সর্বশেষ সংবাদ :

চারঘাটে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ব্যস্ত নারীরা

 

চারঘাট প্রতিনিধিঃ

তিন বছর ধরে সড়ক পরিষ্কার এর কাজ করেন চারঘাট উপজেলার বামনদিঘী গ্রামের নাজমা বেগম। স্বামী অসুস্থ থাকায় তার এই কাজের মাধ্যমে সংসার চলে। তিনি জানান, আমরা সাধারণত রাস্তার ছোটখাট মেরামত ও সংরক্ষণের কাজ করি।

 

যেমন- কার্পেটিংয়ের উপর ঘাস তোলা, সড়কের পাশে গর্তে পানি জমে থাকলে নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন করে দেয়া, গর্ত ভরাট করা, সড়কের শোল্ডারে মাটি সরে গেলে সেখানে মাটি দিয়ে মেরামত করা এবং ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে দেয়া ইত্যাদি। উপজেলার এলজিইডির কর্মকর্তাদের নির্দেশনা মোতাবেক মাসের একেক দিন একেক সড়কে কাজ করি।

 

 

শুধু নাজমা বেগমই নয় রাস্তা পরিষ্কারের সরঞ্জাম নিয়ে প্রতিদিন একদল নারী শ্রমিক গ্রামীণ সড়ক পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করছেন। তাঁরা প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কাজ করেন। আর এতে বদলে যাচ্ছে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার বিভিন্ন সড়কের চিত্র।

 

 

জানা যায়, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে নারীরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে সপ্তাহের ৬ দিন এ কাজ করছেন। উপজেলা এলজিইডির আওতাভুক্ত গ্রামীণ সড়কের দেখভাল তাঁদের হাতে। বিভিন্ন ইউনিয়নে ১১০ জন নারী এ কাজ করেন। এতে একদিকে যেমন গ্রামীণ সড়কগুলো প্রাণ ফিরে পেয়েছে, অপরদিকে এসব নারীরাও কাজের বিনিময়ে অর্থ পেয়ে সাবলম্বী হয়েছেন।

 

 

উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, পল্লী কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি-৩ (আরইআরএমপি-৩) এর আওতায় উপজেলার ছয় ইউনিয়নে ৬০ জন নারী কর্মী কাজ করেন। মাসিক ৭ হাজার ৫০০ টাকা বেতনে এই চাকরি করেন তাঁরা। এর মধ্যে মাসে ২ হাজার ৪০০ টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সঞ্চয় হিসেবে জমা রাখা হয়।

 

 

অন্যদিকে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ৫টি সড়কে চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক দল কর্মসূচি (এলসিএস) এর আওতায় দুই জন সুপারভাইজার (পুরুষ) ও ৫০ জন নারী কর্মী কাজ করছেন। তাঁরা মাসিক ৯ হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন। তাঁরাও মাসিক ৩ হাজার টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা রাখেন।

 

 

উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের নারী কর্মী নাসিরা বেগম বলেন, আমার স্বামী মারা যাবার পর না খেয়ে দিন কাটিয়েছি। এখন সড়ক পরিস্কার করার কাজ পাওয়ায় আয়ের সুযোগ হয়েছে। এতে তিনবেলা খাবারসহ সন্তানকে লেখাপড়া করাতে পারছি। এর সাথে সড়ক পরিস্কার রাখার মত মহৎ কাজও করতে পারছি।

 

 

উপজেলার নিমপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের পরিষদ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দুরে। আগে এই সড়কের দুপাশে আগাছা ও আবর্জনায় চলাচলে বিঘ্ন ঘটনো। এখন নারী শ্রমিকরা নিয়মিত এই সড়কে কাজ করে সড়কের চেহারা বদলে দিয়েছেন।

 

 

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন মনিটরিং করা হয়। এ জন্য উপজেলা প্রকৌশলী, উপসহকারী প্রকৌশলী ও সুপারভাইজারের সমন্বয়ে একটি দল রয়েছে।

 

 

তিনি আরও বলেন, নারী কর্মীদের মাধ্যমে সড়ক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হচ্ছে। গ্রামীণ পাকা সড়কের শোল্ডার, সড়কের স্লোপ, রেইনকাট মেরামত, বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচলের ফলে সৃষ্ট গর্ত ভরাট, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত ও ঝোপঝাড় পরিষ্কারের কাজ করছেন এসব নারী শ্রমিকেরা।

 

 

 

সানশাইন/তৈয়ব

 


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২ | সময়: ৭:১৫ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine