ঈদের শেষ মুহূর্তে কামারপাড়ায় বিরামহীন কর্মব্যস্ততা

এনায়েত করিম
ঈদুল আজহা তথা কুরবানির ঈদের আর মাত্র বাকি দুই দিন। শেষ সময়ে কুরবানির পশু কেনার পাশাপাশি দিনভর সমান তালে চলছে- হাসুয়া, বটি, ছোড়া, চাপাতি ইত্যাদি ধারালো অস্ত্র ধার (শাণ) ও তৈরির কাজ। ফলে টুং টাং শব্দে মুখরিত রাজশাহীর কামারপাড়াগুলো। ব্যস্ততা বেড়েছে এই পেশার মানুষদেরও। বছরের অন্য দিনগুলো অনেকটা অলস সময় পার করলেও কুরবানি ঈদের আগের এই সময়ে কামারদের দম ফেলার সময় নেই।

রাজশাহীর বিভিন্ন কামার পল্লীতে ঘুরে দেখা গেছে, কামারদের মধ্যে কেউ লোহা আগুনে গরম করছেন, কেউ বা সেই লোহাকে পিটিয়ে বিভিন্ন আকার দিচ্ছেন। আবার কেউ বা তৈরি হওয়া জিনিসে ধার দিচ্ছেন। তবে লোহা ও কয়লাসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে এসব পণ্যের দামও। এতে বাজেটের বাইরে চলে যাওয়ায় অস্ত্র না তৈরি করেই ফিরে যাচ্ছেন অনেকে। ফলে অন্যবারের তুলনায় এবার কামারপাড়ায় ভিড় কম।

এসব বিষয়ে কথা হয় রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের রনহাট কামার পল্লীর সুদেব কর্মকারের সাথে। প্রবীণ এই কামার বলেন, কুরবানির ঈদের জন্য দীর্ঘ ১১ মাস অপেক্ষায় থাকি। ঈদের আগের এক মাস কাজের চাপে দম ফেলার অবকাশ থাকে না। এবার ঈদের আর মাত্র দুইদিন বাকি। ফলে কাজ চলছে ভালোই, তবে আগের সেই চাপ নেই।

এদিকে, হাসুয়া, বটি, ছোড়া, চাপাতিসহ সব ধরনের ধারালো অস্ত্রের দাম আগের তুলনায় দাম অনেক বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। রাজশাহীর শিরোইল স্টেডিয়াম মার্কেটের ভাঙড়ি পট্টিতে ধারালো অস্ত্র তৈরি করতে আসা গোলাম রাব্বানী, রবিনসহ অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সবকিছুর দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। তাই নতুন তৈরি না করে পুরাতনগুলোই ধার (শাণ) করিয়ে নি”িছ।

দাম বৃদ্ধির বিষয়ে পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের রনহাট কামার পল্লীর বাসুদেব কর্মকার বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সাথে লোহা ও কয়লাসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের দাম বেড়েছে। ফলে হাসুয়া, বটি, ছোড়া, চাপাতিসহ সবকিছুই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১০০ টাকার ছুরি এখন ১৫০ টাকা, বড়গুলো ২৫০ টাকা ও ৪০০ টাকার চাপাতির দাম বেড়ে ৬০০ থেকে সাড়ে ৬০০ টাকা হয়েছে। ফলে অনেক ক্রেতা এসে ফিরে যাচ্ছেন। তারপরও বেচাকেনা মোটামুটি হচ্ছে, তবে যতটা আশা করেছিলাম, ততটা না।

একই সুরে কথা বলেন, রনহাট কামার পল্লীতে চাপাতি কিনতে আসা ভ্যান চালক আবদুল আজিজ বলেন, সবকিছুরই দাম বেড়েছে। ছুরি-কাঁচির দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। তাই পণ্যটা মজবুত পেতে নতুন করেই তৈরি করে নিচ্ছি। এদিকে, রাজশাহীর শিরোইল স্টেডিয়াম মার্কেটের ভাঙড়ি পট্টিতে ৩০ বছর ধরে কামার পেশায় জড়িত ভেলু কর্মকারের সঙ্গেও কথা হয়। তিনি বলেন, বছরের ১১ মাসে তাদের ব্যবসা হয় এক রকম আর কুরবানির ঈদের আগের এক মাসে ব্যবসা হয় আরেক রকম। ঈদুল আজহা এলেই বেচা বিক্রি ও ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ফলে কয়েকদিন ধরে বেশ কাজের চাপ বেড়েছে।

লাল চাঁন কর্মকার নামে এই পট্টির আরেকজন কামার বলেন, তুলনামূলক ভালোই কাজ হচ্ছে তাদের। এখানে পুরানো অস্ত্র ধার দেয়া ছাড়াও অনেকেই নতুনভাবে তৈরি করে নিচ্ছেন। কেউবা রেডিমেট কিনে নিচ্ছেন। তবে অস্ত্র ধার করানোর সংখ্যাই বেশি। কয়েকজন কামারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্প্রিং লোহা ও কাঁচালোহা সাধারণত এ দুই ধরনের লোহা ব্যবহার করে হাসুয়া, বটি, ছোড়া, চাপাতিসহ অন্যান্য উপকরণ তৈরি করা হয়।

 

স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি উপকরণের মান ভালো, দামও বেশি। আর কাঁচা লোহার তৈরি উপকরণগুলোর দাম তুলনামূলক কম। লোহার মান ভেদে স্প্রিং লোহা ৬০০ টাকা, নরমাল ৩৫০ টাকা। স্প্রিং লোহা দিয়ে তৈরি পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১৫০ থেকে ২৫০, দা ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি ৩৫০ থেকে শুরু, বঁটি ২৫০ থেকে ৪৫০, চাপাতি ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

সানশাইন / শামি

 

 

 


প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০২২ | সময়: ৯:৩৪ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine