বিমে রড না দিয়েই নির্মাণ প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ভেঙে দিলো প্রশাসন

সানশাইন ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহারের ঘর নির্মাণে রড ব্যবহার না করায় সেগুলো ভেঙে দিয়েছে দোয়ারাবাজার উপজেলা প্রশাসন। জানা গেছে, অনিয়ম করে ঘর নির্মাণ হচ্ছে; শুক্রবার রাতে এমন খবরের ভিত্তিতে উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের আজমপুর এলাকায় যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)।
বিমে রড ছাড়া নির্মাণের দায়ে ঘরগুলো ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন তারা। শনিবার ভোর পর্যন্ত পাঁচটি ঘর ভেঙে ফেলা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় আরও ছয়টির কাজ। স্থানীয়রা জানান, নির্মাণ কাজে কি পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে, তা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। ঘরে দেওয়া বিমের মাথায় মাত্র চার টুকরো রড দেওয়া হয়, যাতে কেউ সন্দেহ না করেন। ঘরের ভেতরে কোনো দেয়ালে বা মেঝেতে রডের অস্তিত্ব নেই। আরও কিছু দুঃসাহসিক অনিয়ম করা হয়েছে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এপ্রিলে উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের আজমপুর এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ৩৭টি ঘর নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এ কাজের ঠিকাদার উপজেলা সদরের রায়নগরের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য তাজির উদ্দিন। কাজের শুরুতেই নির্মাণ ঠিকাদার নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। গত জুনে বন্যার আগে কিছু ঘরের কাজ হয়। পরে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আবার শুরু হলেও বেশিরভাগ কাজ করানো হচ্ছিল রাতে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।
শুক্রবার রাতেও ধারাবাহিকভাবে কাজ করাচ্ছিলেন ঠিকাদার তাজির উদ্দিন। এ সময় স্থানীয়রা বিষয়টি উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) জানান। তাদের অভিযোগ- উপহারের ঘরের বিমে অভিনব কায়দায় বাইরে থেকে চার টুকরো রড দেওয়া হয়েছে। বিমের ভেতর কোনো রড নেই। সিমেন্ট কম দেওয়া হচ্ছে। ঢালাই করা হচ্ছে ইট সোলিং না করেই। কাদা মাটির উপর মসলা তৈরি করে। মেঝেতে লেপে দেওয়া হচ্ছে।
দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণে অনিয়ম হওয়ায় শুরুতেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা প্রতিবাদ করেন। তারা উপজেলা প্রশাসনকে ঠিকাদার তাজির উদ্দিনের অনিয়মের কথা জানান। ওই সময় প্রতিবাদকারীদের উল্টো হেনস্তা করায় অনিয়ম বেশি হতে থাকে।
ঠিকাদার তাজির উদ্দিন বলেন, ঘর নির্মাণের জন্য কমিটি আছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সভাপতি এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সেক্রেটারি। আমি মালামাল সরবরাহ করি। আমি ঠিকাদার নই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা প্রিয়াংকা বাংলানিউজকে বলেন, স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে আজমপুর এলাকায় গিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। ঠিকাদারকে নিজ খরচে ভেঙে ফেলা অংশে কাজ করে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।


প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২২ | সময়: ৫:১১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ