সর্বশেষ সংবাদ :

ছুটি নিয়ে কারাগারে গিয়ে তথ্য গোপন আইসিবির রাজশাহী প্রধান বরখাস্ত

স্টাফ রিপোর্টার : অর্থ আত্মসাতের মামলায় কারাগারে গিয়েও অর্জিত ছুটি (ইএল) ভোগ করে তথ্য গোপন করায় ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) উপ-মহাব্যবস্থাপক ও রাজশাহীর শাখা প্রধান আব্দুল মোত্তালিবকে বহিস্কার করা হয়েছে। কারাগারে যাওয়ার বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে তিনি নিয়মিত অফিস করছিলেন। কিন্তু তথ্য ফাসের পর কারাগারে যাওয়ার দিন থেকেই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে আইসিবি। সর্বশেষ রবিবার আইসিবির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামাল হোসেন গাজী এক অফিস আদেশে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। সোমবার এ তথ্য জানা গেছে।
বরখাস্তের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, আইসিবি চাকরি প্রবিধানমালা ২০২১ এর প্রবিধি ৫৭ অনুযায়ী তাকে ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি শুধু খোরাকি ভাতা পাবেন। একই আদেশে তাকে আইসিবির প্রধান কার্যালয়ের ডিসিপ্লিন, প্রিভেন্স ও আপিল বিভাগে অবিলম্বে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ২৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ মামলায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর আব্দুল মোত্তালিবকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠান রাজশাহীর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত। তিনি কারাগারে ছিলেন ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ২৮ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত তাকে ছয় মাসের অন্তবর্তীকালীন জামিন দেন। এর দুই দিন পর ৩০ সেপ্টেম্বর কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
আব্দুল মোত্তালিব নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার ব্রহ্মপুর ইউনিয়নের ইয়ারপুরের বাসিন্দা। কিন্তু পরিবার নিয়ে রাজশাহী নগরীর উপশহর এলাকায় বসবাস করেন। দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময় ধরে তিনি রাজশাহী শাখায় কর্মরত। এই শাখায় অনিয়মের অন্ত নেই। কিন্তু বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে আব্দুল মোত্তালিব ক্যাজুয়াল সুপারভাইজার হিসেবে আইসিবিতে কর্মজীবন শুরু করেন। ওই সময় তিনি রাজশাহী কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। বিধি ভেঙে পড়াশোনা এবং চাকরি দুইই চালিয়ে যান তিনি। ১৯৮৯ সালে স্নাতকোত্তর সনদ দাখিল করে তিনি জুনিয়র অফিসার হন। সিনিয়র পাঁচ কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে ২০১৭ সালে তিনি ডিজিএম পদোন্নতি পান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে জেলার বাগমারার কানোপাড়া সাজুরিয়া এলাকার মৎস্যচাষি আব্দুল বারিক মন্ডল মামলা দায়ের করেন। বারিক পুঠিয়ার তাহেরপুর এগ্রো লিমিটেডের পরিচালক। এই প্রতিষ্ঠানের নামে ৯৩ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ মঞ্জুর করে আইসিবি। কিন্তু ভুয়া নথিপত্র তৈরি করে ঋণের প্রথম কিস্তির ২৭ লাখ টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন পুঠিয়ার মঙ্গলপাড়া গোবিন্দপাড়া এলাকার মৃত মজিবর রহমানের ছেলে গোলাম মোর্শেদ হক (৩৫)। এই ঘটনায় গোলাম মোর্শেদ হককে সহায়তা করেন আইসিবি ডিজিএম ও রাজশাহী শাখা প্রধান আব্দুল মোত্তালিব এবং প্রধান কার্যালয়ের এজিএম আহম্মদ হোসেন।
পরে এই তিনজনের নামে আব্দুল বারিক মন্ডল দুর্নীতি দমন আইনে রাজশাহীর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। অভিযোগ তদন্ত করে ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দেন দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাশেদুল ইসলাম। অর্থ আত্মসাৎ ছাড়াও কোম্পানির ৬০ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতির বিষয়টিও উঠে আসে তদন্তে।
আদালতের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ১৬ সেপ্টেম্বর জামিন চেয়ে গোলাম মোর্শেদ হক ও আব্দুল মোত্তালিব আদালতে হাজির হন। কিন্তু দীর্ঘ দিন পলাতক থাকায় জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। তবে উচ্চ আদালতে তারা ছয় মাসের অন্তবর্তীকালীন জামিন পেয়ে যান। এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান এই দুজন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শাখা প্রধান আব্দুল মোত্তালিব ১৬ সেপ্টেম্বর অফিসের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বেরিয়ে যান। কারাগারে যাচ্ছেন এটি নিশ্চিত হয়েই তিনি ছুটির আবেদন দেন। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি কর্মস্থল ত্যাগের অনুমতিসহ ১২ দিন অর্জিত ছুটির আবেদন দেন।
তার হাজিরা খাতার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তার স্বাক্ষরের ঘরে লাল কালিতে ‘ইএল‘ লেখা রয়েছে। ছুটির আবেদনের কপিওতেও আব্দুল মোত্তালিব উল্লেখ করেন-পৈতৃক জমিজমা ভাগ-বাটোয়ারা, খাজনা পরিশোধ এবং সীমানা প্রাচীর নির্মাণসহ পারিবারিক কাজে তিনি গ্রামের বাড়ি যাবেন। তবে কারাবন্দি থাকায় ওই সময় তিনি গ্রামের বাড়িতেও যাননি।
এদিকে কারাগার থেকে বেরিয়ে অফিস করছিলেন শাখা ব্যবস্থাপক আব্দুল মোত্তালিব। গত ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি রাজশাহী শাখায় অফিস করেন। কারাবরণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি তার ব্যক্তিগত বিষয়। প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ এ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন। এ বিষয়ে আইসিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কিসমাতুল আহসান সাংবাদিকদের বলেন তিার বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ৪, ২০২২ | সময়: ৭:০৮ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ