সর্বশেষ সংবাদ :

বাগমারায় দুই ‘বিদ্রোহী ও এক জেএমবি নেতার হাতে নৌকা

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর বাগমারায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে তিনজনকে নিয়ে নানা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। আর তাদের মধ্যে গতবার নৌকার বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন দুজন। আর একজন হলেন জেএমবি নেতা বাংলা ভাইয়ের সহযোগী।
এই তিনজনের মধ্যে এবার নৌকা পাওয়া হামিরকুৎসা ইউনিয়নে নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন আনোয়ার হোসেন। আর অপরদুজনের মধ্যে এমএফ মাজেদুল যোগীপাড়া ইউনিয়নে নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করে পরাজিত হন এবং গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের জেএমবি নেতা আলমগীর হোসেন এবারও পেয়েছেন নৌকা।
দলীয় সূত্র মতে, বাগমারার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নে এবারও নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন। এবারও জেএমবি নেতার সহযোগী হিসেবে পরিচিত আলমগীরের হাতেই নৌকা তুলে দেয় আওয়ামী লীগ। এই আলমগীরের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, লুটপাট, ভাংচুরসহ অন্তত ৫টি মামলা এখনো বিচারাধীন। এবারও সেই বিতর্কিত নেতার হাতেই নৌকা তুলে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
জানতে চাইলে গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘যিনি নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করতে দাঁড়াতে পারেন, আবার তার হাতেই তুলে দেওয়া হয়েছিল নৌকা। সেই চেয়ারম্যানে এলাকায় অশান্তি ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি। তিনি বাংলা ভাইয়ের সহযোগী ছিলেন। এলাকায় তার বিরুদ্ধে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু তার হাতেই নৌকা উঠেছে আবার। তার এই নৌকা পাওয়ার পেছনে দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। তবে তাকে ছাড়া দল যাকে মনোনয়ন দিবে, আমরা তাঁকেই মেনে নিবো।’
জানতে চাইলে গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষঢ়যন্ত্র করে বেশ কয়েকটি মামলা দেওয়া হয়েছিল। তবে আমি বাংলা ভাইয়ের সঙ্গে ছিলাম না। দলের জন্য কাজ করি বলেই দল আমার প্রতি আস্থা রেখে এবারও নৌক দিয়েছে।’
এদিকে যোগিপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এমএফ মাজেদুল নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করে পরাজিত হলেও এবার তার হাতেও উঠেছে নৌকা। তিনিও এলাকায় নানা কাণ্ডে বিতর্কিত হয়ে আছেন।
জানতে চাইলে এমএফ মাজেদুল বলেন, ‘আমি দলের প্রয়োজনে কাজ করি। দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রতি মূল্যায়ন করে এবার আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আশা করি আমি নির্বাচনে বিজয়ী হবো এবার।’
অপরদিকে, হামিরকুৎসা ইউনিয়নে নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করে গতবার জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন। কিন্তু এবার নিজেই নৌকার মাঝি হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। অথচ গতবার যারা বিদ্রোহী ছিলেন এবার আওয়ামী লীগ থেকে তাদের মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও রসহ্যজনক কারণে হামিরকুৎসায় মনোনয়ন পেয়েছেন সেই বিদ্রোহী প্রার্থীই।
তবে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘জনগণের পাশে থাকি, দলীয় নেতাদের জন্য কাজ করি বলেই গতবার নৌকা না পেয়েও জয়ী হয়েছি। এবার দল মূল্যায়ন করেছে আরও বিপুল ভোটে জয়ী হবো।’
জানতে চাইলে বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকা করে উপজেলা কমিটিতে দিয়েছে। উপজেলা কমিটি সেটা জেলায় দিয়েছে, জেলা কেন্দ্রে পাঠিয়েছে। তালিকায় চার-পাঁচজনের নাম ছিল। কেন্দ্র যাকে পছন্দ করেছে, তাকে মনোনয়ন দিয়েছে। এ বিষয়ে আর কোন কথা নেই।’
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বাগমারা উপজেলা চেয়ারম্যান অনিল কুমার সরকার বলেন, ‘আমি এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারব না। দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছে, তিনিই আমাদের প্রার্থী।’


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২১ | সময়: ৫:১১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ