কৃষি খাতে ভূর্তুকির ফলে চাঙা হচ্ছে গ্রামীন অর্থনীতি

নুরুজ্জামা,বাঘা : কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। এ দেশে বড়-বড় কল কারখানা কিংবা খনিজ সম্পদ না থাকলেও , কৃষি খাতে যে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে সেটা সকলের জানা। কৃষির বহুমুখীকরণের মাধ্যমেই অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, প্রচলিত কৃষি কাজের বাইরে অর্থাৎ ধান-পাট এসব চাষের বাইরে কৃষির বিভিন্ন উপখাত যেমন, মৎস্য চাষ, হাঁস-মুরগীর খামার, পশু পালন, দুগ্ধ খামার ছাড়াও বছরব্যাপী সবজি ও ফলের চাষ ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। এর ফলে যেমন বহু বেকারের কর্ম সংস্থান হয়েছে, তেমনি চাঙ্গা হয়েছে গ্রামীণ অর্থনীতি।

সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকার কৃষি খাতে ব্যাপক পরিমান ভূর্তুকি দেয়ার পাশা-পাশি এই খাতকে আরো শক্তিশালী করতে ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করেছেন। এর ফলে উপজেলা পর্যায়ে গ্রামের কৃষকদের তালিকা করে কৃষি, মৎস্য এবং প্রাণিসম্পদ উৎপাদনের উপরে ট্রেনিং করানো হচ্ছে। এ সকল ট্রেনিং এর ফলে ইতোমধ্যে রাজশাহীর বাঘায় গড়ে উঠেছে প্রায় দেড় শতাধিক লিড ফার্মার। যারা গত কয়েব বছর ধরে দেশের বাইরে আম রপ্তানি করে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন।

এক পরিসংখ্যানে দেখে গেছে, বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছরে অনেক যুবক চাকরি হারিয়ে শহর ছেড়ে গ্রামে এসে মাছ চাষ, হাস-মুরগীর খামার, নয়তো গরুর খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এর বাইরেও বাণিজ্যিকভাবে সবজি এবং হরেক রকম ফলমূল চাষ করে গ্রামীণ অর্থনৈতিক অবকাঠামোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া গ্রামের মা-বোনরা অনেকে হাঁস-মুরগি পালন, গরু-ছাগল পালন, ভেড়া পালন, টার্কি পালন, বাড়ির আঙ্গিনায় ফলমূল, শাক-সবজি ইত্যাদি চাষের মাধ্যমে বাড়তি আয় করে অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছেন। এর বাইরে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের ঘর দেওয়ার প্রকল্পও চাঙা করছে গ্রামীণ অর্থনীতি ।

দেশের অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত করতে হলে কৃষির বহুমুখীকরণ ও বাণিজ্যিক করণের বিকল্প নেই। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট শ্রম শক্তির ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ কৃষি খাতে নিয়োজিত। কৃষিতে বহুমুখীকরণ ও বাণিজ্যিকিকরণের মাধ্যমে মোট শ্রমশক্তির শতকরা ৮০ ভাগকে নিয়োজিত করে দেশে কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জন সম্ভব।

মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মতে, অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে স্বাদুপানির মাছ এর উৎপাদন হার বেড়েছে মূলত ইলিশের সৌজন্যে। মাছের উৎপাদনে বিশ্বে মধ্যে সর্বকালের রেকর্ড ভেঙেছে। স্বাদুপানির মাছে বাংলাদেশ তার তৃতীয় স্থানটি ধরে রেখে উৎপাদন বাড়ানোর হারে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। চাষের মাছে দেশ গত ছয় বছরের প্রতিবারই পঞ্চম হয়েছে।

এ নিয়ে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ হয়েছে। সেই তথ্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো মতে, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) মৎস্য সম্পদের অবদান এখন ৪ শতাংশ। বাংলাদেশের ৫৬ শতাংশ মাছ আসছে পুকুর থেকে। পুকুরে মাছ চাষের কারণে গত তিন দশকে মোট উৎপাদন বেড়েছে ছয়গুণ।

সার্বিক বিষয়ে বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, বর্তমান সরকার কৃষি খাতে বীজ সরবরাহ ছাড়াও সার ও কিটনাশক ক্রয়ের জন্য যে ভাবে কৃষকদের আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন তা অতীতের কোন সরকার দেননি। এ দিক থেকে কৃষিতে বিপ্লব ঘটতে চলেছে। তিনি বলেন, এখন উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শীতকালিন শাক-সবজি ও ফুল পাওয়া যাচ্ছে গরম মৌসুমে ।

তিনি বলেন আমি এর আগে অনেক জায়গায় চাকরি করেছি। তবে বাঘা উপজেলার মতো এই উন্নশীল উপজেলা আমি কোথাও পাইনি। এখানে দুইটি পৌর সভা এবং ছয়টি ইউনিয়ন মিলে যে পরিমাণ শাকসবজি উৎপাদন হয় তার সমপরিমান উৎপাদন হয় কেবল উপজেলার দুর্গম পদ্মার চরাঞ্চলে।

অপর দিকে দেশ বিখ্যাত আমের কথা উচ্চরণ করলে প্রথমেই বাঘার নাম চলে আসে। কারণ মাটিগত কারনে এ উপজেলার আম সারাদেশ বাসীর কাছে ব্যাপক সমাদৃত। তাঁর মতে, রাজশাহীর আট টি উপজেলায় যে পরিমান আম উৎপাদন হয় তার সমপরিমান আম উৎপাদন হয় কেবল বাঘা উপজেলায়।


প্রকাশিত: জুলাই ২৫, ২০২২ | সময়: ১১:১৫ পূর্বাহ্ণ | সানশাইন