বাঘায় কৃষি অফিসারের তদারকিতে বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চলে উৎপাদন হচ্ছে সোনার ফসল

নুরুজ্জামান,বাঘা : রাজশাহীর বাঘা উপজেলার দক্ষিন প্রান্ত দিয়ে বয়ে চলেছে পদ্মা । তার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চল। এক সময় পদ্মা প্রমত্তা থাকলেও এখন তা শুকিয়ে পলি পড়ায় আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। নদীতে চর জেগে ওঠা এসব জমিতে এখন সারা বছর ধরে উৎপাদন করা হচ্ছে নানা প্রকার সবজি সহ-সোনার ফসল। একই ভাবে উৎপাদন হচ্ছে সমতল এলাকায়। যা স্থানীয় চাহিদা পূরনের পাশা-পাশি আমদানি করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ মানুষ তাদের জীবন ও জীবিকার জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। শুধু মানুষ নয়, সমস্ত গবাদি পশুর খাদ্য আসে কৃষি থেকে। জাতীয় আয়ের প্রায় ১৬ ভাগ আসে কৃষি থেকে। দেশের বৃহত্তর শিল্পগুলোও কৃষির উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। ফসল, গবাদি পশু, পোল্ট্রি, মৎস্য ও বনরাজি ইত্যাদি ক্ষেত্র নিয়ে বিস্তৃত বাংলাদেশের কৃষি।

তাঁর মতে, অনেক জায়গায় চাকরি করেছি, তবে বাঘা উপজেলার মত কৃষি উন্নয়নশীল উপজেলা আমার চোখে পড়েনি। তিনি বলেন, রাজশাহীর নয়টি উপজেলার মধ্যে আটটিতে যে পরিমান আম উৎপাদন হয় তার চেয়েও বেশি পরিমান উৎপাদন হয় কেবল বাঘা উপজেলায়। তিনি বলেন, জাতীয় জীবনে সামাজিক পরিবর্তন ও উন্নতির মূলে কৃষি উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই।তিনি বাঘায় কৃষি বিপ্লবে কৃষকদের সরকারি নানা রকম কৃষি প্রনদোনা ও সার বিতরণের পাশা-পাশি কৃষকদের ফসল উৎপাদনে নানা রকম পরামর্শ ও ট্রেনিং দিয়ে থাকেন বলে জানান।

এ অঞ্চলের লোকজন জানান, এক সময় চরাঞ্চলের জমিতে শুধু ধান,গম আর আখ চাষ করা হতো। কিন্তু এখন সেই জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে-আম বাগান, পেয়ারা বাগান, বরই বাগান, কলা বাগান-সহ আলু, বেগুন, করোলা,ফুল কফি, বাধা কফি, মুলা, টমেটো, পেঁয়াজ, রসুন, ঢেঁরস, সিম, লাউ, পটল, মিষ্টি কুমড়াসহ হরেক রকম শাক-সবজি । বিশেষ করে প্রতি শীত মৌসুমে নদী বিধৌত চরাঞ্চলর জুড়ে লক্ষ করা যায় হরেক রকম আগাম সবজি চাষ। যার ব্যাতিক্রম ঘটেনি এবারও। এ অঞ্চলের কৃষকরা বর্তমানে বানিজ্যিক ভাবে নানা প্রকার সবজি চাষাবাদ করে স্থানীয় চাহিদা পুরনের পাশা-পাশি আমদানি করছে ঢাকা-সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

পলাশি ফতেপুরের কৃষক আনোয়ার শিকদার জানান, তিনি ১০ বিঘা জমিতে শীত কালিন শাকসবজি হিসাবে কফি এবং বেগুন চাষ করছেন। এ গুলো আবাদের পুর্বে জমিতে লাঙলের পরিবর্তে বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করা হয়েছে। এর ফলে চাষাবাদের খরচ কমেছে। এ ছাড়া সেচের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে শ্যালো মেশিন। একটি মেশিনে ৩০ থেকে ৩৫ বিঘা জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়া যায়। তিনি জানান, শ্যালোমেশিনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় ডিজেল। কিন্তু ডিজেলের দাম বেশি হওয়ায় সেচ খরচ বেশি পড়ে। তবে চাষের খরচ এবং শ্রমিক কম লাগার কারণে চরের জমিতে উৎপাদন ব্যয় অনেক কম। এর ফলে চাষিরা ফসল চাষ করে লাভবান হন।

অপর দিকে সমতল এলাকা বাউসা ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, চরাঞ্চলে সকল প্রকার সবজি চাষ হয় সত্য। তবে আমাদের ইউনিয়নের কচু দেশ বিখ্যাত। এ অঞ্চলের কচু স্বাদে-গুনে ভরপুর। এ কারনে চাহিদা ও অনেক বেশি। তাঁর মতে , এই উপজেলার কৃষি অফিসার অনেক ভালো মানুষ। তাঁর একান্ত প্রচেষ্টা ও তদারকিতে বর্তমানে এই অঞ্চলে ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে।

অন্যদিকে উপজেলার আড়ানী পৌর সভার সাবেক কাউন্সিলর মোজাম্মেলহক রাজ বলেন, বাঘা কৃষি সমৃদ্ধশালী একটি এলাকা। এ কারনে এখানে হাট বাজারের সংখ্যাও অনেক বেশি। তার মতে, নানা ফসলের মধ্যে হলুদ উৎপাদনের দিক থেকে আড়ানী অত্র অঞ্চলের মধ্যে ব্যাপক পরিচিত সেই বৃটিশ আমল থেকে। এ অঞ্চলে প্রতি হলুদ মোসুমে হলুদ সেদ্দ ও শুকিয়ে দেশের অভ্যান্তরে আমদানির জন্য প্রায় শতাধিক চাতাল বসানো হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এদিকে চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুল আলম জানান, চরাঞ্চলকে দেখলে এখন আর চর মনে হবে না। চারদিকে ফসলের চাষ হচ্ছে। গড়ে উঠেছে বিপুল পরিমাণ আম বাগান। ফলে চরে সবুজের বিপ্লব ঘটছে। বিশেষ করে প্রতি শীত মৌসুমে নানা প্রকার সবজি উৎপাদনে রেকড ভঙ্গ করছে এই ইউনিয়ন।

সার্বিক বিষয়ে বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পাপিয়া সুলতানা বলেন, চরের জমি খুবই উর্বর। এখানে লক্ষ মাত্রার চেয়ে যে কোন ফসল বেশি পরিমান চাষাবাদ হয়। অনুরুপ আবাদ হয়, উপজেলার বাঁকি ছয়টি ইউনিয়ন সহ দু’টি পৌর এলাকায়। তিনি বলেন, আমি অবাক হয়েছি মুঘল আমলে প্রতিষ্ঠিত বাঘার ঐতিহাসিক শাহী মসজিদের টেরা-কোটায় আমের ছবি দেখে। এতে প্রমান করে বাঘা আমের জন্য বিক্ষ্যাত। তাঁর মতে, বাঘা একটি উন্নয়নশীল উপজেলা হওয়ায় এখানে বাঘা এবং আড়ানী হাট সহ দুই পৌর সভার মধ্যে রয়েছে দুটি বিশাল পশুর হাট। সরকার এ সকল হাট থেকে প্রচুর রাজস্ব পেয়ে থাকেন।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৪, ২০২১ | সময়: ৯:৪৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ