সর্বশেষ সংবাদ :

রামপালে উৎপাদন জুনেই, সোলার গ্রিডেও ঢাকাকে চায় দিল্লি

ঢাকা অফিস: সুন্দরবনের কাছে রামপালে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে যে ‘মৈত্রী’ তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চলছে, তাতে আর মাস চারেকের মধ্যেই উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে দিল্লি। তাছাড়া আরও বেশি পরিমাণে সৌরশক্তিকে কাজে লাগাতে ভিয়েতনাম থেকে সুদূর আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তৃত যে ‘ট্রান্সকন্টিনেন্টাল গ্র্যান্ড সোলার গ্রিডে’র পরিকল্পনা করা হচ্ছে – ভারত চাইছে বাংলাদেশও তাতে যুক্ত হোক। ‘আন্তর্জাতিক সোলার অ্যালায়েন্সে’ বাংলাদেশ অনেক আগেই যোগ দিয়েছে, এখন এই আন্তর্জাতিক গ্রিডে এলে ক্লিন এনার্জির ব্যবহার যথারীতি অনেক বেশি বাড়বে। দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দিল্লিতে ভারতের বিদ্যুৎমন্ত্রী রাজ কুমার (আর কে) সিংয়ের সঙ্গে যে বৈঠক করেছেন, সেখানেই এই সব বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ভুটানে উৎপাদিত জলবিদ্যুৎ যাতে ভুটান, বাংলাদেশ ও ভারত – তিন দেশ মিলেই ব্যবহার করতে পারে, সেজন্য একটি ত্রিপাক্ষিক সমঝোতা রূপায়নে দিল্লির সহযোগিতাও চেয়েছেন বাংলাদেশের হাই কমিশনার। তার সেই প্রস্তাবেও ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন ভারতের বিদ্যুৎমন্ত্রী।  ২০১৯ সালে এ ব্যাপারে একটি চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে ভারত সরে দাঁড়ানোয় তা ভেস্তে গিয়েছিল – এখন আবার সেটিকে জিইয়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ। এই চুক্তি রূপায়িত হলে ভুটানে তৈরি জলবিদ্যুৎ ভারতের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে আনা সম্ভব হবে।  তবে রামপাল প্রকল্পের কমিশনিংয়ের ব্যাপারে আর কে সিং যে সময়সীমা জানিয়েছেন, সেটাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। যৌথ উদ্যোগের এই প্রকল্পটির বাস্তবায়নের কাজ করছে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এনটিপিসি (ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন) – কিন্তু পরিবেশকর্মীদের বাধা বা কোভিড মহামারি-জনিত লকডাউনের কারণে রামপালের কাজ বারে বারে বিলম্বিত হয়েছে। কিন্তু সব বাধাবিপত্তি দূর করে আর মাত্র মাস চারেকের মধ্যেই, অর্থাৎ জুন মাসের ভেতরেই রামপালের প্রথম ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা যাবে বলে এনটিপিসি মনে করছে। আর প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিট কাজ শুরু করবে এ বছরের ডিসেম্বর মাস নাগাদ। ভারতের বিদ্যুৎমন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে এই টাইমলাইন-ই দিয়েছেন। দুটো ইউনিট মিলে রামপালের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা হবে ৬৬০ মেগাওয়াট, আর ধারণা করা হচ্ছে এই প্রকল্প নির্মাণে শেষ পর্যন্ত খরচ হবে মোট ১৬০ বিলিয়ন বাংলাদেশি টাকা। এদিকে ভারতের বিদ্যুৎমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের ঠিক আগের দিন (সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি) হাই কমিশনার মুহাম্মদ ইমরান দিল্লির রেল ভবনে দেখা করেন ভারতের রেল ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী ভৈষ্ণাও-য়ের সঙ্গেও। এই মুহূর্তে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রেলওয়ে ট্র্যাক আপগ্রেড করার যে কাজ চলছে, সেই রেলপথ কোনও কোনও জায়গায় সীমান্ত ঘেঁষে গিয়েছে বলে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ সেই কাজে আপত্তি তুলছে। হাই কমিশনার মুহাম্মদ ইমরান এ বিষয়ে ভারতীয় রেলমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং সুষ্ঠু মীমাংসার অনুরোধ জানান। বিশেষ করে আখাউড়া-লাকসাম রেল সংযোগের (ভারত নিজের স্বার্থেই যে প্রকল্পটি দ্রুত চালু করতে চায়) কাজও যে এর ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে, রাষ্ট্রদূত সে বিষয়টি ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে মনে করিয়ে দিয়েছেন।  ভারত যে বাংলাদেশের রেল অবকাঠামোর উন্নয়নে সব ধরনের সাহায্য করতে আগ্রহী, রেলমন্ত্রী অশ্বিনী ভৈষ্ণাও-ও তা হাই কমিশনারকে জানিয়েছেন।  সেই সঙ্গেই তিনি আরও জানান, বাংলাদেশকে রেল লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন), ডিজেল ও বৈদ্যুতিক (ডেমু ও মেমু) ট্রেন, যাত্রীবাহী কামরা জোগাতে পারলে এবং সেই সঙ্গে আধুনিক রেলওয়ে সিগনালিং সিস্টেমের জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে পারলে ভারতও খুব খুশি হবে।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২২ | সময়: ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ