সর্বশেষ সংবাদ :

অপ্রতিরোধ্য রোজিনার পাশে রাজশাহী কলেজ

আবু সাঈদ রনি: জন্মের ৮ মাস পূর্বেই মারা যান রোজিনা খাতুনের বাবা হামেদ আলী। মা আলীমন বেওয়া আর দুই ভাই বোন নিয়েই তার সংসার। গত মাসের ১৪ তারিখে ব্রেনস্ট্রোকে মারা গেছেন মা। চার সদস্যের সংসারে অভাব-অনটন ছিল নিত্যদিনের অতিথি। সংসার চালাতে হিমশিম খেলেও রোজিনার পড়াশোনা চালাতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন পরিবারের অন্য সদস্যরা। ফলে নানা প্রতিকূলতার মাঝেও লেখাপড়া থেমে যায় নি শারীরিক প্রতিবন্ধী এই শিক্ষার্থীর।

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বাকশিমুইল ইউনিয়নের পরিজুন পাড়ার বাসিন্দা রোজিনা খাতুন। তিন বছর বয়সেই অপুষ্টিজনিত কারণে পোলিও রোগে আক্রান্ত হন তিনি। পুরোপুরি সুস্থ হওয়া না গেলেও কোনো চিকিৎসা না পাওয়ার প্রধান প্রতিবন্ধকতাই ছিল অভাব। কোনো কিছুতে ভর না দিয়ে দাঁড়ানো সম্ভব হয় না তার। এমতাবস্থায় হুইলচেয়ারই যেন নিত্যসঙ্গী হয়েছে তার।

রোজিনা ২০১০ সালে মোহনপুরের নাকইল আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগ নিয়ে মাধ্যমিক পাশ করেন। পরবর্তীতে ২০১২ সালে পঙ্গু শিশু নিকেতন সমন্বিত অবৈতনিক ডিগ্রী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে অংশ নিয়ে সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হন।

টানাপোড়নের সংসারে বেড়ে ওঠা রোজিনা অব্যাহত রাখেন পড়াশোনা। শিক্ষা জীবন শেষ করে সরকারি চাকরি করে পরিবারের দু:খ ঘোচাবেন এমন স্বপ্ন নিয়ে স্নাতকে ভর্তি হন অদম্য শিক্ষার্থী রোজিনা। তিনি উপজেলার দাউকান্দি ডিগ্রী কলেজে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। চার বছরের কোর্স সম্পন্ন করে রাজশাহী কলেজে স্নাতকোত্তরে ভর্তির আবেদন করেন তিনি।

দেশসেরা বিদ্যাপীঠে ভর্তির সুযোগও পেয়েছেন এই মেধাবী শিক্ষার্থী। তবে অর্থাভাবে ভর্তি সম্পন্ন করতে পারেন নি। ভর্তি সময় শেষ হতে বাকি আছে মাত্র একদিন। টাকা জোগাড় করতে না পারায় রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আব্দুল খালেকের শরনাপন্ন তিনি।

রোজিনা খাতুন বলেন, আমার জন্মের আগেই বাবা মারা গেছেন। কিছুদিন আগে মাও মারা গেলেন। অভাবের সংসারে দিন পার করাই কঠিন। অনেক চেষ্টার পরেও কোনো ব্যবস্থা না হওয়ায় প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে কথা বলি। তিনি সবকিছুর ব্যবস্থা করতে চেয়েছেন।

জানতে চাইলে রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আব্দুল খালেক বলেন, রোজিনা খাতুন শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণা। এত প্রতিবন্ধকতার মাঝেও সে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। সে প্রতিনিয়ত সাথে সংগ্রাম করে চলছে। প্রাথমিকভাবে তার ভর্তি ফি মওকুফ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মাস্টার্স পরীক্ষার ফরম পূরণসহ সকল ফি কলেজ প্রশাসন বহন করবে বলেও জানান তিনি।

অধ্যক্ষ আরও বলেন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সেমিনার ও কলেজ লাইব্রেরী থেকে তার সকল বইয়ের ব্যবস্থা করা হবে। যেহেতু তার ক্লাসে নিয়মিত হওয়া কষ্টসাধ্য তাই সে যেন বাসা থেকেই প্রস্তুতি নিতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি তার যে কোনো সমস্যায় কলেজ প্রশাসন পাশে থাকবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।

এদিকে বুধবার মাস্টার্স ভর্তিও শেষ দিনে তার ভর্তি সম্পন্ন হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্স ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক ও গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মো. শহিদুল আলম। তিনি বলেন, কলেজ প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক রোজিনা আজ (বুধবার) এসেছিলেন। তার ভর্তির সকল কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।

পড়াশোনা শেষ করে কোনো একটা সরকারি চাকরি করতে চান রোজিনা। তিনি বলেন, ছোট থেকেই স্বপ্ন আছে প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করতে চাই। এছাড়াও বিভিন্ন চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশা করি ভালো একটা চাকরি পাবো।

 

 

 

 

সানশাইন/০৯ ডিসেম্বর/রনি


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২১ | সময়: ৬:১৫ অপরাহ্ণ | সুমন শেখ