সর্বশেষ সংবাদ :

আবাসন সংকটে রাবির ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবকরা

স্টাফ রিপোর্টার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ২৫ জুলাই। প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিপুলসংখ্যক ভর্তিচ্ছূ পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক আসেন রাজশাহীতে। তারা অধিকাংশই নগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে থাকেন। তবে এবার হোটেলগুলো এক মাস আগে থেকেই হাউজফুল। কোন হোটেলেই মিলছে না সিট। হোটেলগুলোতে একটি সিট যেন সোনার হরিণ। নগরীর মেসগুলোও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এদিকে মেসগুলোতে থাকতে অভিভাবকদের গুণতে হবে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। এমন তীব্র আবাসন সংকটে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ভর্তি”ছু পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

 

প্রতিবছর পরীক্ষার্থীদের আবাসনের সমস্যা থাকলেও বিশ্বিবদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টিকে কোন সময়েই গুরুত্ব দেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে পরীক্ষার্থীদের থাকতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর রিডিংরুম, টেলিভিশন রুম, পেপাররুম, ডায়নিং, গ্রন্থাগার চত্বর, মসজিদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের ছাত্রাবাসগুলোতে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল। এই সংকটের কারণে অনেকে পরীক্ষা দিতেই আসেন না। আবার এই সুযোগে ছাত্রাবাস মালিকরাও রাত প্রতি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫০ থেকে ২০০টাকা পর্যন্ত ভাড়া নিয়ে থাকে।

 

তবে এবার ছাত্রাবাসগুলোতে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোন ধরনের টাকা না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মেস মালিক সমিতি। তবে অভিভাবকদের ক্ষেত্রে রাত প্রতি টিন শেড বা সেমি পাকা কক্ষে ৩০০ টাকা এবং পাকা কক্ষের জন্য ৫০০ টাকা করে ভাড়া পরিশোধ করতে হবে।

 

শুধু ছাত্রাবাসই আগত পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য পর্যাপ্ত নয়। ফলে তাদেরকে ছুটতে হয় শহরের আবাসিক হোটেলগুলোতে। আর এই সুযোগে এক রাতের ভাড়া দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন হোটেল ব্যবসায়ীরা। কিন্তু আবাসিক হোটেলগুলোতে কোন সিট নেই। কর্তৃপক্ষ বলছে এক মাস আগেই সব সিট বুকিং হয়ে গেছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পরেছেন অভিভাবকরা।

 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষা আগামী ২৫ থেকে ২৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদিন চার শিফটে ১৮ হাজার করে মোট ৭২ হাজার ভর্তি”ছু পরীক্ষার্থী এই ভর্তি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবেন। এ বছর ৪ হাজার ২০টি আসনের বিপরীতে মোট আবেদন জমা পড়ে ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৬৮টি।

 

বিশ^বিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মামুনুর রশীদ। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী থেকে পরীক্ষা দিতে আসবেন তার চাচাতো বোন। সাথে তার চাচাও আসবেন। চাচাতো বোনকে হলে বান্ধবীর কাছে রাখার ব্যবস্থা করেছেন। আর চাচাকে রাখতে নগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে একটি সিটের জন্য হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু কোন সিট পাননি তিনি।

 

মামুনুর রশীদ বলেন, গত তিনদিন ধরে শহরের হোটেলগুলোতে গিয়ে এবং ফোন করে কোনো সিট খুঁজে পাচ্ছিনা। আমার চাচাতো বোন এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসবে। সাথে চাচাও আসবেন। সে জন্যই যে কোন হোটেলে ২৪ তারিখ রাতে একটি সিট দরকার। কিন্তু রাজশাহীর কোথাও কোনো সিট নেই। ম্যানেজাররা বলছেন অনেক আগেই নাকি সব সিট বুকিং হয়ে গেছে।

 

একই অবস্থা ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিভাগের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলামের। ঢাকা থেকে তার চারজন আত্মীয় আসবে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে। তাদের কারো পরীক্ষা ২৬ জুলাই আর কারো ২৭ জুলাই। তবে দুদিনের কোনো সিটই খুঁজে পাননি তিনি। বিভিন্ন এলাকায় তিনি খোঁজ নিয়েও আবাসিকে কোনো ব্যবস্থা করতে পারেননি।

 

তিনি বলেন, ঢাকা থেকে চারজন আত্মীয় অভিভাবকসহ পরীক্ষা দিতে আসবেন। তাদের জন্যই রুম খুঁজছেন। সকাল থেকে অন্তত ১০টি হোটেল ঘুরেছেন। কোথাও একটিও রুম পাননি। এখন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কোথায় রাখবেন, তা নিয়ে পড়েছেন বিড়ম্বণায়।

 

নগরীর উপশহর এলাকার আবাসিক হোটেল ‘রাজশাহী ইন রেসিডেন্সিয়াল’। এই হোটেলেও পরীক্ষার তিনদিন কোনো রুম ফাঁকা নেই। অধিকাংশ রুম বুকিং হয়ে গেছে ঈদের আগেই। আর ঈদের পর হাউজফুল। পরীক্ষার এই তিনদিন নগরীর আবাসিক হোটেলগুলোতে এমনই সিটের সংকট দেখা দিয়েছে।

 

হোটেলের ম্যানেজার শান্ত ইসলাম বলেন, ‘আমাদের হোটেলে পরীক্ষার ওই কয়েক দিনের জন্য খুব চাপ আছে। আমার এখানে ৩২টি রুম আছে। বেশির ভাগ রুমই এক মাস আগে থেকেই বুকিং হয়ে আছে। ৮০ শতাংশ রুম ঈদের আগেই শেষ হয়ে গেছে। ২০ শতাংশ রুম ঈদের পরেই শেষ হয়েছে। এখন কোনো সিট ফাঁকা নেই।’

 

রাজশাহী আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার হাসান কবির বলেন, ‘প্রতি বছরই এই সময়টায় এ ধরনের সংকট তৈরি হয়। রাজশাহীতে সব মিলিয়ে ৫০টি আবাসিক হোটেল আছে। এগুলোতে আসনসংখ্যা সর্বসাকুল্যে ১৮০০ থেকে দুই হাজার। কিš‘ ভর্তি পরীক্ষার এই সময়টাতে আমরা হোটেল মালিকরা বিব্রত হই, বিড়ম্বণাতেও পড়ি। কারণ চেনাজানা অনেকেই আছেন, যারা হোটেলে সিট চান। কিš‘ দেওয়ার উপায় থাকে না।’

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আবাসিক হলগুলোতে পরীক্ষার্থীরা তাদের পরিচিতজনদের কাছে থাকতে পারবে। হল প্রাধ্যক্ষ চাইলে আবাসিক হলের মসজিদসহ কমন স্পেসগুলোও তারা ব্যবহার করতে পারবে। আর যেহেতু অভিভাবকদের হলগুলোতে থাকার সুযোগ থাকে না সেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়ামসহ বিভিন্ন ফ্রি স্পেসগুলোতে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে।’

 

সানশাইন / শামি


প্রকাশিত: জুলাই ২১, ২০২২ | সময়: ১০:৫৭ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine