আশ্রয়ণ প্রকল্প বদলে দিচ্ছে আবাদপুরের আর্থ-সামাজিক পরিবেশ, সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান

রানা হামিদ, বদলগাছী(নওগাঁ) 

 

নওগাঁর বদলগাছীর একটি প্রত্যন্ত গ্রাম আবাদপুর। উপজেলা সদর থেকে আট কিলোমিটার দূরে আবস্থিত এই গ্রামের অনেক বড় একটা অংশ ছিল অনাবাদি ও পতিত। রয়েছে সাড়ে তিনশ বিঘার বেশি অংশ জুড়ে একটি বিল। কিন্তু আশেপাশে জনবসতি না থাকায় এসব এ উপজেলার মানুষের কোনো কাজে আসতো না। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্প পাল্টে দিয়েছে আবাদপুর এলাকার চিত্র। বদলে দিচ্ছে এলাকার আর্থ-সামাজিক পরিবেশ। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ।

 

আশ্রয়ণ প্রকল্পের কোল ঘেঁষে রয়েছে একটি সুবিশাল বিল। বিলের অপর পাশে মহাদেবপুর উপজেলা। ২০১৩ সালে দুই উপজেলার সংযোগ স্থাপনের জন্য একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। তখন থেকেই দুই এলাকার মানুষ মিলে আবাদপুরে একটি সাপ্তাহিক হাট বসানোর ব্যবস্থা করে। সপ্তাহের প্রতি সোমবারে এখানে হাট বসে। খুবই ছোট পরিসরে হলেও হাটের দিন এখানে কাঁচা তরকারি, বিলের টাটকা দেশি মাছ, হাঁস-মুরগী, কবুতরসহ বিভিন্ন দ্রব্য সামগ্রী কেনাবেচা হয়। পাশ্ববর্তী মহাদেবপুর উপজেলার রাইগাঁ ইউনিয়নের কালনা, নাউরাইল, সিলিমপুর, কাদিয়াল, বামনকুড়ি এবং বদলগাছীর ভাতশাইল ও চাকরাইল গ্রামের মানুষ এখানে হাটবাজার করতে আসে। এটা হাটের দিনের চিত্র। কিন্তু অন্য দিনগুলোতে নির্জনতার সুযোগ নিয়ে এখানে মাদকসেবীরা আড্ডা জমাত। এমনকি ভরদুপুরে এখানে ছিনতাইয়ের নজিরও আছে। আশ্রয়ণ প্রকল্প এই এলাকার শুনশান নিরবতা কাটিয়ে কর্মচাঞ্চল্য জাগিয়ে তুলেছে।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মুজিববর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আবাদপুরের আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘিরে জেগে উঠেছে প্রাণের স্পন্দন। পূর্বে এখানে মাত্র চারটি দোকান ছিল যা শুধু বিকেলে ২/৩ ঘণ্টার জন্য খোলা হতো। কিন্তু আশ্রয়ণ প্রকল্পের বদৌলতে দোকানগুলো এখন সাড়াদিন এবং রাতেও খোলা থাকে। শুধু তাই নয়, প্রকল্পকে ঘিরে নতুন নতুন দোকান গড়ে উঠছে এবং পুরনো দোকানগুলোকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। পূর্বে এখানে বিদ্যুৎ ছিল না। প্রকল্পের কারণে প্রায় বারোশ মিটার দূর থেকে ১২টি বৈদ্যুতিক পোল বসিয়ে এখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ফলে ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের স্বপ্ন দেখছেন এখানকার মানুষ।

 

আবাদপুরের নিকটবর্তী মহাদেবপুর উপজেলার রাইগাঁ ইউপির লাউরাইল গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বাচ্চু। তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে নাপিতের কাজ করতেন। আশ্রয়ণ প্রকল্প হওয়ায় তিনি হাটের পাশের পতিত জমিতে বাঁশ-কাঠ দিয়ে স্থায়ী বেড়ার ঘর নির্মাণ করছেন। স্থায়ীভাবে তিনি এখন এই ঘরে নাপিতের কাজ করবেন।

 

আবাদপুর গ্রামের শ্রী লিটন চন্দ্র মন্ডল সারাদিন নিজের জমিতে ক্ষেত পরিচর্চার কাজ করেন। প্রতিদিন তার সাইকেলে করে বিকেল বেলা মুদি সামগ্রী নিয়ে মাটিতে বিছানা ফেলে দোকান পেতে বসেন। তার আশা এখানে একটা স্থায়ী দোকানঘর নির্মাণ করে ব্যবসা আরো প্রসারিত করবেন। কারণ এখন বেচা কেনা আগের চেয়ে বেড়েছে।

 

বদলগাছী সদর ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে আবাদপুরে শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্প হওয়ায় অবহেলিত এ জায়গাটি অনেক মূল্যবান হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য নতুন করে রাস্তা নির্মিত হচ্ছে। এর ফলে জনসমাগম বাড়বে। এখানে যে হাটটি আছে সেটাকে আরো সম্প্রসারিত করা হবে। ইতিমধ্যে প্রকল্পকে ঘিরে নতুন নতুন দোকানপাট নির্মিত হয়েছে। এখানে যে বিশাল বিল রয়েছে তা আমরা খননের ব্যবস্থা করবো যাতে করে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। পূর্বে জনমানবহীন এই জায়গাটি মাদকসেবীরা অভয়াশ্রম হিসেবে ব্যবহার করতো। প্রকল্পের কারণে লোকালয় তৈরি হওয়ায় মাদকসেবীরা এখানে আর মাদক সেবন করতে পারবে না।

 

তিনি আরো বলেন, এলাকাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। এই সৌন্দর্য যাতে আশে পাশের মানুষ উপভোগ করতে পারে আমি তার জন্য এখানে একটা পার্ক নির্মাণের প্রস্তাব করবো।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলপনা ইয়াসমিন বলেন, আবাদপুরের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনা করেই আমরা এখানে আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখানে বিভিন্ন ধরণের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কর্মমুখী প্রশিক্ষণ ও ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করে দেবো যাতে করে ঐ এলাকার মানুষের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এছাড়াও এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অত্যন্ত নয়নাভিরাম। এই সৌন্দর্যের প্রতি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণের ব্যবস্থাও আমরা করবো।

সানশাইন / শাহ্জাদা মিলন


প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২২ | সময়: ১২:২৯ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine