্দরের আলোকে ভাস্বর হয়ে উঠুক।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ বলেন, দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসবই নয়, এটি এখন সার্বজনীন উৎসব। অশুভ শক্তির বিনাশ এবং সত্য ও সুন্দরের আরাধনা শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
দুর্গা শব্দের অর্থ হলো ব্যহু বা আবদ্ধ স্থান। যা কিছু দুঃখ-কষ্ট মানুষকে আবদ্ধ করে, যেমন- বাধাবিঘ্ন, ভয় দুঃখ, শোক, জ্বালা, যন্ত্রণা এসব থেকে তিনি ভক্তকে রক্ষা করেন। শাস্ত্রকাররা দুর্গার নামে অন্য একটি অর্থ করেছেন। দুঃখের দ্বারা যাকে লাভ করা যায় তিনিই দুর্গা। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্য ক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন।
হিন্দু পূরাণ মতে, দুর্গাপূজার সঠিক সময় হলো বসন্তকাল। কিন্তু বিপাকে পড়ে রামচন্দ্র, রাজা সুরথ এবং বৈশ্য সমাধি বসন্তকাল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শরতেই দেবীকে অসময়ে জাগ্রত করে পূজা করেন। সেই থেকে অকাল বোধন হওয়া সত্ত্বেও শরৎকালে দুর্গাপূজা প্রচলিত হয়ে যায়।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন রোববার মহাসপ্তমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৬টা ৩০মিনিটে। সোমবার মহাঅস্টমীর পূজা আনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে এবং বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। সন্ধিপূজা শুরু হবে বিকাল ৪টা ৪৪ মিনিটে এবং সমাপনী বিকাল ৫টা ৩২ মিনিটের মধ্যে। মঙ্গলবার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে নবমী পূজা। পুস্পাঞ্জলি সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে।
পরদিন বুধবার সকাল ৬ টা ৩০ মিনিটে দশমী পূজা আরম্ভ, পুস্পাঞ্জলি সকাল ৮টায় এবং পূজা সমাপনী ও দর্পণ বিসর্জন হবে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের মধ্যে। সন্ধ্যা আরাত্রিকের পর প্রতিমা বিসর্জন ও শান্তিজল গ্রহণের মধ্যদিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসব।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নিয়ামতপুর উপজেলা শাখার সভাপতি বাবু ঈশ^র চন্দ্র বর্মন বলেন, নিয়ামতপুর উপজেলায় এ বছর ৬৩টি মন্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন হবে। গত বছর নিয়ামতপুর উপজেলায় দুর্গাপূজার সংখ্যা ছিল ৬১টি। এবার এ সংখ্যা ০২টি বেড়েছে। উপজেলায় বাহাদুরপুর ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশী। বাহাদুরপুর ইউনিয়নে এ বছর ১৯টি মন্ডপে পূজা হবে।
এদিকে, দুর্গাপূজা উপলক্ষে নিয়ামতপুর উপজেলার প্রতিটি পূজা মন্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসারসহ অন্যান্য আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ ও আনসারের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মন্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবেন।
নিয়ামতপুর উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুরঞ্জন বিজয়পুরী বলেন, বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা শনিবার থেকে শুরু হয়েছে, যা আগামী ৫ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
দূর্গোৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, নিয়ামতপুর উপজেলা সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ হিন্দু সম্প্রদায়সহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিককে শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।


প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২২ | সময়: ৬:৫২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ