সর্বশেষ সংবাদ :

বড়াইগ্রামে অপারেশনের টেবিলে নবজাতকের মৃত্যু, তদন্তে কমিটি

বড়াইগ্রাম প্রতিনিধি: বিয়ের ১০ বছর অপেক্ষার পর গর্ভধারণ করেছিলেন গৃহবধূ আছিয়া খাতুন (৩০)। কিন্তু অপারেশন টেবিলেই নবজাতকের মৃত্যু হওয়ায় মাতৃত্বের সাধ পূরণ হলো না তার।
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জোনাইল বাজারে বেসরকারী ওআর খান মেমোরিয়াল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটেছে। যথাযথ প্রস্তুতি আর প্রয়োজনীয় মেডিকেল চেক-আপ না করে তড়িঘরি অপারেশন করাসহ চিকিৎসকের অবহেলাতেই এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ শিশুটির স্বজনদের।
তবে চিকিৎসকের দাবি, মায়ের পেটে দুদিন আগেই মারা গেছে বাচ্চা। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এদিকে, বুধবার বিকালে এ ঘটনা তদন্তে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মেহতাজুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠণ করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। গৃহবধূ আছিয়া খাতুন উপজেলার বড়াইগ্রাম ইউনিয়নের দ্বারিকুশী পুরাতন পাড়া গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেনের স্ত্রী।
আলমগীর হোসেন জানান, সোমবার তার স্ত্রীর পেটের ব্যথা উঠলে জোনাইল ওআরখান মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ সময় তার স্ত্রীর পেটে বাচ্চা নড়াচড়া করছিল। সন্ধ্যার পর ডাক্তাররা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও স্বজনদের অনুমতি ছাড়াই তাড়াহুড়া করে অপাশেন থিয়েটারে নিয়ে যায়। আমি বললেও তারা কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নাই। আমার নিকট থেকে সাদা সম্মতি পত্রে সাক্ষর নেন তারা। পরে সেখানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. ডলি রাণী সিজারিয়ান অপারেশন করেন।
তিনি ওটি থেকে বের হয়ে এসে জানান, মায়ের পেটে শিশুটি দুদিন আগেই মারা গেছে। এ কথা শুনে স্বজনরা শিশুটিকে দেখতে চাইলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা শিশুটিকে দেখতে দেননি।
প্রসূতির স্বামী আরো জানান, এর আগে সিজার করার জন্য আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে ডা. ডলি রাণীর কাছে আসলে তিনি কিছু পরীক্ষা করে দুই সপ্তাহ পর নিয়ে আসার পরামর্শ দেন। সে অনুযায়ী গত সোমবার এ নিয়ে এলে এ ক্লিনিকের ডা. ফাইজুন নাহার দৃষ্টি তাকে ভর্তি করে নেন। কিছুক্ষণ পর ডা. ডলি রাণী এসে আমার অনুমতি ছাড়াই সিজারিয়ান অপারেশন শেষে বাইরে এসে মৃত সন্তানের খবর দেন। সকালেও যে বাচ্চা পেটের ভেতর নড়াচড়া করলো, সে বাচ্চা দুদিন আগে মারা যায় কিভাবে? আসলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকের খামখেয়ালীপনায় আমার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। আমি এ ব্যাপারে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
হাসপাতালটির ব্যবস্থাপক কামরুজ্জামান স্বপন বলেন, অভিভাকের অনুমতি সাপেক্ষেই অপারেশন করা হয়েছে। তবে সাদা সম্মতি পত্রে সই নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি নীরব থাকেন।
ডা. ডলি রানী বলেন, আমি অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে দেখি প্রসূতির এনেসথেসিয়া করা হয়ে গেছে, আর বাচ্চার কোন পালস্ নেই। এনেসথেসিয়ার ডা. আসিফের কাছে আমি পরীক্ষা নিরীক্ষার কাগজ দেখতে চাইলে জানান রুগীর লোক পরীক্ষা করাবে না। আমি তো অজ্ঞান রুগিকে নিচে নামিয়ে পরীক্ষা করাতে পারি না। তাই বাধ্য হয়েই আমি সিজার করেছি। মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে সকল পরীক্ষা করেই অপারেশন করা হয়েছে বলে দাবি করেন এনেসথেসিয়া চিকিৎসক ডা. আসিফ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. খুরশিদ আলম জানান, বিষয়টি তদন্তের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু সিদ্দিক জানান, বিষয়টি শুনেছি, তবে লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২২ | সময়: ৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ