অধিনায়কোচিত ব্যাটিংয়ে মাহমুদউল্লাহর ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস

স্পোর্টস ডেস্ক: ব্যাটে রান ছিল, কার্যকর ইনিংসও এসেছে। কিন্তু মাহমুদউল্লাহর কাছ থেকে যেমন ইনিংস প্রত্যাশিত, এবারের বিপিএলে তেমন ইনিংস দেখা যাচ্ছিল না। বারবার ফিরছিলেন কাজ অসমাপ্ত রেখে। অবশেষে পাওয়া গেল সেই মাহমুদউল্লাহকে, যিনি দলের হাল ধরেন, ইনিংস গড়েন এবং কাজ শেষ করে ফেরেন!
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ব্যাট হাতে মিনিস্টার ঢাকাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন মাহমুদউল্লাহ। এবারের বিপিএলে পেলেন প্রথম ফিফটির দেখা। পরে সেটিকে রূপ দিলেন বিপিএলে নিজের সর্বোচ্চ ইনিংসে। স্পর্শ করলেন টি-টোয়েন্টিতে নিজের আগের সেরা ইনিংসও। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার ৩ চার ও ৪ ছক্কায় ৪১ বলে ৭০ রানের ইনিংস খেলেন মাহমুদউল্লাহ।
২৭২ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তার আগের সেরাও ছিল অপরাজিত ৭০। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টির ফাইনালে জেমকন খুলনার হয়ে ইনিংসটি খেলেছিলেন তিনি গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের বিপক্ষে। বিপিএলে আগের সেরা ছিল খুলনা টাইটানসের হয়ে ৬২। এবার মিনিস্টার ঢাকার হয়ে ৭০ রানের ইনিংসটি খেলার পথে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে বিপিএলে দুই হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন মাহমুদউল্লাহ।
ইনিংসটি জুড়ে ছিল তার সহজাত ছাপ, সেরা ছন্দে থাকলে যেমন খেলেন। সবশেষ ম্যাচে তাকে ব্যাটিংয়ে নামতে হয়নি। তামিম ইকবালের সেঞ্চুরি ও মোহাম্মদ শাহজাদের ফিফটিতেই বড় রান তাড়া করে ফেলে ঢাকা। তাই চট্টগ্রামের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে মাহমুদউল্লাহর প্রথম ইনিংস এটি। প্রথম সুযোগই কাজে লাগালেন দারুণভাবে।
মিরপুরে ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষায় ফেলা উইকেটে চার ম্যাচের দুটিতেই দলের সর্বোচ্চ রান মাহমুদউল্লাহর। প্রথম ম্যাচে পরিস্থিতির দাবি মিটিয়েই ২০ বলে ৩৯ রান করেন। তবে শেষ পর্যন্ত থাকতে পারেননি ক্রিজে। পরের ম্যাচে রান তাড়ায় আউট হয়ে যান ৫ রানেই।
তৃতীয় ম্যাচে পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে ৪৭ বলে ৪৭ রানের ইনিংস খেলেন। তবে দলকে জয়ের কাছে নিয়ে গিয়ে আউট হয়ে যান। পরের ম্যাচে উইকেটে থিতু হওয়ার পর দলের যখন চাওয়া বড় ইনিংস, তিনি আউট হয়ে ফেরেন ৩৩ রানে। এবারের ইনিংসে পূরণ করলেন যেন সবটুকু প্রত্যাশা। টানা তিন ম্যাচ জিতে উড়তে থাকা কুমিল্লার বিপক্ষে অষ্টম ওভারে ক্রিজে আসেন মাহমুদউল্লাহ। দল ততক্ষণে বেশ ভালো ভিত পেয়ে গেছে।
প্রথম ৬ বলে করেন ৩ রান। বিপিএল জুড়ে দারুণ বোলিং করা অফ স্পিনার নাহিদুল ইসলামকে চোখধাঁধানো শটে ছক্কায় উড়িয়ে দেখা পান প্রথম বাউন্ডারির। এরপর কেবল এগিয়ে চলা। এক-দুই করে নিয়ে সচল রাখের রানের চাকা। চতুর্দশ ওভারে শাফল করে পেসার শহিদুল ইসলামকে ছক্কা মেরে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে স্পর্শ করেন পাঁচ হাজার রান।
অন্য প্রান্তে চার-ছক্কা মারছিলেন ব্যাটসম্যানরা, আউটও হচ্ছিলেন। কিন্তু অবিচল ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ১৬ ওভার শেষে ২৭ বলে তার রান ছিল ৩৫। পরের চার ওভারে সেটা হয় দ্বিগুণ। সপ্তদশ ওভারে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মুস্তাফিজুর রহমানের মাথার ওপর দিয়ে মারেন চার। পরে করিম জানাতের কোমরের চেয়ে বেশি উচ্চতার ফুলটসকেও পাঠান বাউন্ডারিতে। জাতীয় দলের সতীর্থ মুস্তাফিজকে কাভার দিয়ে চার মেরে স্পর্শ করেন ক্যারিয়ারের ১৯তম ফিফটি, স্রেফ ৩৪ বলে।
ঝড়ের সবচেয়ে বড় ঝাপটা যেন শেষ ওভারের জন্য রেখে দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। করিমের শর্ট অব লেংথ ডেলিভারি উড়িয়ে মারেন সীমানার বাইরে। কোমর উচ্চতার ফুল টস পেয়ে কাজ লাগান আরেকটি ছক্কা। ইনিংসের শেষ বলে ২ রান নিয়ে ছুঁয়ে ফেলেন নিজের আগের সেরা। শেষ ওভার থেকে আসে ২০ রান, শেষ ৫ ওভারে ৬৪। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা মিনিস্টার ঢাকা পায় ১৮১ রানের পুঁজি।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২, ২০২২ | সময়: ৪:২৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ