সঞ্চিত অর্থ ব্যয়ের স্রোতে মানুষ

উপল আরাফাত: জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। যার কারণে সব ধরনের পণ্যের দামও বাজারে বেড়েছে। বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যে সংসার চালাতে আগে খরচ হতো ২০ হাজার। বর্তমানে সেই ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজারে। পণ্যের দাম বাড়লেও বাড়েনি আয়। আয়-ব্যয়ের সমন্বয়ে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। বেশিরভাগ মানুষের থমকে থাকা আয় নিয়ে বেড়ে যাওয়া ব্যয়ের স্রোতে মানুষ। সে কারণে খরচের দড়িতে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে টানছে মানুষ। যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। বাজারে সব ধরনের পণ্যের বিক্রি কমেছে।
জ্বালানি তেলের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে বাজারে। নিত্যপণ্যের দাম মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে বিক্রি কমেছে। ফলে খুচরা ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে।
বাজারে সবজির দোকন থেকে শুরু করে, গারর্মেন্ট, কসমেটিকস, টাইলস্, রড-সিমেন্ট, শো-পিচ, রেস্টুরেন্টগুলোতে বিক্রি কমে গেছে। দামের চাপে মানুষ যতোটা পারে নিজেদের আয়েশ থেকে বেরিয়ে এসেছে। জীবন চালাতে অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনগুলো মেটানোতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
রাজশাহীর পবা উপজেলার বাগধানী বাজারের গারর্মেন্ট ব্যবসায়ী হুমায়ন কবীর জানান, মানুষে আগের চেয়ে অনেক হিসাব করে চলছে। আগে কেউ দোকানে এলে শার্ট বা প্যান্ট পছন্দ হলে একটির জায়গায় দুইটিও কিনেছে। কোন পোষাক চোখে ধরলে মানুষ নেয়ার চেষ্টা করছে বা নিয়েছে। কিন্তু এখন চিত্র বেশ পাল্টেছে। প্রয়োজনের বেশি কেউ কিছু কিনতে চায় না।
গারর্মেন্ট ব্যবসায়ী হুমায়ন কবীর জানান, আগের চেয়ে পণ্যের দামও বেড়েছে। দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির আগে তার দোকানে দিনে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার কাপড় বিক্রি হতো। এখন সেই বিক্রি এসে ঠেকেছে এক হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা।
বিক্রি কমেছে নির্মান সামগ্রীরও। জ¦ালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পরপরই বাজারে দাম বেড়েছে সিমেন্ট, রডসহ অন্যসব নির্মাণ সামগ্রীর। সে কারণে যারা নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন বা করবেন তাদের হিসেবও এলোমেলো। অনেকেই নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছেন। আবার অনেকেই শুরু করার পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছেন। রাজশাহী মহানগরীর উপশহর এলাকার বাবুল হোসেন। তার বাড়িটি নির্মাণের জন্য প্লান পাশ করিয়েছেন। নির্দিষ্ট একটি অর্থের জোগান নিয়ে এগিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ার কারণে সব হিসেব তার এলোমেলো।
বাবুল হোসেন জানান, তার ৬ তলা ভীত দিয়ে এক তলা বাড়ি নির্মাণ করতে তার খরচ হওয়ার কথা ১৮ লাখ টাকা। কিন্তু এখন হিসেব অন্য। সেই হিসেব ঠেকবে ২১-২২ লাখ টাকায়। বাঁকি অর্থ তার কাছে নেই। সে কারণে এখন তিনি বাড়ি নির্মাণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মেঘনা সিম ডিলাক্স রাজশাহী জোনের টেকনিক্যাল সাপোর্ট এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার কামরুল ইসলাম জানান, জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে সিমেন্টসহ অন্যসব নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়েছে। দাম বাড়লে প্রভাব কিছুটা পড়বেই বাজারে। যারা বাড়ি নির্মানের চিন্তা করছিল তাদের হিসেব মিলছে না। নতুন করে বাড়ি বা অন্য কোন স্থাপনা নির্মানের কাজ শুরু করার হার কমেছে ২০ শতাংশের মতো। সে কারণে সিমেন্ট সেলসের উপরে কিছুটা প্রভাব পড়েছে।
আবাসন ব্যবসাতেও নেমেছে ধ্বস। ফ্লাট বা প্লট কিনতেও মানুষের মধ্যে অনিহা দেখা দিয়েছে। রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়া আমচত্বর এলাকার প্লট ব্যবসায়ী আওয়াল হোসেন জানান, আয়ের তুলনায় ব্যয় বৃদ্ধি হওয়াতে মানুষের জমানো অর্থে ব্যয় হতে শুরু হয়েছে। আগামীতে কি হবে তা নিয়েও মানুষ বেশ শঙ্কিত। সে কারণে মানুষ জমি কিনছে না। তার আবাসন এলাকাগুলোতে যেখানে মাসে ২০ থেকে ২৫টি প্লট বিক্রি হয়। তবে চলতি মাসের ২০ দিন পার হয়ে গেলেও মাত্র ৩টি প্লট বিক্রি হয়েছে।
রাজশাহীর পবা উপজেলার বাগধানী বাজারের কসমেটিকস ব্যবসায়ী উজ্জ্বল হোসন জানান, তার দোকানের বিক্রিও অর্ধেকে নেমেছে। যেখানে মানুষ চাল, ডালের দাম মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে কিভাবে সাজগোজের পণ্যে কিনবে।
সবজির বাজারেও পড়েছে প্রভাব। রাজশাহী মহানগরীর বায়া বাজারে খুচরা সবজি ব্যবসায়ী জমশেদ আলী জানান, মানুষ আগে যেটা এক কেজি কিনতে সেটা এখন ২৫০ গ্রাম কিনছে। বেচাবিক্রির বারো অবস্থা। সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে গেছে। বিক্রি যা হয়েছে তাতে খরচই উঠবে না।
জমশেদ আলী বলেন, মানুষের কামাই আগের মতোই রয়েছে। কিন্তু খরচ বেড়েছে অনেক। মানুষ ওই টাকার মধ্যেই পণ্যে কেনার চেষ্টা করছে।
সবক্ষেত্রে বিক্রি কমায় ব্যবসায়ীদের মধ্যেও হতাশা দেখা দিয়েছে। বিক্রি কমে যাওয়ার তাদের সংসারে টানাটানি হতে শুরু করেছে। সামনের দিনগুলো কীভাবে চলবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন তারা।


প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২২ | সময়: ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ