পাকিস্তানের বন্যায় মৃত্যু হাজার ছাড়াল, গৃহহীন কয়েক লাখ

সানশাইন ডেস্ক: পাকিস্তানে জুন থেকে শুরু হওয়া প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, গৃহহীন হয়েছে কয়েক লাখ মানুষ। স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশটির ৩ কোটি ৩৩ লাখ মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ভাষ্য দেশটির সরকারের। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
এ বন্যার কারণে ইতোমধ্যে দেশজুড়ে ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করছে পাকিস্তান সরকার।এ ছাড়া বর্ষা মওসুমের বিরামহীন এই বর্ষণকে ‘মহাকাব্যিক পর্যায়ের জলবায়ুজনিত মানবিক সংকট’ বলেও অভিহিত করেছে তারা। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কাজে সহায়তার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
জুন থেকে শুরু হওয়া অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে হড়কা বানও দেখা দেয়। দেশটির দক্ষিণাংশেই এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটেছে। সিন্ধু প্রদেশের ২৩টি জেলা এখনও বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। বেলুচিস্তান প্রদেশেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ।যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে।
দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ) বলছে, সর্বশেষ ১১৯ জনকে নিয়ে বন্যায় এ পর্যন্ত মারা গেছে ১০৩৩ জন; মৃতদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা ৩৪৮। গত ২৪ ঘন্টায় আহত ৭১ জনকে নিয়ে মোট আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫২৭ জনে। এনডিএমএ-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানজুড়ে গত ২৪ ঘন্টায় দেড়শ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং ৮২ হাজারের বেশি বাড়িঘর আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ভেঙেচুড়ে গেছে।
জুন মাসে বর্ষার শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৩ হাজার কিলোমিটারের বেশি রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেতু নষ্ট হয়েছে ১৩০টি আর চার লাখ ৯৫ হাজার বাড়ি ভেঙেচুড়ে গেছে অথবা ধ্বংস হয়েছে। এই বন্যাকে ‘অভূতপূর্ব’ এবং চলতি দশকের সবেচেয়ে ভয়াবহ ‘মানবিক বিপর্যয়’ বলে অভিহিত করেছেন পাকিস্তানের জলবায়ুমন্ত্রী শেরি রেহমান। রেহমান জানান. অন্যান্য বছরে এই সময় বর্ষাকাল বৃষ্টির তিন থেকে চারটি চক্রের মধ্য দিয়ে যায় কিন্তু এ বছর এখন বৃষ্টির অষ্টম চক্র চলছে।
মন্ত্রী রেহমান সিন্ধু প্রদেশের বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে জানান, সেখানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে। সেখানে ১০ লাখ তাবুর প্রয়োজন আর প্রতিবেশী বেলুচিস্তানে প্রয়োজন আরও ১০ লাখ তাবু। বেলুচিন্তানের বেশিরভাগ অঞ্চল বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ইন্টারনেট সেবা থেকে বিচ্ছিন্ন বলে জানান তিনি।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়, দেশটির বন্যা কবলিত চারটি প্রদেশে ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযানে সেনাবাহিনী কাজ করবে। এই চারটির মধ্যে দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ বেলুচিস্তানকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ধরে নেওয়া হয়েছে। তবে কোন প্রদেশে কত সংখ্যক এবং কোন সময়ে সেনা মোতায়েন হচ্ছে সেটি প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষ ও কেন্দ্রীয় সরকার আলোচনা করে নির্ধারণ করবে বলে জানিয়েছে সিএনএন।
এদিকে পাকিস্তানে সশস্ত্র বাহিনীও বলছে, বন্যায় আটকে পড়া দুর্গত এলাকা থেকে মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে তারা কাজ করছে। এছাড়া অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ ছাড়াও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এসবের পাশাপাশি দুর্গতদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী সংগ্রহ, পরিবহন এবং বিতরণে সহায়তা করার জন্য দেশটির বিভিন্ন স্থানে ত্রাণ কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে বলে জানায় দেশটির সেনাবাহিনী।
গত শুক্রবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ তার দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়ে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের অবহিত করেন। সে সময় তিনি জানান, কার্বন নিঃসরণের পাকিস্তানের ভূমিকা তুলনামূলক অল্প হলেও জলবায়ু পরিবর্তনে দেশটিকে বড় ধরনের মূল্য দিতে হচ্ছে। এদিকে দেশটির পরকিল্পনা ও উন্নয়নমন্ত্রী আহসান ইকবাল পৃথকভাবে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, তার দেশের ৩ কোটির বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যা মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের এজেন্সি অফিস ফর দ্য কোঅর্ডিনেশন অফ হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাফেয়ার্সও (ওসিএইচএ) দেশটির এই সংখ্যক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে বলেছে, তাদের মধ্যে এক লাখ ৮৪ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে আছেন। বলা হচ্ছে এই দুর্যোগের কারণে আর্থিক সংকটে আটকে থাকা পাকিস্তানের জন্য অর্থায়ন এবং পুনর্গঠন চেষ্টা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সহায়তা নিশ্চিতের জন্য দেশটিকে ব্যয় কাঁটছাটের পথে হাঁটতে হবে।


প্রকাশিত: আগস্ট ৩০, ২০২২ | সময়: ৬:২০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ